ইফতিখার জামিল
তরুণ আলেম ও লেখক
ফেসবুকে যেসব বইয়ের গ্রুপ আছে, সেগুলোর পোস্ট ও কমেন্টের দিকে লক্ষ্য করলেই দেখবেন, আমাদের দেশের উঠতি বই পড়ুয়াদের অধিকাংশ অংশ গল্প-উপন্যাস বা থ্রিলারের পাঠক। আধুনিক কবিতারও বেশ পাঠক আছে। এখানেই শেষ নয়। অধিকাংশই কলকাতার লেখকদের ভক্ত। দুইটি বিষয় ভালোভাবেই লক্ষ্যনীয়।
কলকাতার লেখক বলে তাদের বই পড়া যাবেনা, বিষয়টি এমন নয়। আমিও যেহেতু এক সময় প্রচুর কলকাতার বই পড়েছি। তো, আমি কলকাতার সাহিত্যিক ও বাণিজ্যিক ভাবধারা সম্পর্কে ভালোই জানি। কলকাতার লেখকরা একেকজন বড় বড় ভণ্ড। তারা পুঁজিবাদের পাখার নীচে বসে বামপন্থা বিক্রি করেছেন। মুখে মুখে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা করে সাম্রাজ্যবাদী নৈতিকতা ও আচার প্রচার করেছেন।
একই সাথে কেবল ফিকশন নির্ভর পাঠের সমালোচনা হওয়া উচিত। ফিকশন যে কোন কাজে লাগেনা, তা নয়, তবে, ফিকশন নির্ভরতা মানুষের আবেগ ও বুদ্ধি নষ্ট করে দেয়। এটা আমার কথা না, আলী নাদাবির কথা। তাহলে কেমন বই পড়া উচিত?
আমার মনে হয়, দশটা বই পড়লে পাঁচটা অন্তত নন-ফিকশন হওয়া উচিত। নন-ফিকশন বই বলতে, যেসব বই আপনাকে ভালো খারাপ বুঝতে সাহায্য করবে। ধর্মীয় বই। ফিকাহ, কালাম, তাসাউফ। ধর্মীয় বই জরুরী। ধর্মীয় বই ছাড়া আপনার মন ও বুদ্ধিকে সক্রিয় করতে পারবেননা।
অনেক কিছু জানবেন ঠিক, তবে, জানবেন না, কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ । একই সাথে, বাস্তব ইতিহাস, আত্মজীবনী,অর্থনীতি ও রাজনীতির বইও পড়তে হবে। এই বইগুলো আপনাকে বাস্তবিক দৃষ্টিতে পৃথিবী বুঝতে সাহায্য করবে।
অনেকের অভিযোগ বাংলাদেশে নাকি নন-ফিকশন বই খুব একটা পাওয়া যায়না। এই অভিযোগটা ঠিক নয়। প্রচুর নন ফিকশন বই পাওয়া যায়। এখন ইন্টারনেটের যুগে বই পাওয়া খুব একটা কঠিন না। যারা কয়েকটা ভাষা জানেন, তাদের তো আরও সুবিধে। কিন্তু শুধু বই পড়লেই কি হবে?
না হবেনা। তবে, এটা ঠিক যে, যদি আপনি ঠিকঠাক বই পড়েন, তাহলে আপনি অবশ্যই সক্রিয় হয়ে উঠবেন।আমরা যে নানা সমস্যায় আছি, এই নানা সমস্যার মধ্যে আপনি ভালো খারাপ বের করতে পারবেন। পরিবর্তনের তরিকার সম্পর্কেও ধারণা পাবেন।
আমি আমার অভিজ্ঞতা বলি। আমি কীভাবে বই পড়ি। বইয়ের মূল বক্তব্য বুঝার চেষ্টা করি। আলোচ্য বিষয়ের মূল কারণ ও ফলাফল নোট করি। এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি। একমত না হলেও, বইয়ের চিন্তার পক্ষ হয়ে, তর্ক ও প্রশ্ন শুরু করি। এভাবেই বই মৃত কাগজ থেকে আমার ও আমাদের জীবনে ব্যাপকভাবে প্রবেশ করে।
একটা কথা চালু আছে। বই পড়লে নাকি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হয়। অভিযোগটা একদম ভুল নয়। তবে আমাদের এক হুজুর বলতেন, জীবনে চলতে চলতে বই পড়ো। বই পড়তে পড়তে জীবনে চলো। একটার জন্য অন্যটা ছাড়ার দরকার নাই। সাধারণ কথা। নাড়া দিয়েছিল খুব।