আতাউর রহমান খসরু
বার্তা সম্পাদক
গত ২ নভেম্বর কাতার জাতীয় গ্রন্থাগারের নবজন্ম হলো বলতে হয়। প্রায় ১২ লাখ বইয়ের বিশাল সংগ্রহ নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের ধনাঢ্য দেশ কাতারের জাতীয় গ্রন্থাগার।
নতুন যাত্রায় জাতীয় গ্রন্থাগারকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
কাতার জাতীয় গ্রন্থাগারটি পরিচালিত হয় কাতার শিক্ষা, বিজ্ঞান ও যোগাযোগ উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অধীনে। পারস্য উপসাগর অঞ্চলের প্রথম গণগ্রন্থাগার হিসেবে কাতার জাতীয় গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয় ২৯ ডিসেম্বর ১৯৬২ সালে।
লাইব্রেরির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তা আধুনিকায়নের ঘোষণা দেয়া হয় ২০১২ সালে। ঘোষণা করেন কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মু’জা বিনতে নাসির। তিনি কাতার জাতীয় গ্রন্থাগারকে সর্বাধুনিক ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার হিসেবে গড়ে তোলার প্রতয় ব্যক্ত করেন।
কাতার ফাউন্ডেশন কাতারকে জ্ঞানের নগরী হিসেবে গড়ে তোলার যে মেগা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তারই অংশ হিসেবে জাতীয় গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। কাতার শিক্ষা নগরীতেই গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম সর্বাধুনিক এ লাইব্রেরি।
২০১২ সালেই কাতার ফাউন্ডেশন আধুনিকায়নের জন্য জার্মান লাইব্রেরি বিশেষজ্ঞ ক্লাউডা লাক্সকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
ভেতর থেকে কাতার জাতীয় গ্রন্থাগার
দীর্ঘ ৭ বছর সংস্কার কাজ করার পর গত বৃহস্পতিবার তা উদ্বোধন করা হলো।
নবযাত্রায় কাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে সংযোজিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বিভাগ খোলা হয়েছে। যেমন, শিশু-কিশোর বিভাগ, টিনেজার বিভাগ, নারী বিভাগ ইত্যাদি।
সাথে সাথে লেখালেখি, গবেষণা ও অধ্যয়নের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে পৃথক পৃথক কক্ষের।
সংযোজিত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির সব সুযোগ সুবিধা। এখন একজন পাঠক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সহজেই কোন বইটি কোথায় আছে খুঁজে বের করতে পারবেন। প্রযুক্তি তাকে বই নম্বর ও তা কোন তাকে আছে বলে দেবে।
আরও রয়েছে অটো বুক স্টোরিং সিস্টেম, একাধিক মাল্টিমিডিয়া ওয়াল, সেলফ চেক ও চেকআউট মেশিন। যা পাঠককে বই খুঁজতে সহযোগিতা করে।
কাতারের জাতীয় পরিচয়পত্রধারী বা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি আছে এমন যে কেউ এ গ্রন্থাগারের সদস্য হতে পারবেন।
কাতার জাতীয় জাদুঘরের নির্বাহী পরিচালক ড. সোহাইর এফ ওয়াস্তাবি বলেন, ‘নতুন কাঠামোতে জাতীয় গ্রন্থাগারের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কাতার শিক্ষা ও সংস্কৃতির নতুন মাইলফলক স্পর্ষ করলো। জাতীয় গ্রন্থাগার সব নাগরিকের জন্য শিক্ষা, সহযোগিতা ও উদ্ভাবনের মুক্ত স্থান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন নতুন জাতীয় গ্রন্থাগার শুধু একটি লাইব্রেরি নয়; বরং কাতারের ঐতিহ্য সংরক্ষক। যা কাতারের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।’
কাতার জাতীয় গ্রন্থাগারের রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট (www.qnl.qa)। ওয়েব সাইটে জাতীয় গ্রন্থাগার, তার সেবাসমূহ, গ্রন্থ তালিকা, সদস্য হওয়ার নিয়ম ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে।
দৃষ্টিনন্দন কাতার জাতীয় গ্রন্থাগার ভবনটির ডিজাইন করেছেন ডাচ স্থপতি রিম কুলহাস। ৪৫ হাজার স্কয়ার ফিটের বিশাল স্থাপত্যটি নির্মানে লক্ষ্য রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা, গ্রন্থাগারের ব্যবস্থাপনা ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো।
কাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে প্রাচীনতম একটি সংগ্রহ
কাতারের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে গ্রন্থাগারের মূল ভবনেই স্থাপিত হয়েছে ‘ঐতিহ্য গ্রন্থাগার’। বিশেষ এ গ্রন্থাগারে রয়েছে, প্রাচীন ও দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ও নিদর্শন। যা কাতার ও ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, ঐতিসাহিক মানচিত্র, বিজ্ঞানের উপকরণ, চিত্র ও শিল্পচিত্র।
কাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে শিশু-কিশোরদের জন্য আরবি ও ইংরেজি ভাষার ১ লাখ গ্রন্থ। অন্যান্য ভাষারও গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহও রয়েছে এখানে। বইয়ের পাশাপাশি শিক্ষামূলক বিভিন্ন খেলনা, আর্টস ও শিক্ষা উপকরণ। শিক্ষামূলক নানা সফটওয়ারও রয়েছে শিশুদের জন।
টিনেজারদের (১৩-১৮ বছর বয়সী) জন্য আয়োজনে রয়েছে ৩০ হাজার বই, ম্যাগাজিন, কম্পিউটার ল্যাব, গ্রাফিক নভেল, ডিজিটাল পাঠোপকরণ।
বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য কাতার জাতীয় গ্রন্থাগার পাঠ্য ও সিলেবাসভূক্ত বই, সিলেবাস সহায়ক বিভিন্ন গ্রন্থাবলী, পরীক্ষার নির্দেশনামূলক বই-পুস্তকের ব্যবস্থা রেখেছে।
শিক্ষার্থীরা এখানে গ্রুপ স্ট্যাডি, গ্রুপওয়ার্ক ও এ্যসাইনমেন্ট করার সুযোগ লাভ করবে। কম্পিউটার ল্যাব ব্যবহারের পর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রিন্টও দিতে পারবে তারা।
কাতার জাতীয় গ্রন্থাগারের শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্যও রয়েছে ভিন্ন আয়োজন। তাদের পাঠোপকরণ ও পাঠকক্ষও ভিন্ন।