শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বস্তাবন্দি শিশুর লাশ, পাশে ছিল মুক্তিপণের চিরকুট আইনজীবী আলিফ হত্যায় কাউকে ছাড় নয়: ধর্ম উপদেষ্টা শীতে কাপছে পঞ্চগড়, তাপমাত্রা ১১.৪ ডিগ্রি কাদের মির্জার শ্যালক চট্টগ্রামে গ্রেফতার আয়নাঘরের অভিজ্ঞতা এত ভয়াবহ অনেকেই তা বলতে চায় না: নাহিদ চিন্ময়সহ ১৭ ইসকন সদস্যের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিতের নির্দেশ ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে জুমার পর বায়তুল মোকাররমে হেফাজতের বিক্ষোভ অ্যাডভোকেট আলিফের কবর জিয়ারত ও পরিবারের পাশে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ  প্রাইমারি স্কুলে আলেম ধর্মীয় শিক্ষক বাধ্যতামূলক করতে হবে: মাওলানা ইসলামাবাদী বগুড়ায় ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা

ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ই-বর্জ্য: পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুষ্ঠু আইনি কাঠামো প্রনয়ণ জরুরি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ভয়ানক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ই-বর্জ্য।

বাতিল হওয়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ফটোকপি মেশিন, মাইক্রোওভেন, ব্যাটারী ইত্যাদি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু আইনি কাঠামো জরুরি হয়ে পড়েছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম যৌথভাবে “ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আইনি কাঠামো: পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা” শীর্ষক এক সেমিনারের বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম-এর মহাসচিব খায়রুজ্জামান কামালের সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ।

তিনি তার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বাংলাদেশের পৌর বর্জ্য ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত মানুষ ও তাদের অমানবিক জীবন, জাতীয় অর্থনীতিতে বর্জ্যজীবী, ময়লার ভ্যান কর্মী, সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মী ও রিসাইক্লিং কর্মীদের অবদান, পৌর ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিদ্যমান আইনি কাঠামো এবং পৌর ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভবিষৎ উন্নয়নের জন্য আইনি কাঠামোতে সুনির্দিষ্টভাবে কী কী থাকা প্রয়োজন সে বিষয়সমূহ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন।

সভায় জানানো হয়, ইউনাইটেড নেশনস ইউনিভার্সিটির স্টেপ ইনিশিয়েটিভের তথ্য মতে, ২০১২ সালে বিশ্বে ৪৫.৬ মিলিয়ন টন ই-বর্জ্য সৃষ্টি হয়েছে।  অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই ই-বর্জ্য ২০১৬ সালে সৃষ্টি হবে ৯৩.৫ মিলিয়ন টন।

[caption id="" align="alignnone" width="604"] পরিত্যাক্ত মোবাইল ফোন ই-বর্জ্যের অন্যতম উপাদান[/caption]

বিশ্বে এখন ৩৫৬ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে, ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী ৪০০ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হবে। বিটিআরসি-এর তথ্য মতে বাংলাদেশে ১১.৬৫ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে যার ওজন ১১২৫ টন।

এক হিসেবে দেখা যায় যে ২০১৩ সালে ঢাকাবাসীরা বছরে গড়ে মাথাপিছু ০.২৬ কিলোগ্রাম ই-বর্জ্য তৈরি করছে। আমেরিকা তার  সৃষ্ট ই-বর্জ্যরে শতকরা ৮০ ভাগই দরিদ্র উন্নয়নশীল দেশে ফেলে আসে বা রপ্তানী করে দেয় যেগুলো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকেরা স্বাস্থ্য ও পরিবশেগত ঝূঁকি নিয়ে পুনচক্রায়ন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করে থাকে।

প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের দ্রুত বিকাশ, অতি সস্তায় আকর্ষণীয় ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য ও ইন্টারনেট প্রাপ্তির সুযোগ, নুতন ধরনের পণ্য ব্যবহারের আকর্ষণে দ্রুত পুরোনো ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্যটি ফেলে দেবার প্রবণতা এসব কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ই-বর্জ্য সৃষ্টি দ্রুতহারে বেড়ে চলেছে।

প্রতিবছর বিশ্বে এই ই-বর্জ্য শতকরা ৫-১০% হারে বাড়ছে এবং এই বর্জ্যরে শতকরা ৫ ভাগের বেশী পুনরুদ্ধার করা যায়না। মানুষ ও পরিবেশের জন্য বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণেই এখন আইন করে নিয়ন্ত্রিতভাবে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কেননা, ই-বর্জ্য যে কোন সাধারণ পৌর বর্জ্য থেকে অধিক ক্ষতিকর। সঠিক ও নিরাপদভাবে ই-বর্জ্য না ফেলা হলে তা স্বাস্থ্য  ঝুঁকি তৈরি করে, কারণ ই-বর্জ্যে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ যেমন লেড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, ব্রমিনেটেড ফ্লেম রির্টাডেন্ট, বেরিলিয়াম, এন্টিমনি, পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি), মার্কারী বা পারদ, আর্সেনিক, পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি) ইত্যাদি মাটি, পানি ও বাতাসের সাথে মিশে মানুষের জন্য এক বিষাক্ত পরিবেশের তৈরি করে বিশেষত যারা এগুলো সংগ্রহ ও নাড়াচাড়া ভাঙ্গাচোরা করে।

এই দূষিত পদার্থগুলো মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, রক্ত পরিবহন ব্যবস্থা, কিডনী ও প্রজনন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে থাকে এবং ক্যান্সার, জন্মত্রুটি, প্রতিবন্ধিতা, প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে থাকে। এই পদার্থগুলোর অনেকটাই কার্সিনোজেনিক ও নিউরোটক্সিক। এ থেকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির শিকার হয় দরিদ্র শ্রেণির শিশু ও নারীরা।

এক গবেষণা তথ্যে জানা যায় যে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ যারা ই-বর্জ্য নাড়াচাড়ার সাথে জড়িত তারা এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানে না। তাই সভায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ও পৌর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা চুড়ান্তকরণের দাবি জানান হয়।

এছাড়াও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী উৎপাদকদের দ্বায়িত্বশীল ভূমিকা পালন এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ই-বর্জ্য ও পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সর্ম্পকিত আইন ও বিধিমালার কার্যকর প্রয়োগের কথা উল্লেখ করা হয় ।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির খন্দকার রিয়াজ হোসেন, এ বি কে রেজা, মোসাম্মৎ তাহমিনা আক্তার, ইমতিয়াজ রসুল, সৈয়দ মাহবুবুল আলম, সায়মা সাইদ প্রমুখ।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর