রওজা রাহী
আওয়ার ইসলাম
হযরত দাউদ অা. এর যুগে একদিন এক সুন্দরী রমনী অত্যাচারিত হয়ে যালিমদের বিরুদ্ধে কাজীর কাছে গিয়ে মোকদ্দমা দায়ের করলো। উক্ত মহিলার অপরুপ রুপ সৌন্দর্যের এমন এক মোহনীয় বৈশিষ্ট ছিল যে , দর্শকমাত্রই তার প্রতি অাকৃষ্ট হতো ।
কাজী তার রুপ সৗন্দর্য দেখে অাসক্ত হয়ে তার সাথে নিজের বিবাহের প্রস্তাব দিল । সে কাজীর প্রস্তাবে অসন্মতি জানিয়ে কাজীকে বললো , এখন অামার বিয়ে করার মত মানষিকতা নেই । এতে কাজী স্বাভাবিকভাবেই মনক্ষুন্ন হলো। সুন্দরী মহিলা বুঝতে পারলো যে , এ কাজীর মাধ্যমে ন্যায্য বিচার অাশা করা নিরর্থক ।
তাই সে অন্য কাজীর দরবারে বিচার প্রার্থী হলো । কিন্ত মহিলার ভাগ্যে এখানেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো । এ কাজীও মহিলার রুপে মুগ্ধ হয়ে গেল । শুথু মুগ্ধই নয় সে প্রথম কাজীর ন্যায় একব্যক্তি মারফত সে মহিলার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল এবং একথাও বলে দিল যে যদি বিয়েতে রাজী না হয়, তবে অন্তত যেন অনুগ্রহ করে কাজীর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে ।
মহিলার কাছে যখন এ প্রস্তাব পৌঁছিল তখন সে বিরক্ত হয়ে তৃতীয় কাজীর দরবারে অভিযোগ পেশ করলো । তৃতীয় কাজী ও পূর্বের কাজীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করলো । তখন মহিলা বাধ্য হয়ে চতুর্থ কাজীর শরনাপন্ন
হলো । বেচারীর ভাগ্যই খারাপ !
চতুর্থ কাজীও পূর্বের কাজীদের মতই মহিলার রুপে মুগ্ধ হয়ে গেল এবং পূর্বের কাজীদের মতই তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিল । তখন মহিলা কাজীদের কাছে বিচারের অাশা সম্পুর্ণরুপে ত্যাগ করে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করলো । মহিলা বিচারের প্রত্যাশা পরিত্যাগ করলেও চারজন কাজী মহিলাকে দেমাগী মনে করে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে গেল ।
একদিন তারা সন্মিলিতভাবে হযরত দাউদ অা. এর দরবারে এ মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলো যে , এ মহিলা ধর্মীয় বিধান অনুসারে কারো সাথে বিয়েতে সন্মত নয় , অথচ সে রাতে কুকুরের সাথে এক বিছানায় শয়ন করে ।
তাদের অভিযোগ শুণে হযরত দাউদ অা. চমকে উঠলেন এবং ঘৃনায় নাসিকা কুন্চিত করে বললেন, তোমরা কি এ ধরনের অপকর্মের সাক্ষী হাজির করতে পারবে ? তারা বললো, চারজন সাক্ষী অাপনার দরবারে অবশ্যই হাযির করবো ।
হযরত দাউদ অা. বললেন, তবে যাও তোমাদের সাক্ষীদেরকে দরবারে উপস্থিত কর । সাক্ষী সকলেই ছিল বেদ্বীন ও অর্থলোভী । তারা কিছু অর্থের লোভে একই সাথে হযরত দাউদ অা. এর দরবারে অাগমন করে একবাক্যে সাক্ষ্য প্রদান করল যে , সত্যই উক্ত মহিলা কুকুরকে নিজ বিছানায় শয়ন করায় ।
সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহনের পর হযরত দাউদ আ. নিজ কর্মচারীদের নির্দেশ দিলেন যে , এ মহিলাকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে ছঙ্গেছার করা হউক । হযরত দাউদ (অাঃ) মহিলার প্রতি এরুপ দন্ডাদেশ প্রদানের পর দরবার থেকে চলে যাওয়ার সময় উপস্থিত জনতার কতক লোক বলাবলি করতে লাগলো যে , সাক্ষীরা অর্থলোভে মহিলার প্রতি মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে তাকে এরুপ বিপদাপন্ন করেছে ।
মূলতঃ মহিলা সম্পুর্ণ নির্দোষ ও নিস্কলঙ্ক । দরবারী কিছু লোকের এসব কথা শুনে সোলায়মান অা. দরবার কক্ষে প্রবেশ করলেন এবং বিষয়টি সম্পর্কে হযরত দাউদ অা. এর কাছে অারজ করলেন ! হে পিতা ! এ মহিলার দন্ডাদেশ স্থগিত রেখে তার বিরুদ্ধে সাক্ষীদের কাছ থেকে পুণরায়
সাক্ষ্য গ্রহন করুন ।
তারপর তার দন্ডাদেশ কার্যকর করুন । হযরত দাউদ অা. পুত্রের অার্জি কবুল করে পুনরায় সাক্ষী চারজনকে তলব করে পুত্রকে বললেন , হে পুত্র ! এবার তুমি এদের সাক্ষ্য গ্রহন কর । দরবারেই তাদের পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহন অনুষ্ঠান শুরু হলো । বাদশা হযরত দাউদ অা. ও সাক্ষ্য গ্রহন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেন ।
প্রথম সাক্ষীকে হাজির করে জিজ্ঞেস করা হলো, তুমি এ মহিলার শয্যায় যে কুকুরটিকে দেখেছ সে কুকুরটি কি রংয়ের ছিল? সে বললো , কালো বর্ণের ছিল। অতঃপর হযরত সুলাইমান অা. এ সাক্ষীকে দরবার কক্ষে অাবদ্ধ রেখে দ্বিতীয় সাক্ষীকে তলব করলেন । সে হাজির হলে তাকেও একই কথা জিজ্ঞেস করা হলো যে , এ মহিলার শয্যায় যে কুকুরটি কে তুমি দেখেছিলে তার গায়ের রং কিরুপ ছিল? দ্বিতীয় সাক্ষী উত্তর দিল , তার গায়ের রং লাল ছিল ।
অতঃপর এ সাক্ষীকেও দরবার কক্ষে অাবদ্ধ করে একে একে তৃতীয় ও চতুর্থ সাক্ষীদের কাছ থকেও অনুরুপ সাক্ষ্য গ্রহন করা হলো । তারা কুকুরটির গায়ের বর্ণ ভিন্ন রকম বললো । এবার দাউদ অা. এর কাছে ঘটনাটি দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার হয়ে গেল য়ে , মহিলার বিরুদ্ধে অানিত অভিযোগ সম্পুর্ণ বানোয়াট।
তখন তিনি পুত্র হযরত সুলাইমা অা এর সাথে একত্র হয়ে এ মহিলার বদলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অানয়নকারী চারজন কাজী এবং সাক্ষী চারজনকেই মাটিতে প্রোথিত করে প্রস্থর নিক্ষেপে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন । এভাবে মহিলাটি অাল্লাহর মেহেরবাণীতে ন্যায়বিচার পেয়ে গেল ।
এ কাহিনী থেকে অামরা জানলাম - ন্যায়বিচার ধ্বংস করে জুলুমকে ( অাল হাদিস)