বশির ইবনে জাফর
বিশেষ প্রতিবেদক
জোনাকি পোকা নিয়ে কতো কবি লিখেছেন শত কবিতা। সন্ধ্যা নামলেই গ্রামাঞ্চলের পথঘাটে বিশেষত ঝোপঝাড়ে মিটমিট করে আলো জ্বেলে উড়ে বেড়ানো এই জোনাকিদের আলোকজ্জ্বল রূপবৈচিত্র দেখে তার প্রেমে পরে না এমন মানুষ নেহাতি কমই আছে। পৃথিবীতে আরো অনেক প্রাণী রয়েছে যারা আলো উৎপন্ন করতে সক্ষম। তবে এর সব গুলোই সামুদ্রিক প্রাণী। কিন্তু স্থলভাগে শুধু জোনাকিরই আছে সেই ক্ষমতা। এই আলো ওরা পায় কোথায়? কীভাবেই বা জ্বলে ওই আলো? আলো মানেই তো তাপ। কিন্তু জোনাকি সেই তাপ সহ্য করে কিভাবে? কিংবা আলো জ্বালাতে গিয়ে জোনাকি জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায় না কেন? ইত্যাদি নানা কৌতুহল থেকে যায় আমাদের মনে। বিজ্ঞান সে কৌতুহলের যথাপোযুক্ত ব্যাখ্যা দিয়েছে।
গবেষনায় প্রমাণিত যে, জোনাকি পোকার দেহের পেছন দিকে অঙ্কীয় তল বরাবর বক্স লাইটের মতো যে জিনিসটি রয়েছে তার ভেতরে লুসিফেরাস ও লুসিফেরিন দুই ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। লুসিফেরাসের কাজ হচ্ছে জোনাকি পোকার খাদ্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আলো ও তাপশক্তি উৎপন্ন করা। লুসিফেরিন উৎপন্ন তাপকে ঠান্ডা করে সেগুলোকেও আলোতে পরিণত করে। এ কারণেই জোনাকি নিজেরা পুড়ে যায় না। আবার উৎপন্ন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটানো কাজটাও করে লুসিফেরিন।
লুসিফেরিন (luciferin) নামক পদার্থটিও মূলত জোনাকির দেহের সঞ্চিত খাদ্য থেকে শক্তি নিয়ে উৎপাদন হয়, যা বাতাসের অক্সিজেনের সাথে মিশে আলো তৈরি করে। এই ঘটনাটিই হচ্ছে জোনাকির আলো জ্বালানোর একমাত্র রহস্য। আমাদের দেশে যেসব জোনাকি পোকা দেখা যায় তারা শুধুমাত্র সবুজ আলোর। কিন্তু অন্যান্য অনেক দেশে লাল আলো বিচ্ছুরণকারী জোনাকি পোকারও দেখা মেলে। ছোটকালে আমরা অনেকেই ভেবে থাকতাম অন্ধকারে পথ দেখার জন্য হয়ত জোনাকি আলো জ্বালে। কিন্তু না।
জোনাকির আলো হচ্ছে তার ভাষা। আমরা যেমন ভাব বিনিময়ের জন্য কথা বলে থাকি। নিজের মনের কথা আরেক জনকে বোঝাতে পারি। বেশির ভাগ কীট-পতঙ্গই মুখ দিয়ে শব্দ তা করতে পারে না। কেউ ডানা ঝাপটে, কেউ পা দিয়ে শব্দ করে ভাবের আদান-প্রদান করে। কিন্তু জোনাকিরা সেটাও পারে না। তাদের ভাব বিনিময়ের একমাত্র মাধ্যম হলো- আলো।
জোনাকির এই আলো সবসময় একটানা জ্বলে না। জ্বলে এবং নেভে । এই অনবরত জ্বলা-নেভার তারতাম্যের উপরই ভাবের আদান প্রদান হয়ে থাকে।
এসএস/