আওয়ার ইসলাম: বছর পাঁচেক আগে হঠাৎ গান ছেড়ে ধর্ম-কর্মে মনোযোগী হয়েছেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। সাক্ষাৎকারে জানালেন নিজের দিনলিপি।
দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের ক্যারিয়ারে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে, এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’সহ অসংখ্য কালজয়ী গান গেয়েছেন তিনি।
তবে এসব থেকে এখন তিনি একেবারেই দূরে। নিজের কৃতকর্মের জন্য তিনি দুঃখিতও বলে জানা গেছে। তার সাংক্ষাৎকারটি আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।
প্রশ্ন : কেমন আছেন আপনি?
শাহনাজ রহমতুল্লাহ: চলতি বছরের মে মাসের দিকে নামাজের সময় চেয়ার থেকে পড়ে বাম পায়ে আঘাত পেয়েছিলাম। এখন রেস্টে আছি। আগামী বছর ফেব্রুয়ারির দিকে ফাইনাল চেকআপ হবে। ঢাকার অ্যাপোলেতে চিকিৎসা নিয়েছি।
মাঝখানে ব্যাংককের এক হাসপাতালেও ছিলাম কিছুদিন। ওখানেও ট্রিটমেন্ট করিয়েছি। ডাক্তাররা একটু সাবধানে হাঁটা-চলা করতে বলেছেন। বাসায় একটু হাঁটাহাঁটি করি। বাইরে বের হই না।
প্রশ্ন: সহকর্মীরা আপনার খবর নেয়?
শাহনাজ রহমতুল্লাহ: অনেকে দেখতে এসেছিল। শাকিলা (শাকিলা জাফর), ফেরদৌসি রহমান, রুনা লায়লার সঙ্গে দেখা হলো কিছুদিন আগে। আরো অনেকেই এসেছিল ওদের নাম মনে করতে পারছি না।
প্রশ্ন : পাঁচবছর আগে আপনি হঠাৎ গান ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কী কারণে?
শাহনাজ রহমতুল্লাহ: ওমরাহ করে আসার পরদিন থেকেই আর গান করতে ইচ্ছা করেনি। তখন আমি নামাজ পড়া শুরু করেছিলাম। এখন নামাজ পড়েই সময় কাটছে।
প্রশ্ন : গান ছাড়ার পর আপনার দিনগুলি কীভাবে কাটছে?
শাহনাজ রহমতুল্লাহ: ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠি। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ি। তারপর ফজরের নামাজ পড়ি। আমি এখন কুরআন শরিফ পড়া শুরু করেছি। একজন হুজুর বাসায় আসেন। সকালের দিকে উনি আমাকে পড়ান।
বারোটা বাজলেই নামাজের সময় হয়ে যায়। খাওয়া দাওয়ার পর একটু রেস্ট নিতেই আসরের আজান দেয়, নামাজ পড়ি। মাগরিব আর এশা পড়ে আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি। বাইরে কোথাও যাই না এখন আর।
প্রশ্ন : পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় গানের জগতে বিচরণ ছিল আপনার। জায়গাটা মিস করেন?
শাহনাজ রহমতুল্লাহ: পঞ্চাশ বছরের উপরে গেয়েছি আর কতো গাইবো?
প্রশ্ন : এখন যারা গাইছে তাদের গান শোনেন?
শাহনাজ রহমতুল্লাহ: নাহ! আমার কোনো আইডিয়াই নেই। টিভি তো দেখিই না অনেকদিন। একটা জিনিস না দেখলে বলতে পারব না। একদম নামাজ-কালামে ঢুকে পড়েছি। আমার স্বামীও তাবলিগ করেন। হজ করে এসেছেন, নিয়মিত নামাজ পড়ে। আমারও হজে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
প্রশ্ন : কবে হজে যাবেন?
শাহনাজ রহমতুল্লাহ: অনেক আগেই নিয়ত করেছিলাম। কিন্তু ডাক্তাররা বলেছিলেন, বেশিক্ষণ হাঁটা-চলা করা যাবে না। হজে গেলে অনেকক্ষণ হাঁটতে হবে। না হলে হজ করে চলে আসতাম। সুস্থ হলে আমার স্বামী আমাকে হজে নিয়ে যাবে।
প্রশ্ন : বারিধারার বাসায় স্বামীর সঙ্গে থাকছেন আপনি। আপনার সন্তানরা কে কোথায় থাকে?
শাহনাজ রহমতুল্লাহ: আমার ছেলেমেয়ে সবাই বিদেশ থাকে। মেয়ে থাকে লন্ডনে, ছেলে আমেরিকার এক ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করে এখন কানাডায় থাকে।
প্রশ্ন : সন্তানদের সঙ্গে দেশের বাইরে থাকার কোনো পরিকল্পনা আছে?
শাহনাজ রহমতুল্লাহ: বাইরে চলে যেতে চাই না। অনেকবার আমেরিকায় গেছি, বিশবারের মতো শো করতে গেছি। কিন্তু নিজের বাড়িতেই থাকতে চাই। তবে ছেলে যদি বিয়ে করে তাহলে হয়তো কানাডায় যেতে পারি। তবে আপাতত দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই।
প্রশ্ন : পঞ্চাশ বছরের ক্যারিয়ারে আপনার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী?
শাহনাজ রহমতুল্লাহ: শ্রোতাদের ভালোবাসাই জীবনের সেরা প্রাপ্তি। পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। দেশের বাইরে গান করেছি।
সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছে ফটোনিউজ ডটকম।
এইচজে