মুফতি লুৎফর রহমান ফরায়েজী
মুহতামিম ও বিশিষ্ট ওয়ায়েজ
বজাহেরতো এ দুনিয়া খুবসুরত হ্যায়, সুহানী হ্যায়!
বাক্বা ইসকু নেহি হাসিল এ দুনিয়া দারে ফানী হ্যায়!
দাঁড়িয়েছিলাম আমার এক চাচীর কবরপাশে। আজই মারা গেছেন। বাদ মাগরিব। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিক। জঙ্গলার ভিতর গোরস্থানে ছোট ছোট টর্চ লাইটের আলোয় ভৌতিক নীরবতা।
কবরে নামানো হচ্ছে লাশ। অদূরে দাঁড়িয়ে আমরা।
মাটি দিতে এগুলাম। পড়ছি- "মিনহা খালাক্বনাকুম ওয়া ফীহা নুঈদুকুম ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম ত্বারাতান উখরা"। এ থেকেই সৃজিত, এর মাঝেই যাবো ফিরে, উঠবো ফের এখান থেকেই।
জবানে বলছি। ভিতরটা নড়ে উঠল।
আশপাশে তাকালাম। খানিক নির্জনতা প্রয়োজন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে কল্পনায় আঁকছি নিজের পরিণাম।
কত স্বপ্ন। কত আশা। চোখটা বন্ধ হতেই সব শেষ। কতক্ষণ আছি? মোটেও জানা নেই। আমার হাতে নির্মিত
ঘর। আমারই বিছানা। মুহূর্তেই পর হয়ে যাবে। একটা দিনের জন্যও আমাকে নিজের তৈরি ঘরে রাখা হবে না। ঠেলে দেয়া হবে কবরে। মাটির তৈরি কুটির হবে আমার ঘর। প্রচণ্ড শীতেও আমার নসীবে জুটবে পাতলা কাফনের কাপড়। কোথায় লেপ কোথায় তোশক। কোথায় আমার সাধের দামী কম্বলটা।
স্ত্রী সন্তান, বাবা, মা, ভাই বোন, সবার চোখেই অশ্রু। কিন্তু তারা কি আমার অজানা গন্তব্যের সাথী হবে? এই সুনসান নীরব ভয়াল জঙ্গলে আমার পাশে থাকবে? সাপ বিচ্ছুর এ অভয়রাণ্যে আমার সঙ্গী হবে?
না, না, হবে না। হতে পারে না। এ যে সম্ভব নয়।
তাহলে? আমি আসলে বড় একা। আমার যিম্মাদার আমি। আমারী আমি। চারপাশের গজিয়ে উঠা মায়ার জাল শুধুই ধোঁকা।
দিন গড়িয়ে যায়। সন্ধ্যা নামে। পেড়িয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। কতটুকু হায়াত নিয়ে এসেছি জানি না। কতটুকু এগুলাম গন্তব্য মাটির ঘরের দিকে তাও জানা নেই।
কতটুকু পাথেয় সংগ্রহ হল অজানা গন্তব্যের সেই অন্তহীন সফরের জন্য? হিসেবটা কষে দেখা হয়নি।
আমি যে বেখবর!
কবরে লাশ রাখি ভাবলেশহীন, নিজের কবরের নেই খবর!
আল্লাম্মাহসিন আক্বিবাতানা ফিল উমূরী কুল্লিহা। ওয়া আজিরনা মিন খিজয়িদ দুনিয়া ওয়াআজাবিল আখিরাহ। আমীন।