আওয়ার ইসলাম: ফতুল্লার মাদরাসা ছাত্র হাফেজ আবু নাঈম (১৮) হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। পুলিশ আলোচিত এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাট করেছে বলে জানিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হাফেজ আবু নাঈমকে অপহরণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করা হয় তাকে। এর আগে তাকে অপহরণ করতে ফেসবুকে ভুয়া আইডিতে প্রেমের সম্পর্কে তৈরি করা হয়।
দুর্বৃত্তদের টার্গেট ছিল অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের। কিন্তু বিপদ আঁচ করতে পেরে দৌড়ে পালানোর সময় সঙ্ঘবদ্ধ ওই দুর্বৃত্ত চক্র তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
নিহত আবু নাঈম ফতুল্লার আলীগঞ্জ মাদরাসার ছাত্র এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার চরডুমিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী মনসুর আহম্মেদের ছেলে।
ওই হত্যাকাণ্ডে প্রায় ২২ জন বখাটে অংশ নিয়েছে বলে পুলিশ জানান। মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনায় গ্রেফতার সুমন ওরফে রাফা (১৮) নামে এক বখাটে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ন কবিরের আদালত ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যায় ফতুল্লা মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওসি কামাল উদ্দিন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ জালাল, পরিদর্শক (অপারেশন) মজিবুর রহমান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (আইসিপি) গোলাম মোস্তফা।
গ্রেফতারকৃত সুমন ওরফে রাফা (১৮) ঝালকাঠি জেলার নলসিটি থানার কুশাঙ্গন গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে। তারা সপরিবারে ফতুল্লার নন্দলালপুর এলাকার শাহ আলমের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে আসছে।
এছাড়া সুমন ওরফে রাফা রাজধানীর ধুলাইপাড় এলাকার সিটি মডেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সোমবার রাতে রাফাকে নন্দলালপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ওসি কামাল উদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃত সুমন ওরফে রাফাদের ২০/২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা ফেসবুকে তরুণীদের ছবি দিয়ে ভুয়া আইডি খুলে ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেদের বেছে নিয়ে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠায়।
এরপর বন্ধুত্ব হলে ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। এরপর তাদের পছন্দ করা স্থানে আসার জন্য অনুরোধ করে। এরপর তাদের নিয়ে আটক করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে।
দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওই চক্রটি প্রতারণা করে আসছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সুমন ওরফে রাফা পুলিশকে জানিয়েছে।
তিনি আরও জানান, মাদরাসা ছাত্র আবু নাঈমও তাদের খপ্পোরে পড়ে ১৯ নভেম্বর রাতে ফতুল্লার পাগলা নন্দলালপুর এলাকায় যায়।
সেখানে ওই বখাটেদের সঙ্গে তার দেখা হয়। এক পর্যায়ে ভুয়া আইডির সেই সিন্থিয়ার জাহান তোরার সঙ্গে দেখা করানো কথা বলে নিয়ে যায় ওই এলাকার মন্তাজ উদ্দিন রোডে।
সেখানে গিয়ে আবু নাঈম তাদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ছুটে আসার চেষ্টা করলে বখাটেরা তাকে চারপাশ ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে আবু নাঈমের পেটে বখাটেরা ছুরিকাঘাত করে হত্যা শেষে পালিয়ে যায়।
প্রথমে আবু নাঈমের পরিচয় পাওয়া না গেলেও পরে ফেসবুকের ছবি পোস্ট করার পর তার পরিচয় পাওয়া যায়। পরে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বখাটে এই চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
নিহত আবু নাঈমের মা হাফিজা খাতুন জানান, তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের মধ্যে আবু নাঈম সবার বড়। নাঈম কোরআনে হাফেজ। আবু নাঈমকে যারা হত্যা করেছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।