আবরার আবদুল্লাহ
বিশেষ প্রতিবেদক
তাবলিগের চলমান সংকট ও বিবাদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে সমঝোতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল রওনা করেছে। প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে ঢাকার শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সমবেত হয়েছেন।
এ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম ও কাকরাইলের মুরব্বিগণ।
আজ সকাল ১০.১৫ মিনিটে তারা দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন এবং দিল্লির নিজামুদ্দিনের মেহমান হবেন।
দিল্লি তাবলিগ মারকাজের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর আপত্তিকর মতামত বিষয়ে সংশয় সন্দেহ এবং জটিলতা দূর করতে দারুল উলুম দেওবন্দের মতামত নেয়া এবং ইজতেমায় ভারতের মুরব্বিদের অংশগ্রহণের বিষয়ে পরিবেশ তৈরির জন্য তারা ভারত যাচ্ছেন।
প্রতিনিধি দলের সদস্য রাজধানীর মুহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজল হক আওয়ার ইসলামকে জানান, বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উলামায়ে কেরাম এবং কাকরাইলের শুরার সমন্বিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুটি বিষয়কে সামনে রেখে আমরা নিজামুদ্দীন যাচ্ছি।
সিদ্ধান্তগুলো হলো, ১. মাওলানা সাদের রুজানামা বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের ষ্পষ্ট মতামত জানা। আমরা নিজামুদ্দীন হয়ে দেওবন্দের শীর্ষ উলামা ও মুরব্বিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো। মাওলানা সাদের বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের মুতমাইন বা সন্তোষজনক কিনা তা সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে নিশ্চিত হবো।
প্রথমটি নিশ্চিত হয়ে দ্বিতীয় কাজটি শুরু হবে। আর সেটি হলো, আগামী জানুয়ারিতে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় দিল্লির শীর্ষ সব মুরব্বিকে উপস্থিত করার চেষ্টা করা। মাওলানা সাদ, মাওলানা আহমদ লাট ও ইবরাহিম দেওলাসহ শীর্ষ মুরব্বিদের অংশ গ্রহণের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করবো।
এদিকে সফরের প্রতিনিধি দলের সদস্য, কাকরাইলের শুরার মুরব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন, দারুল উলুম দেওবন্দের অবস্থান এবং মাওলানা সাদ ও অন্যান্য মুরব্বিকে বিশ্ব ইজতেমায় আসার দাওয়াত নিয়ে আমরা ভারতে যাচ্ছি।
প্রথমে নিজামুদ্দীন পৌঁছে মাওলানা সাদ সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো। দারুল উলুম দেওবন্দে পৌঁছে সেখানকার মতামত লিখিত নেয়ার চেষ্টা করবো এবং প্রতিনিধিরা গুজরাট পৌঁছে মাওলানা আহমদ লাট ও মাওলানা ইবরাহিম দেওলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো।
প্রতিনিধি দলে রয়েছেন, কাকরাইলের শুরার মুরব্বি মাওলানা যুবায়ের আহমদ ও সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুহাদ্দিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, কাকরাইলের কারী মাওলানা যুবায়ের আহমদ ও কাকরাইলের মাওলানা জিয়া বিন কাসেম।
প্রতিনিধি দলের সদস্য ও জামিয়া বারিধারার মুহাদ্দিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দে মাওলানা সাদের রুজুনামা কবুল করেছে কিনা তা জানা আমাদের দায়িত্ব। কবুল না করে থাকলে ইজতেমায় তার আসা হবে না। যদি রুজুনামা কবুল করে থাকে তারপর মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা ইবরাহিম দেওলা ও মাওলানা ইয়াকুবসহ সবাইকে নিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের রুজুনামা ব্যাপারে এতমিনান না হলে, তার ইজতেমায় আসার প্রশ্নই আসে না।
কাকরাইলের শুরার আলেম উপদেষ্টার যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দায়িত্বশীল মহিউস সুন্নাহ মাওলানা মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমাদের ৫ সদস্যের সিদ্ধান্ত আছে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিনিধি দল ভারতে পৌঁছে বিষয়গুলোর ব্যাপারে প্রতিবেদন পেশ করবেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের যাওয়া, প্রতিবেদন পেশ করা ও সামগ্রিক বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসভবনে আলেম উলামা ও কাকরাইলের মুরব্বিদের সমন্বিত বৈঠকে সঙ্কট নিরসনে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।
কিমিটিতে রয়েছেন, মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমির মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান, বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, জামিয়া ইমদাদিয়া ফরিদাবাদের মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মারকাজুদ দাওয়ার আমিনুত তালিম মাওলানা আবদুল মালেক ও জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুুজুল হক।
এ কমিটি গত ১৬ নভেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় আলেম ও কাকরাইলের শুরার সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে। বৈঠকে কাকরাইলের শুরার ৫ জন আলেম উপদেষ্টা মনোনীত করা হয়।
এরা হলেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি ও জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগের মুহাতামিম আল্লামা আশরাফ আলী, মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমির মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের খতিব আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ, বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস ও মিরপুর মারকাযুদ দাওয়া’র আমিনুত তালিম মাওলানা আবদুল মালেক।
উপদেষ্টা কমিটি একাধিকবার বৈঠক করেন এবং চলমান সঙ্কট নিরসনে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।