মুহাম্মাদ শোয়াইব : মানুষই শুধু চাকরি হারায় না; এবার চাকরি হারিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ (সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি) এর (বোম-স্নিফিং ডগস) বোমা শনাক্তকারী একটি কুকুর! তার নাম লুলু।
ল্যাব্রাডোর জাতের কালো রঙের সে। কাজ গন্ধ শুঁকে বোমা খুঁজে বের করা। এর জন্যই তাকে তৈরি করা হচ্ছিল। চলছিল প্রশিক্ষণ। কিন্তু প্রশিক্ষণে মন ছিল না তার। বেশ উদাসীন ছিল সে। কিন্তু উদাসীন কুকুরকে দিয়ে তো আর গোয়েন্দা সংস্থার কাজ চলে না! তাই সিআইএ পত্রপাঠ করে বিদায় জানিয়ে দিয়েছে লুলুকে।
দ্য টেলিগ্রাফের এক রিপোর্টে জানা যায়, বিস্ফোরক সনাক্তকরণে ব্যর্থতার দায়ে কুকুরটিকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয় সিআইএ। লুলু নামের এই ল্যাব্রাডর কুকুরটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় কুকুরছানা গ্রুপের একজন আশাপ্রদ মহিলা সৈনিক হিসেবে শুরু করেছিল।
সিআইএ এর ভাষ্যমতে, ‘কয়েক সপ্তাহ প্রশিক্ষণে ছিল লুলু। কিন্তু গন্ধ শুঁকে বিস্ফোরক খুঁজে বের করার ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ পাওয়া যায়নি।’
এক বিবৃতিতে সিআইএ বলেছে, ‘প্রশিক্ষণ কালে কুকুরটি খারাপ দিন অতিক্রম করার অনেক কারণ থাকতে পারে। কারণ প্রশিক্ষক কুকুরের ব্যর্থতার কারণ বের করার জন্য একজন মনোবৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেন।’
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, মানুষের যেমন ভালো দিন-খারাপ দিন আছে, তেমনি কুকুরেরও ভালো দিন-খারাপ দিন আছে। কিন্তু লুলু বোমার গন্ধ শোঁকার বিষয়টির মধ্যেই ঢুকতে চায়নি। এমনকি খাবার বা খেলার মাধ্যমেও তাকে আকর্ষণ করা যায়নি।
সিআইএ বিবৃতিতে বলেছে, স্পষ্টতই সে বিষয়টি উপভোগ করছিল না। তাই চাকরি থেকে তাকে বিদায় দেয়া হয়েছে।
প্রশিক্ষণকালে কুকুর কখনও কখনও উদাসিনতা অনুভব করে। আবার কখনও তাদের খেলার সময়ের দরকার হয়। দরকার হয় অতিরিক্তি চ্যালেঞ্জের। আবার কখনও তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। কখনও অসুস্থতা অনুভব করে। আর তখন খাদ্যে কিছুটা ভিন্নতা আনার দরকার হয়।
এভাবে কয়েক দিন যাওয়ার পর প্রশিক্ষক তাকে সামনের যে কোনো বাধা অতিক্রম করতে শেখায়। আর তখন থেকে কুকুর আগ্রহের সঙ্গে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।
কিন্তু লুলুর বেলায় তার আগ্রহের অভাবের কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। তাই সিআইএ তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সিআইএ বলছে, লুলুর মতো কিছু কুকুর আছে, যাদের সমস্যা সাময়িক নয়। মূলত এটি তাদের কাজ নয়। তারা বিস্ফোরক সন্ধানে আগ্রহী নয়। এ জাতীয় কুকুরগুলোকে খাদ্য বা খেলনা দ্বারা উদ্দীপ্ত করলেও তারা তা উপভোগ করে না।
তবে চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেও লুলুর সৌভাগ্য যে, প্রশিক্ষক তাকে দত্তক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে এখন হ্যারি নামের একটি ল্যাব্রাডর কুকুর পরিবারের সঙ্গে বাস করছে।
লুলু এখন প্রশিক্ষকের ছেলে-মেয়ে, বাগানের খরগোশ ও কাঠবিড়ালির সঙ্গে খেলেধুলে সময় কাটাচ্ছে।
সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ ও হাফপোস্ট