আওয়ার ইসলাম: আগামী ৯ জানুয়ারি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগীয় কর্মী সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল (১৯ ডিসেম্বর) জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসায় দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের এক দীর্ঘ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিভাগীয় কর্মী সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে জমিয়তের সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী আহবায়ক, মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী যুগ্মআহবায়ক এবং মাওলানা নাজমুল হাসানকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রস্তুতি কমিটিও গঠন করা হয়।
এই কমিটিতে ঢাকা বিভাগের জেলা পর্যায়ের প্রতিনিধিসহ দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দকে রাখা হবে।
জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী’র সভাপতিত্বে বৈঠকে শরীক ছিলেন সহসভাপতি মাওলানা জহিরুল হক ভূঁইয়া, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা নাজমুল হাসান, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, অর্থসম্পাদক মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন, ঢাকা মহানগর সহসভাপতি মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী, ফরিদপুর জেলা সভাপতি মাওলানা কামরুজ্জামান
ফরিদপুর জেলা সহসভাপতি হাফেজ কবীর আহমদ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর সেক্রেটারী মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা সেক্রেটারী মাওলানা তৈয়ব আল হোসাইনী, মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি মাওলানা খলীলুর রহমান, সেক্রেটারী মাওলানা বশীরুল ইসলাম, রাজবাড়ী জেলা সভাপতি মাওলানা মাহবুবুর রহমান, শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি মাওলানা আনিসুর রহমান, টাংগাইল জেলা সেক্রেটারী মাওলানা শরীফুল ইসলাম প্রমুখ।
বৈঠকটি সকাল ১১টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়।
বৈঠকে আগামী ৯ জানুয়ারির ঢাকা বিভাগীয় কর্মী সম্মেলন সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ অভিমত ও পরামর্শ প্রদান করেন। পাশাপাশি জমিয়ত সভাপতি আল্লামা আব্দুল মোমিন শায়খে ইমাম বাড়ী ও সংগ্রামী মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী’র নেতৃত্বে জমিয়তের দলীয় কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়েও উপস্থিত নেতৃবৃন্দ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তারা বলেন, জমিয়ত ঐক্যবদ্ধ আছে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকবে ইনশাআল্লাহ। ধর্মীয় ও আদর্শিক চেতনাকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি দেশ, জাতি ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জমিয়ত একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে।
তারা আরো বলেন, আদর্শ ও লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী জমিয়তের নেতাকর্মীদের মধ্যে কর্মচাঞ্চলতা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ব্যাপক হারে নতুন সদস্য জমিয়তে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। জমিয়তের এমন অগ্রগতিতে দেশ ও জাতির দুশমন এবং আলেম সমাজের ঐক্যবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা চালিয়ে থাকতে পারে। জমিয়তের নেতাকর্মীদেরকে এ বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
তারা বলেন, জমিয়ত এগিয়ে যাবে এবং ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হবে, ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, জমিয়তের বর্তমান সফলতার ধারা একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের মহান লক্ষ্যে দলের নেতাকর্মীদের কঠোর আত্মত্যাগ ও সাধনার কারণেই সম্ভব হয়েছে। জমিয়তের বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী সফলতার এই ধারার কৃতিত্ব কারো একার নয়। এই কৃতিত্ব দলের নেতাকর্মীসহ প্রতিটি সদস্যের।
তিনি বলেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দেওবন্দের উসূল তথা আকাবিরদের নীতিমালাকে সামনে রেখেই কাজ করে। জমিয়ত আকাবিরগণের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীন-ইসলাম ও দেশ-জাতির স্বার্থকে সামনে রেখেই কাজ করে থাকে। এই লক্ষ্যে আমাদেরকে সর্বোচ্চ ত্যাগ-সাধনার মাধ্যমে দলের শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় রেখে কাজ করে যেতে হবে। সফলতার মালিক আল্লাহ।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, দলের প্রতিটি নেতা ও কর্মীকে কথা ও কাজের সময় অবশ্যই দলের গঠনতন্ত্র ও নিয়ম অনুসরণ করে কাজ করতে হবে। শৃঙ্খলা মানার মধ্যেই কামিয়াবী। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কেউ কখনো সফল হতে পারে না। তিনি বলেন, দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কোন কিছু যদি আমার মধ্যেও প্রকাশ পায়, আবশ্যই আমিও জবাবদেহী হতে বাধ্য।
তিনি বলেন, দেশে এখন এক চরম ক্রান্তিকাল চলছে। এই সময়ে উলামায়ে কেরামের ঐক্য ও ইসলামী রাজনৈতিক পার্টিগুলোর মধ্যে সমস্যা তৈরি করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র হতে পারে। কারা দলের কল্যাণ ও ঐক্য চান এবং কারা দলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চান, সেটা একটু খেয়াল করলেই সকলে বুঝে যাবেন। দল এক দুই জনের স্বার্থ ও মর্জি মাফিক চালানো যায় না। দল চলবে দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে এবং বৃহৎ পরিসরে দলের লক্ষ্য ও স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে।
এ পর্যায়ে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী দ্বীন ইসলাম ও জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখার সংগ্রামে মরহুম মুহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা ফজলুল হক আমিনী, মাওলানা মুহউদ্দীন খান ও শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক-এর ভূমিকা ও অবদানের কথা স্মরণ করে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে জমিয়তের নীতি-আদর্শ ও গঠনতন্ত্রকে সামনে রেখে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়ে বলেন, নির্বাচনের বেশী দিন বাকী নেই।
সুতরাং এই অল্প সময়ে নেতাকর্মীদেরকে দলের সদস্য ও সমর্থকসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। তিনি আগামী ৯ জানুয়ারী ঢাকা বিভাগীয় কর্মী সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে সকলকে একযোগে কাজ করার তাগিদ দেন।
‘জমিয়ত ভাঙ্গার জন্য আমি দায়ি নই, পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না’