আবরার আবদুল্লাহ
বিশেষ প্রতিবেদক
প্রায় দুই হাজার বছর পর ইসলামি নীতিমালা ও সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মেনে নিতে যাচ্ছে ক্যাথলিক চার্চ। খিস্ট ধর্মের বিধান অনুযায়ী গির্জার পাদ্রীদের কৌমার্য বা বৈরাগ্য গ্রহণকে বাধ্যতামূলক স্তর থেকে স্বেচ্ছাপ্রসূত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ইসলাম তার শুরু দিন থেকেই বৈরাগ্যবাদ পরিহারের কথা বলে আসছে।
অস্ট্রেলিয়ায় খ্রিস্টান যাজক কর্তৃক শিশুদের যৌন হয়রানির অভিযোগ বেড়ে যাওয়াই এ প্রস্তাব দিয়েছে দেশটির সংশ্লিষ্ট কমিশন।
মেলবোর্নের আর্চবিশপ গির্জার এমন ‘লজ্জাকর' অতীতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ কৌমার্য গ্রহণের বিষয়ে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ভ্যাটিকানকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
কমিশন মনে করছে, যাজক হওয়ার জন্য কৌমার্য বা কুমারিত্ব শর্ত হওয়ায় শিশুদের প্রতি যৌন হয়রানি বেড়ে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে সরকার ‘রয়েল কমিশন ইনটু ইন্সটিটিউশনাল রেসপন্সেস টু চাইল্ড সেক্সুয়াল এবিউজ'-কে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেন৷
এরপর পাঁচ বছর ধরে তদন্ত শেষে শুক্রবার ১৭ ভলিউমের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কমিশন৷
৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিশন এই পাঁচ বছরে আট হাজারেরও বেশি ভুক্তভোগীর সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলেছে, ৪২ হাজারের বেশি টেলিফোন কল রিসিভ করেছে, আর চিঠি ও ইমেল পেয়েছে প্রায় ২৬ হাজার৷ এছাড়া কমিশন আড়াই হাজারেরও বেশি বিষয় তদন্ত করতে পুলিশের কাছে পাঠিয়েছে৷ এর মধ্যে ২৩০টি বিষয়ে তদন্ত চলছে৷
১৯৫০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে কাজ করা প্রায় সাত শতাংশ ক্যাথলিক যাজকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ শুনেছে কমিশন৷ কিন্তু কখনই এ সব অভিযোগের তদন্ত করা হয়নি৷ বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুরা এসব অভিযোগ নিয়ে আসলে তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছে৷
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কমিশন ১৭৮টি সুপারিশ করেছে৷ এর মধ্যে একটিতে যাজকদের জন্য কৌমার্য গ্রহণ স্বেচ্ছাপ্রসূত করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ কারণ যাজক হতে বর্তমানে যে শর্ত রয়েছে তা শিশু যৌন হয়রানি অন্যতম কারণ বলে মনে করছে কমিশন৷
স্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সিনিয়র ক্যাথলিক যাজক জর্জ পেলের বিরুদ্ধেও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে৷ তিনি বর্তমানে ভ্যাটিকানের অর্থ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷
পেলের বিরুদ্ধে আগামী মার্চে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে৷ তখন ঠিক করা হবে পেলের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে কিনা৷
উল্লেখ্য, খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মগুরু বা যাজক হওয়ার জন্য কুমারিত্ব বা বৈরাগ্য গ্রহণ আবশ্যক। অন্যদিকে ইসলামে বৈরাগ্যবাদে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। রাসুল সা. বলেছেন, ইসলামে কোনো বৈরাগ্যবাদ নেই।
তথ্য সূত্র : ডয়েচে ভেলে