রোকন রাইয়ান
নির্বাহী সম্পাদক
শুদ্ধচিন্তার মানুষ নিজেকে লুকিয়ে রাখেন। দুনিয়ার মোহ তার ভেতর কমই থাকে। তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া রিপন ঠিক এমনই। নিজের কথা নিজের ছবি কোথাও প্রকাশ হোক এমনটা চাননি কখনোই। কিন্তু আমরা যখন বললাম, আপনার এই ঘটনা প্রেরণা হতে পারে হাজারো তরুণের- তখন তিনি মুচকি হাসলেন!
১৯ তারিখ সন্ধ্যায় পল্টন থেকে রওনা দিলাম খিলগাঁওয়ের দিকে। দৈনিক বাংলা মোড় থেকে লেগুনায় খিলগাঁও নেমে টমটমে উঠে গোড়ান ৮ নম্বর। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন বন্ধু ও সহকর্মী এএইচএম ফারুক। একসময় বন্ধুকে নিয়ে চলে এলাম তাজুল ইসলাম রিপনের বাসায়।
ব্যস্ত ঢাকা থেকে একটু বাইরে। সারি সারি দেয়ালহীন একখণ্ড নিরিবিলি এলাকা। তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া রিপনের কারখানার সামনেই একটা ছোট্ট দোকান। চা-বিস্কুট ছাড়া কিছুই নেই। দোকানের বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করছিলাম।
একটু পরই তিনি এলেন। আমাদের দেখে সুন্দর একটা হাসি দিলেন। সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি, লম্বা টুপি আর কালোসাদা রুমালে আবৃত তাজুল ইসলামকে দেখে বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছিল- তাকে দেখলে এক সময় মানুষ আতঙ্কিত হতেন।
আমরা চা খেয়ে চলে এলাম তাজুল ইসলামের কারখরানায়। ভেতরের চেয়ে বাইরের সবুজ ঘাসের মাঠটাই ভালো লাগছিল। সেখানেই বসে পড়লাম। একটা চেয়ার আর একটা বেঞ্চ। মশা প্রচুর থাকলেও খোলা আকাশের নিচে ফুরফুরে হাওয়ায় বেশ জমে ওঠেছিল সময়টা।
তাজুল ইসলাম রিপনের অতীত ইতিহাস জানতে বেশ কিছুদিন ধরেই খোঁজ করছিলাম। তার ঘনিষ্ঠ ও এলাকার লোকদের থেকে আমরা খুঁজে পাই বেশ তথ্য। সব কিছু বলতে না চাইলেও ওই এলাকার মনির হোসেন (ছদ্মনাম) জানালেন অনেক কথা- আমরা বেশ আগে থেকেই তাকে চিনি। এই এলাকায় তিনি দীর্ঘদিন থেকেই বসবাস করছেন। তবে তার দুইটা জীবন আমরা দেখলাম। একটা কঠিন একটা অতি সহজ।
এই কঠিন-সহজ জীবনধারী তাজুল ইসলামের কাছে পুরো ইতিহাসই জানলাম। শুনলাম অতীতের করুণ অন্ধকার আর বর্তমানের স্বাভাবিক আলোকিত জীবনের গল্প।
তার জীবন শুরু হয়েছিল একটা অন্ধকারের মধ্য দিয়ে। যেখানে শুধু পাপ আর অন্যায়ের দখল। আজ আর সেটি নেই। আগাগোড়া পরিবর্তন এসেছে তার মধ্যে। অন্ধকারে এসেছে আলো। আলোকিত হয়েছে আঁধার।
কিন্তু কিভাবে! কিভাবে এই বিশাল পরিবর্তন! কেনই বা পরিবর্তন! সেই হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা শুনুন তার মুখেই-
আমাদের বাপ-দাদাদের বিশাল এক ঐতিহ্য ছিল। ছিল ধার্মিক পরিবেশও। কিন্তু সেই পরিবেশে আমার জীবন চলেনি। ছোট থেকেই প্রচ- রাগী ছিলাম। যাচ্ছেতাই করার মানসিকতাটাও মাথায় চেপে থাকত সব সময়।
সেখান থেকেই মানসিকতায় এক ধরনের কঠোরতা চলে আসে। সারাদিন বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা আর খেলতামাশায় ডুবে থাকতাম। পড়াশোনার দিকে মন ঝুঁকত না কখনোই। পরিবারের শাসন-ধমকিতে কিছুদিন স্কুলে গেলেও এসএসসিটা দেওয়া হয়নি। এর আগেই আমার স্কুল জীবনের পাঠ চুকে যায়।
’৯০-এর কথা, স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী কঠোর আন্দোলন চলছে। আমরা বন্ধুরা মিশে গেলাম সে আন্দোলনে। এক সময় বখাটেপনায় মিশে যাই। এই সেই করে সময় কাটাই। গ্রামের অবস্থা একপর্যায়ে খুবই খারাপ। শেষে দেশ গ্রাম থেকে সরে থাকার মতো সিদ্ধান্ত এবং কিশোর বয়সে আমাকে ভারতে জেল খাটার মতো কঠোর জীবন পার করতে হয়েছে।
এতটুকু বলে থামলেন তাজুল ইসলাম। তারপর জানালেন, ভারত থেকে এসে ঢাকায় এক পোশাক কারখানায় চাকরি দিয়ে আরেক জীবন শুরু। ঢাকায় এসে ওঠলেন খিলগাঁও এলাকাতেই। পরে বনশ্রীতে। এখানেও তৈরি হতে থাকে আগের পরিবেশ। বিস্তার হয় নেটওয়ার্ক। এভাবেই তার জীবন চলছিল। এবার শুনুন তার পরিবর্তনের মূল কাহিনী।
তিনি বলতে শুরু করলেন- জীবনে অনেক পাপ করেছি। ভালো কাজের দিকে খুব কমই হাঁটা হয়েছে। তবে কয়েকটা মর্মান্তিক ও হৃদয়গ্রাহী ঘটনা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আমি ভালোর পথে হাঁটার উৎসাহ পাই।
প্রথম ঘটনা সোনারগাঁও ব্রিজে। ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। ৩টা মোটরসাইকেলে আমরা ৬ বন্ধু। রাস্তায় আরেকটা মোটরসাইকেল আমাদের পাশ কাটিয়ে বেপরোয়া গতিতে সামনে চলে গেল। ঘটনাটা ঘটল তখন।
ওই মোটরসাইকেল বরাবর একটা গাড়ি। কোনোভাবেই সাইট নিতে পারলেন না। চালকসহ মোটরসাইকেলের দুজন পিষ্ট হলেন বাসের নিচে। আমরা দাঁড়ালাম। বাসটা চলে গেছে। এত বড় একটা অ্যাক্সিডেন্ট এই প্রথম দেখা।
দুইটা মানুষ কুরবানির গোস্তের মতোই ভাগ ভাগ হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেই ঘটনার পর অনেক দিন ঘুমাতে পারিনি। মনের মধ্যে কেবলই দাগ কাটতে লাগল। মানুষের জীবন এত ক্ষীণ, এত সামান্য? মৃত্যু মানুষকে এভাবে গ্রাস করতে পারে। আমার জীবনের অর্ধেকটাই এলোমেলো করে দিল।
প্রথম ঘটনার এখানেই সমাপ্তি। এই ঘটনা শুনে আমরাও বাকরুদ্ধ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তার কাছে দ্বিতীয় ঘটনাটি জানতে চাইলাম।
তিনি আবারো বলতে শুরু করলেন- ঘরে বাইরে প্রতিদিনই পাঁচবার আজানের ধ্বনি কানে আসে। তবে এই নিয়ে আমার ভেতর কোনো ভাবাবেগ ছিল না। নিজের কাজের মধ্যেই সব সময় ডুবে ছিলাম। খেয়াল করা হয়নি বাইরের কিছুই।
তবে মুসলমান ঘরের সন্তান হওয়ার কারণে বছরে দুই ঈদ কিংবা শুক্রবারের জুমার নামাজে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু সেটাও ছিল একান্ত নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে। মসজিদের বারান্দায় না হাঁটতে চাইলেও আমার মনটা ছিল নরম।
কেন জানি কল্যাণের পথগুলো আমাকে দূর থেকে স্পর্শ করত। কাছে ডাকত ইশারায়। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার সে আহ্বান যে এত শক্তিশালী আর চুম্বকীয় তা জানতাম না।
সেই শক্তি থেকেই কিনা জানি না- বনশ্রী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রাক্তন ইমাম সাহেবকে খুবই ভালো লাগত। তার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হতো মাঝে মধ্যেই। মনের টানেই চলে আসতাম তার কাছে। কি যেন এক অদৃশ্য আকর্ষণ অনুভব করতাম তার প্রতি। তিনিও আমার সঙ্গে অনেক কথা বলতেন।
একদিনের ঘটনা। তিনি হঠাৎ আমার হাত তার হাতে নিলেন। সেটা এতটাই অভাবনীয় ছিল যে আমি চমকে উঠলাম। তিনি বললেন, আপনার সবকিছুই ভালো লাগে। কিন্তু নামাজ পড়েন না কেন? দুনিয়ার জন্য তো অনেক কিছু করলেন। আখিরাতে যে যেতে হবে তার জন্য কি জোগাড় করলেন? মানুষ তো আর চিরজীবন বেঁচে থাকবে না। দেখেন, এখন থেকে নামাজ পড়ার চেষ্টা করবেন।
তাজুল ইসলামের দ্বিতীয় ঘটনা ছিল এটুকুই। এরপর তিনি কেবল চিন্তা করেছেন। জীবন মৃত্যু আর পরকাল নিয়ে। দুনিয়ায় দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা কিংবা প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জনের কথা। সবকিছুই তাকে এলোমেলো করে রেখেছে অনেক দিন।
একটু থামলে আমরা ব্যতিব্যস্তই হয়ে পড়লাম। এরপর কি হলো? তিনি আবারো শুরু করলেন। তার খোলামেলা প্রকাশের আপত্তির ঘোর কিছুটা কম মনে হলো। আমি যথারীতি আমার নিয়মিত কাজ কর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ব্যবসা, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আড্ডা, সংসার আর মধ্য রাতে ঘুমানোর পর বেলা ১০/১১টায় ঘুম থেকে জেগে ওঠা- এভাবেই চলছিল আমার প্রত্যহিক জীবন।
কিন্তু ইমাম সাহেবের কথা কেন যেন আমাকে ধীরে ধীরে অস্থির করে তুলছিল। এমনই একদিন রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। কিছুক্ষণ পরই মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ শুনি। ফজরে নামাজের জন্য ডাকছেন তিনি। প্রথম দিন আর কিছু মনে নেই। ঘুমিয়ে পড়লাম।
একই ঘটনা দ্বিতীয় দিন হলো। রাতে আমার ঘুম ভেঙে গেলো, মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আজান শুনতে পেলাম। আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। তৃতীয় দিন যখন একই ঘটনার পনরাবৃত্তি হলো আমি আর বিছানায় থাকতে পারছিলাম না।
আমার ভেতরে একটা তোলপাড় সৃষ্টি হলো। হঠাৎ আমার মনে হলো এটাতে আমার কল্যাণ রয়েছে। আমাকে আল্লাহপাক ভালোর দিকে চাইছেন। আমি ওজু করে ফজরের নামাজ আদায় করলাম। তবে তখনো আমি নিয়মিত হইনি। মাঝে মাঝে ভালো লাগলে মসজিদে যাই।
তাহলে কখন থেকে আপনার পূর্ণ পরিবর্তন? আমরা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আবারো বলতে শুরু করলেন- এর পরে কয়েকদিন পরে বছরের থার্টি ফার্স্ট নাইটে একটা কনসার্টের আয়োজন করি। গোড়ান ৮ নম্বর রাস্তার মোড়ে।
সারা রাতের অনুষ্ঠান। সব কিছু ঠিকঠাক মতো গোছানো হয়েছে। এলাকা থেকে প্রচুর ছেলেমেয়ে আসছে অনুষ্ঠানে। সারা রাত নাচ-গান হৈ হুল্লোড় চলবে। সেই অনুষ্ঠান কিছুক্ষণ চলার পর আমার খারাপ লাগতে শুরু করল। সবাই হাসি-ঠাট্টা আর নাচানাচি করলেও আমি ঠিক অন্য রকম হয়ে গেলাম।
অ্যাক্সিডেন্ট, ইমাম আর আজানের ঘটনাগুলো বারবার চোখের সামনে ভাসছিল, মনের পর্দায় নাড়া দিচ্ছে। আমি কনসার্টে বসে থাকলেও আমার মধ্যে চলে অন্য রকম যুদ্ধ।
একপর্যায়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল। আমি মসজিদে চলে এলাম। দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লাম। তওবা করলাম। ভালো হতে চাইলাম। আল্লাহ সহায়তা করলেন। আমার মনটা আগের থেকে নরম হয়ে গেল। কিছু দিন পরই লক্ষ্য করলাম আগের সেই রাগী ভাবটাও আমার ভেতর নেই।
তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া রিপন এখানেই থেমে গেলেন। এরপর আর কিছু বলার থাকে না। কিন্তু আমাদের আরো প্রশ্ন থেকে গেছে। সেগুলোও খুটিয়ে খুটিয়ে জানলাম।
তাজুল ইসলাম ঢাকা প্রথম ওঠেন খিলগাঁওয়ের বনশ্রী এলাকায়। এখনও সেখানেই আছেন। গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজি উপজেলার জগৎপুর গ্রামে। ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। তার অবস্থান আগের মতোই রয়েছে। আগেও মানুষ তাকে সম্মান দেখাতো। এখনো সম্মান করে। তবে দুইটির কারণ ভিন্ন।
সেই ভিন্নতা কেমন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন- একসময় মানুষ আমাকে সম্মান করত। প্রচুর সম্মান করত। তবে সেটা ছিল আসলে ভয়ে। আর এখনও আমাকে সম্মান করে, আমার কাছে এটাকেই মনে হয় প্রকৃত সম্মান।
মোটাদাগে দুইটা পার্থক্য আপনার। দুইটা জীবনের মতো। কোনটার অনুভূতি কেমন? জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, আগে মনে হতো আমিই আমি। এর পরে আর কিছু নেই। এখন মনে হয় আমার চেয়ে নিকৃষ্ট আর কেউ নেই।
স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসার পর অস্বাভাবিক কি চোখে পড়েছে? প্রশ্নে শুনে মুচকি হাসেন। এর পর বলেন, অনেকেই আমাকে ছুঁয়ে দেখেছেন। আমি আসলেই সেই আমি কিনা! এরপর আবারো হাসি... আর চোখে বিস্ময়। স্মৃতির ধাক্কা...
আরো অনেক কিছুই জানলাম তাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার কাছে, তার এই ভালোর জীবন দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। প্রায় ১৫-১৬ জন বন্ধু তার মতো স্বাভাবিক হতে চলেছেন। তার কাছে এটা অনেক বড় পাওয়া বলে জানালেন তিনি।
আরো জানালেন, এখন এলাকার নানা বিচার-আচার, সামাজিক কাজে-কর্মেও ডাক পড়ে তার। তিনি সমাধান করেন অনেক কিছুর। আমাদের আলাপরত অবস্থায় এলাকার তরুণ দুজন ছেলে এলো। একটা অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র নিয়ে। অনুষ্ঠানে আসার দাওয়াত করে দাঁড়িয়ে রইল দুজন।
তিনি মুচকি হেসে কয়েকটা কথা বলে বিদায় দিলেন। স্বাভাবিক জীবনে আসার পর একজনের উপকার করতে গিয়ে তিনি বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন। মামলা-মুকাদ্দমাও হয়েছে তার নামে। তবে এসবকে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবেই নিয়েছেন।
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিজেকে পরিপূর্ণ পরিশুদ্ধ করা। আর সামাজিক কল্যাণের কাজে নিজেকে আরো বিলিয়ে দেয়া। আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া।
তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া রিপনের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার কথা শুনে আমরা উঠলাম। আকাশে তখন অনেক তারা। সবুজ ঘাসের প্রশস্ত মাঠ পেরিয়ে আমরা উঠছি পাকা সড়কে। একটা সুখানুভূতি আর আত্মতৃপ্তি নিয়ে।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সাপ্তাহিক লিখনীতে প্রকাশিত
[প্রিয় পাঠক! আপনার আশেপাশে এরকম বদলে যাওয়া মানুষ/গল্প থাকলে আমাদের জানান, প্রেরণাদায়ী সে গল্পগুলো তুলে ধরবে আওয়ার ইসলাম]
সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহিমের একমাত্র ছেলে মাওলানা!