এম ওমর ফারুক আজাদ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
ফটিকছড়িতে ক্লাস ফাঁকি দেয়ার অপরাধে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ পুঁড়িয়ে দিয়েছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল বুধবার উপজেলার পাইন্দং উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিদিনের মতোই সকাল দশটায় ক্লাস শুরু হয়। বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী তৃতীয় ঘন্টা পর্যন্ত পাঠদান গ্রহণ করে। চতুর্থ ঘন্টায় শ্রেণি শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস না করে বেরিয়ে পরে।
দায়িত্বরত শ্রেণি শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ দাশ ক্লাস নিতে এলে শিক্ষর্থীদের অনুপস্থিতি দেখে রেগে যান।
এ সময় তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে শ্রেণি কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে বেঞ্চে রাখা শিক্ষার্থীদের ব্যাগ আগুনে পুড়িয়ে দেন। এতে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র রায়হান, নাঈম, নুরুল ইসলাম বাবু, সোলেমানসহ একাধিক ছাত্রের ব্যাগ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
অপরদিকে, শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি দেয়ার অপরাধে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ব্যাগ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাকে নিন্দার চোখে দেখছেন সচেতন মহল। ক্ষুদ্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন নোংরা ও ন্যাক্কার জনক ঘটনার জন্য প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবী জানিয়েছেন অনেকে।
বিদ্যালয়ের ১৯৯৫ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. মহসীন বলেন, 'ক্লাস ফাঁকি দেয়ার মতো শিশুতোষ অপরাধের জন্য প্রধান শিক্ষক কোনভাবেই শিক্ষার্থীদের ব্যাগ পোড়াতে পারেন না। প্রয়োজনে অভিভাবকদের ডেকে এনে বুঝানো যেতো। এটা নি:সন্দেহে একজন দায়িত্বশীল প্রতিষ্টান প্রধানের অজ্ঞানতার পরিচয় বহন করে।'
১৯৯৭ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী নাছির উদ্দিন খান ও শিক্ষানুরাগী ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, 'যেসব শিক্ষার্থী ক্লাস ফাঁকি দিয়েছে, তাদের পরের দিন বুঝানো যেতো, অভিভাবকদের জানানো যেতো। কিন্তু এটা না করে প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ব্যাগ পুঁড়িয়ে দিয়েছেন। গরীবের টাকায় কেনা এসব ব্যাগ পুঁড়িয়ে দেয়ার অধিকার প্রধান শিক্ষককে কে দিলো?
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শোয়াইব ও ফাহাদ বলেন, 'ক্লাস ফাঁকি দেয়ার অপরাধে প্রধান শিক্ষক শিক্ষর্থীদের ব্যাগ পুড়াতে পারেন না। অাবার নতুন ব্যাগ কেনার টাকা যোগাড় করতে অনেক হতদরিদ্র অভিভাবককে হিমশিম খেতে হবে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।'
এ ব্যাপারে পাইন্দং ইউ.পি চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, 'ছোট একটি অপরাধের জন্য প্রধান শিক্ষক এতো বড়ো শাস্তি দিতে পারেন না। এ ঘটনা ঘটিয়ে তিনি অবশ্যই অন্যায় করেছেন। ইতোপূর্বে তিনি এমন অনেক অন্যায় কাজ করেছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর সাথে সাথে তার অপসারণ দাবী করছি।'
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ দাশের বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোন নাম্বারে বার বার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।