মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী
যুগ্ম মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
সাবেক সংসদ সদস্য
জমিয়তের জন্য জান কুরবান কোন ভাই এটাকে অন্য নজরে দেখবেন না প্লিজ। অন্তরের আকুতিগুলো প্রকাশ করেছি ব্যক্তি হিসেবে- সিলেটের নাগরিক হিসেবে, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্যই নয়।
আমার বক্তব্য সিলেট নিয়ে- জমিয়ত আর খেলাফত নিয়ে নয়। ইসলামী আন্দোলন সিলেটের সূতিকাগার
সিলেটের উলামায়ে কেরামের এক সময়ের অদ্বিতীয় সিপাহসালার প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান সাহেবের ঘামঝড়ানো ঐতিহ্যের ধারক কাজিরবাজার মাদরাসা।
এই জামিয়াই ছিলো আমাদের মারকাজ। আফসোস আজ! সিলেটরত্ন আল্লামা বাইয়মপুরী রহ. ও ইমামে মাদানী জমিয়তের সাবেক সদর শায়খে কৌড়িয়া রহ. এর দোয়ার ফসল সিলেট বিভাগের আলোচিত নাম প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান।
সিলেটের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সাহসী সার্দুলের ভূমিকা পালন করে 'সিলেটের সিংহ পুরুষ' খ্যাতিটি যিনি আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি আমাদের গর্ব সিলেটের প্রিন্সিপাল। অসুস্থতা সেই মর্দে মুজাহিদের নিত্যসংগী।
যাঁর গর্জনে বাতিল শক্তি ছিল কম্পমান।
যে প্রতিষ্ঠানটি ছিল তার রুহানী শক্তির নিয়ামক- সেই জামেয়া মাদানীয়া এখনো সিলেট শহরের রওনক। কিন্তু কেন জানি হঠাৎ তার যৌবনে ভাটা পড়ে গেলো। এরকম প্রতিষ্ঠান এই ফিতনা ও বদআমলীর জামানায় সিলেটে আরেকটি জামিয়া আর গড়ে উঠবে না হাল-জামানা তাই বলে দিচ্ছে।
তাহলে আমরা কি হতাশার সাগরে বাহন ছাড়াই রওয়ানা হতে চলেছি।
বাতিল একের পর এক আমাদেরে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে- কমজুর ঈমান আমাদের অনুভূতিকে নাড়াতেই পারছে না। তাহলে কি আমাদের ভবিষ্যত অজানা অন্ধকারে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অজানা এক আতঙ্ক দীর্ঘদিন থেকে উঁকি দিচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকায় অঞ্চল ভিত্তিক, জেলা ভিত্তিক প্রিন্সিপাল সাহেবের চেয়েও যোগ্যতা সম্পন্ন আমাদের দিকপাল সে সময়েও ছিলেন। কিন্তু বিভাগীয় শহরে বয়সে জুনিয়র প্রিন্সিপাল সাহেবের ডাকে সবাই একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছেন।
মনমানসিকতাও ছিল অনুকূলে। কারণ একটাই ছিল তিনি আমাদের কওমি ঘরানার উজ্জ্বল নক্ষত্র। জমিয়ত নেতা শায়খে কৌড়িয়া রহ. এর হাতে গড়া সৈনিক সিলেটের প্রিন্সিপাল তার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম বেগবান করতে যে দুই মনীষী বিশেষ করে আল্লামা গহরপুরী রহ. ও খতিবে মিল্লাত শায়খ আব্দুল্লাহ হরিপুরী রহ. এর সাপোর্ট পেয়ে ধন্য হয়েছিলেন- তারা দু' জনই স্ব স্ব ক্ষেত্রে একেকজন ছিলেন যুগের বাইয়মপুরী ও মাদানী।
যেকারণে সিলেটের আবাল বৃদ্ধবণিতার নয়নমনি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের সাহসী রাহবার প্রিন্সিপাল দা. বা.। পরিতাপের বিষয় ২০০১ সাল থেকে কেন জানি আমরা পিছিয়ে গেলাম।
রাজনীতির ভয়াল থাবায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো আমাদের সবকিছু। হিংসা আর পরশ্রীকাতরের কাছে পরাজিত হলো আমাদের বিবেক।
বলতে দ্বিধা নেই, জমিয়তের ব্যানারে বর্তমানে আমরা সিলেটের কিংবদন্তী নেতা আমাদের উসওয়া আল্লামা শায়খ জিয়া উদ্দীন সাহেবের নেতৃত্বে অতীতের চেয়ে বেশি সমর্থন নিয়ে বিশাল শো-ডাউন করছি।
আমি জমিয়তী হিসেবে নয়- যে কেউ বলবে জমিয়ত সিলেট বিভাগে এখন সাংগঠনিক দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী আমাদের অঙ্গনে।
কিন্তু দেখার বিষয় হলো জনগণের কাছে আমাদের এই শক্তি প্রভাব কতটুকু ফেলতে পেরেছে। আমার দৃষ্টিতে প্রিন্সিপাল সাহেবের আগের হুংকারের যে এফেক্ট ছিল বিভাগীয় শহর সিলেটে, এখন তার চেয়ে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী জমিয়তের কর্মসূচি প্রশাসন তথা জনগণের কাছে হিসেবে উঠে না।
আমার দৃষ্টিতে জনগণ আমাদের অনৈক্যকে আমাদের দুর্বলতার মূল পয়েন্ট হিসেবে ধরে নিয়েছে। আর এজন্য এই সমাজ এখন আর আমাদের কাছে আশার আলো দেখে না।
তাহলে জনগণের আস্থা যদি খাঁটি আলেম উলামা থেকে উধাও হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাপত্র আমরাই বিনা ফিতে তুলে দেই- তাহলে আমরা হবো ধিকৃত। আর আলেম উলামা নিজে যদি নিজের ক্বদরদানী করা থেকে মাহরুম হই- তবে গোটা জাতির বারোটা বাজার বাকি রইলো কোথায়।
তাই আসুন আল্লাহর পাঁকড়াও থেকে বাঁচতে বন্ধ করি পরস্পর হানাহানী। আমাদের অস্থিত্ব রক্ষায় আবারো প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান সাহেবের নেতৃত্ব গড়ে উঠুক। নেক হায়াত ও সুস্থ জীবন কামনা করি আমাদের বুজুর্গদের জন্য আল্লাহর দরবারে।
জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার এবং এরকম আন্দোলন সংগ্রামের জন্য উম্মুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো জ্বলে উঠুক গৌরবোজ্জল অতীতের সাহস নিয়ে। আর আমরা পণ করি, পরস্পরে কাঁদাছুড়াছুড়ি করে আমাদের ইজ্জত নষ্ট করবো না সমাজে।
দেরি করা যাবে না এখনই সমাজের নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনতে হবে সমাজে।
জিন্দাবাদ- প্রিন্সিপালে জামেয়া। এগিয়ে চলো- নাজিমে আংগুরা।।
শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা বাজে ০১ মিনিট।
মাওলানা শাহিনুর পাশার ফেসবুক ওয়াল থেকে