সাজিদ নুর সুমন
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আট ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, এমন কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই।
কিন্তু শুক্রবার সকালে পরীক্ষা শেষে মিলিয়ে দেখা গেছে যে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রেই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটের অধীনে প্রথম বর্ষ (স্নাতক) সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছে বেলা ১০টা ৪৮ মিনিটে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে উল্লেখ করে একজন বাংলা অংশের প্রশ্নপত্র পাঠান। ওই শিক্ষক অনুষ্ঠিত পরীক্ষার বাংলা প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পাঠানো প্রশ্নের হুবহু মিল পান। ক্ষোভের স্বরে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বের জায়গা ছিলো ভর্তি পরীক্ষা। সেটাও শেষ হয়ে গেল।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নের সমাধান দানকারী চক্রের দুইজন মাস্টারমাইন্ড ও এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত দুইজন ২ থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে একটি বিশেষ কমিউনিকেশনস ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নের সমাধান দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
শুক্রবার পরীক্ষা চলাকালীন ঢাবি প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের গ্রেফতার করে সিআইডি। অভিযানে ঢাবির একুশে হল থেকে আবদুল্লাহ আল মামুন এবং শহিদুল্লাহ হল থেকে মহিউদ্দিন রানাকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মামুন ঢাবির ফলিত রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আর রানা ঢাবিতে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছেন।
সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-মিডিয়া) শারমিন জাহান জানান, শিক্ষার্থীরা আধুনিক ও অতি ক্ষুদ্র একটি কমিউনিকেশনস ডিভাইস (মাস্টার কার্ড সদৃশ) ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রশ্নের উত্তর বলে দিত।
শিক্ষার্থীরা মাস্টার কার্ড সদৃশ ওই ডিভাইস মানিব্যাগে রেখে কানে হেডফোন দিয়ে এপারের সঙ্গে যোগাযোগ করত। পরীক্ষার্থীরা প্রশ্ন পেয়ে সেট নম্বর বললেই ওপার থেকে উত্তর বলে দিত আটককৃতরা।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রের সদস্যরা অভিনব এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ঢাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ (জাবি) অন্যান্য ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করে টাকা হাতিয়ে নিত।
এ তিনজন ছাড়াও জালিয়াতি ও অসদুপায় অবলম্বনের কারণে আরও ১২ পরীক্ষার্থীকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেয়া হয়। এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসেরও অভিযোগ উঠেছে এ বছর
এবার ঢাবি ক্যাম্পাসে ৫৩টি ও ক্যাম্পাসের বাইরে রাজধানীর ৩৩টি স্কুল-কলেজসহ মোট ৮৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৬১০টি (বিজ্ঞানে-১১৪৭টি, বিজনেস স্টাডিজে- ৪১০, মানবিকে- ৫৩টি) আসনের জন্য ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর সংখ্যা ৯৮ হাজার ৫৪ জন।
আরএম