মুজাহিদুল ইসলাম
১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলফোর ধনাঢ্য ইহুদি নেতা নাথান ফিলিস্তিনি ভূমিতে তাদের একটি জাতীয় বাসস্থান প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন। ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত ও সহানুভূতি প্রকাশক এ চিঠিই বহুল আলোচিত বেলফোর ঘোষণা।
প্রতিশ্রুতির বৈধতা :
১. ১ম বিশ্ব যুদ্ধ ১৯১৪ সালে শুরু হয়ে ১৯১৮ সালে শেষ হয়। এ যুদ্ধে উসমানীয় সম্রাজ্যের বিস্তৃত অঞ্চল দখল করে নেয় ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইতালি। বানরের রুটি ভাগের মতো ভাগ হয় তাদের মাঝে। ব্রিটেনের ভাগে ফিলিস্তিনসহ আরো বিভিন্ন অংশ পড়ে। ফলে উসমানীয় সম্রাজ্য ফিলিস্তিন অংশে তার সার্বভৌমত্ব হারায়।
২. প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক রীতি উপেক্ষা করে পুনর্বাসন ছাড়াই ব্রিটেন একটি জাতিকে ভিটে ছাড়া করে।
ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরাইল প্রতিষ্ঠার নেপথ্য-কারণ :
১. ব্রিটেন অর্থবিত্ত, কলা-কৌশলে অগ্রসর ইহুদি জাতি থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতি ও ক্ষয়রোধে তাদের অর্থায়ন প্রত্যাশা করে। বিশেষত ভালো সামরিক কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
২. পাশ্চাত্যের ইহুদিরা বিভিন্ন বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলো। তারা মধ্যপ্রাচ্যে সম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তা সেখানে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
৩. উদীয়মান জ্বালানি শক্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল নামক ক্যানসার বসিয়ে নিজেদের দাদাগিরি নিশ্চিত করা।
৪. মিশরের সুইস চ্যানেল -যার মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশে অবাধে যোগাযোগ নিশ্চিত করা যায়- এই রুটকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৫. ইরাকে আবিষ্কৃত জ্বালানি ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত হাইফা শহরের মাধ্যমে ব্রিটেনে পাচারের পথ নিশ্চিত করা।
৬. ব্রিটেনের স্বভাবজাত সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রবণতার প্রকাশ।
ফিলিস্তিনিদের জন্য বেলফোর ঘোষণার প্রাপ্তি!
১. ইহুদি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ব্যর্থ বিভিন্ন আরব বিদ্রোহে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।
২. ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক জাতিসংঘের কাছে ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেড (অভিভাবকত্ব) ছেড়ে দিলে ইসরাইলের ইহুদিরা রাষ্ট্র ঘোষণা করে। তারপরের দিনই আরবদের সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়। ফলে সাত লক্ষ ফিলিস্তিনি আরব স্মরণার্থী হয়।
৩. ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে আরব, ইসরাইল তিনটি যুদ্ধ হয় যাতে শোচনীয়ভাবে আরবরা পরাজিত হয়।
৪. বেলফোর দানে একটি স্বাধীন জাতি পৃথিবীর বৃহৎ উন্মুক্ত কারাগারে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
ব্রিটেনের দায়
১. অবৈধ ক্ষমতা চর্চার মানবিক পরিণাম দেখে সভ্য বিশ্বের কাছে বিশেষভাবে ফিলিস্তিনিদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
২. বেলফোর ঘোষণায় উল্লেখিত ‘অ-ইহুদিদের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করা হবে’ এই অংশ বাস্তবায়ন করা এবং ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়া।
৩. জাতিসংঘের ওল্ড ভার্সন লিগ অব নেশনের ট্রাস্ট বোর্ডের নির্দেশনা- স্বার্বভৌমত্বের অধীনে না থাকা দেশগুলোকে সভ্য ও উন্নত জাতির অধীন করা। যাতে তারা তাদের বুদ্ধি-বিবেক, সভ্যতা ও অর্থনৈতিক শক্তি দ্বারা নতুন এই জনপদ গড়ে তুলতে পারে এবং শক্তির বিশ্বে তাদেরকে দাঁড় করাতে পারে- এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ফিলিস্তিনিদের জন্য সর্বাত্মক কাজ করা।
বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের লেজুড়বৃত্তিতে একনিষ্ঠ ব্রিটেনের কোন স্বপ্ন দেখার পরিবর্তে উচিৎ বেলফোর ঘোষণার একশত বৎসর উদযাপনের মানষিকতা ছেড়ে দিয়ে মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো। বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে অপ্রয়োজনীয় ব্রিটেন অতীত স্মৃতিচারণ করে নতুন খোয়াব দেখার চেষ্টা করছে।