কাজী লীনা
আওয়ার ইসলাম
নিজের দেহকে সুস্থ এবং নীরোগ রাখতে কে না চায়। আমরা প্রতিনিয়তই চেষ্টা করি সুস্থ-সুন্দন জীবন যাপনের। আর সুস্থ থাকতে আমরা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাই। ডাক্তারের কাছে যাওয়া, ঔষুধ খাওয়া কিংবা প্রকৃতির মাঝ থেকেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করি দেহকে সুস্থ রাখার মূলমন্ত্র।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, প্রকৃতিতে অনেক কিছুই আছে যা আমাদের দেহকে নীরোগ এবং সুস্থ রাখতে বেশ কার্যকরী। ‘আঙুর’ এবং ’কিসমিস’ এমনই একটি প্রাকৃতিক উপাদান। যা আপনাকে সুস্থ-সবল জীবন যাপনে সহায়তা করবে। আসুন জেনে নেই আঙুর ও কিসমিস এর স্বাস্থ্য গুনাগুন সম্পর্কে।
আঙুরের কতিপয় স্বাস্থ্যগুণ
হাড় সুস্থ রাখে
আঙুর মাইক্রো নিউট্রিইয়েন্টস যেমন, কপার, আয়রন এবং ম্যাংগানিজে ভরপুর একটি ফল যা হাড় সুস্থ এবং মজবুত হওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরী।
কিডনির সমস্যা দূর করে
আঙুরের ইউরিক এসিডের এসিডিটি কমিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এটি আমাদের পরিপাকতন্ত্র থেকে এসিডের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং কিডনির ওপর চাপ কমায়। এছাড়া কিডনির যেকোনো সমস্যা থেকে আমাদের মুক্ত রাখে।
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে
আঙুর রক্তের নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা রক্তনালীর প্রতিবন্ধক দূর করতে সাহায্য করে। এতে করে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা প্রায় ৬০% কমে যায়। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর আঙুর দেহের কলেস্টোরল শুষে নেয়ার ক্ষমতা রাখে।
দৈহিক দুর্বলতা প্রতিরোধ করে
রক্তস্বল্পতা বা রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা আমাদের দেশে খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। রক্তসল্পতার কারণে দুর্বলতা, অল্পতেই হাপিয়ে উঠার প্রবণতা দেখা দেয়। এই সমস্যার সমাধান করে আঙুর। আঙুরের আয়রন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় মিনারেল রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। সুতরাং প্রতিদিন আঙুর খাওয়ার অভ্যাস করুন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত থাকলে দেহে কোনো রোগ বাসা বাধতে পারে না। আঙুরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্লেভানয়েড, মিনারেল, ভিটামিন সি, কে এবং এ। এইসবই আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন নাগুর খাবার অভ্যাস করুন।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা যায় আঙুরের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে। আঙুরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহে ক্যান্সারের কোষ তৈরি হতে বাধা প্রদান করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
অর্গানিক এসিড, চিনি এবং সেলুসাস যা লেক্সাটিভের উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী যা আঙুরের মধ্যে বিদ্যমান। এছাড়াও আঙুরে প্রচুর পরিমাণে ইনস্যলুবেল ফাইবার রয়েছে যা আমাদের পরিপাকনালী পরিষ্কার রাখে। ডাক্তাররা কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীদের নিয়মিত আঙুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কিসমিস এর কতিপয় স্বাস্থ্যগুণ
দুর্বলতা দূর করে
দুর্বলতা দূর করতে কিসমিসের জুড়ি মেলা ভার। কিসমিসে রয়েছে চিনি, গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ, যা তাৎক্ষণিকভাবে দেহে এনার্জি সরবরাহ করে। তাই দুর্বলতার ক্ষেত্রে কিসমিস খুবই উপকারী।
দাঁতের সুরক্ষা
বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস করালে দাঁতের সুরক্ষা হবে। আবার একই স্বাদ পাওয়ার সাথে সাথে বিপুল পরিমাণ উপকারও পাবে। চিনি থাকার পাশাপাশি কিসমিসে রয়েছে ওলিনোলিক অ্যাসিড, যা মুখের ভেতরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে বাঁধা দেয়।
ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে
কিসমিসের মধ্যে রয়েছে পলিফেনলস এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফেমেটরী উপাদান, যা কাঁটা-ছেড়া বা ক্ষত হতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা দূরে রাখে।
ক্যান্সার মুক্ত রাখে
কিসমিসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহে ক্যান্সারের কোষ উৎপন্ন হওয়ায় বাধা প্রদান করে। কিসমিসে আরো রয়েছে ক্যাটেচিন, যা পলিফেনলিক অ্যাসিড। এটি ক্যান্সার মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
রক্তশূন্যতা দূর করে
রক্তশূন্যতার কারণে অবসাদ, শারীরিক দুর্বলতা, বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যতে পারে, এমনকি বিষণ্ণতাও দেখা দিতে পারে। কিশমিশে আছে, প্রচুর পরিমাণে লৌহ উপাদান, যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
আরএম