শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


শীতকে সামনে রেখে কেমন আছেন সিরিয়ার শরণার্থীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আহমাদ আস সুরানী
সিরীয় সাংবাদিক

খাদ্য, বাসস্থান, শীতবস্ত্র ও ওষুধের প্রচণ্ড অভাবে অত্যন্ত মানবেতর দিনযাপন করছে আলেপ্পোর উত্তারঞ্চলীয় গ্রামের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দারা। বিশেষ করে ঠাণ্ডাজনিত রোগে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা আক্রান্ত হলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী শরণার্থীরা।

শীত যত আসছে তাদের জীবন ততই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, বৃষ্টিপাতের তীব্রতা ও তুষার থেকে আত্মরক্ষার কিছুই নেই তাদের কাছে।

সাত বছরব্যাপী গণবিধ্বংসী যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচার জন্য বর্তমানে ৫০ লাখের বেশি মানুষ পালিয়ে অন্যান্য দেশে শরণার্থী হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)।

সিরিয়া-তুর্কি সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত উত্তর আলেপ্পোর ইজাজ এলাকায় গড়ে উঠেছে এলোপাতারি অনেক ক্যাম্প। ক্যাম্পগুলির বেশ কয়েকটি ঘুরে দেখলাম। জীবন ধারণের অপররিহার্য খাদ্য-পোশাকের প্রচণ্ড অভাব। শীত ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার আগমনে সবার চেহারায় পরিলক্ষিত হচ্ছে ভীতির ছাপ। সত্যিই এক বিপর্যস্ত জনপদ।

এসব এলাকায় যেসব শরণার্থী আছেন তাঁদের চিকিৎসা, আইনগত সেবাসহ অন্যান্য সেবা দিতো বিভিন্ন এনজিও৷ এতদিন তারা বিদেশী বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার কাছ থেকে তহবিল পেতো৷ কিন্তু সেসব তহবিল ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে৷ তাই অনেক এনজিও ইতিমধ্যে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বা দেয়ার পরিকল্পনা করছে৷ ফলে শরণার্থীদের জীবন আরও কঠোর হয়ে উঠছে৷

এই এলাকায় সবচেয়ে বড় ও প্রসিদ্ধ ক্যাম্প হলো ‘শামারেখ আন নিজামী’ ক্যাম্প। এর পরিচালক মুহাম্মাদ দুরজ। তার সঙ্গে কথা হয় আমাদের। তিনি বলেন, আলেপ্পোর উত্তরাঞ্চলীয় ‘দারা আল ফুরাত’ এলাকায় ক্যাম্পের সংখ্যা আট হাজার।

এতে রয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মানুষ। এই এলাকায় বিভিন্ন মানবিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কিছু ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। এগুলোর অবস্থা এলোপাতারি ক্যাম্পের তুলনায় ভালো। এখানে প্রতি মাসে খাদ্য রেশন আসে।

ইনফ্রাস্ট্রাকচার সেবা, যেমন প্রশস্ত রাস্তা, স্বাস্থ্যগত প্রতিষ্ঠান, পানি নিস্কাষণের ব্যবস্থা ও ময়লা-আবর্জন সরিয়ে ফেলার সুব্যবস্থা আছে। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ক্যাম্পগুলোতে এ জাতীয় সেবা অনুপস্থিত হওয়ায় তাদের দুর্ভোগ অনেক বেশি।

৬০ হাজার মানুষ  বসবাস করছে অপরিকল্পিত এই শিবিরগুলোতে। এই শিবিরগুলোতে প্রতিদিন শুধু পানি ও রুটি সরবরাহ করা হয়। তার পরিমাণও খুবই কম। বসবাসকারীদের জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। বিশেষত যাদের পরিবার বড় তাদের জন্য এক মহাবিপদ।

দক্ষিণ আলেপ্পো থেকে আগত আবু ইবরাহীম একজন শরনার্থী। তিনি ও তার তিন সন্তানসহ শামারেখ ক্যাম্পের নিকটে একটি অপরিকল্পিত ক্যাম্পে থাকেন। তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের জন্য প্রতিদিন ১৮-২০ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। একজন ব্যক্তির জন্য একটি বা দেড়টি রুটি দেয়া হয়। প্রায় চার মাস যাবত আমরা তৃপ্তিসহ এক বেলা খাবার খেতে পারিনি।

উম্মে সালমান দশ সন্তানের মা। আছেন একটি ক্যাম্পে। তার সঙ্গে কথা হয় আমাদের। তিনি বলেন, আমার ছেলে হেমিপ্লেজিয়ায় আক্রান্ত। প্রচণ্ড গরম বা শীতে আমার ছেলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমাদের ক্যাম্পে শীত মোকাবেলার জন্য কোনো প্রস্তুতি নেই।আমরা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি। আমার স্বামী বেকার। আমাদের কাছে অসহায় সন্তানদের খানা খাওয়ানোর জন্য কোনো টাকা পয়সা নেই।

আরেকটি ক্যাম্পে আমাদের সঙ্গে দেখা হয় আবুল আলার সঙ্গে। তিনি চল্লিশ ঘর বিশিষ্ট একটি ক্যাম্প পরিচালনা করছেন।

তিনি বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে তাবু স্থাপন করার জন্য একখানা ভূমি ভাড়া নিয়েছি। এখানে প্রতিটি পরিবারের জন্য দৈনিক এক টুকরা রুটি দেয়া হয়। সঙ্গে অন্য কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না।শীত কালের আগমন একদম নিকটে হওয়া সত্ত্বেও আমাদের মানবিক পরিস্থিতি উন্নতির জন্য কোনো সাহায্য নেই।

দেখা হয় একজন অতি বৃদ্ধা নারীর সঙ্গে। তার নাম বুসহা আল ইসা। তিনি বলেন, আমার অবস্থা খুবই সূচনীয়। আমার স্বামী-সন্তান কেউ নেই। আমার পা ভাঙ্গা। নড়াচড়া করতে পারি না। আমাদের ক্যাম্পে শীতকে কেন্দ্র করে কোনো প্রস্তুতি নেই। আমাদের আসলে অন্য একটি ক্যাম্প দরকার। যেখানে শীত মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ বিদ্যমান থাকবে।

হাটতে হাটতে শরণার্থীদের জন্য তৈরি করা একটি গোসলখানায় শ্যাম্পু আর পানির বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়৷ পরিচ্ছন্ন গোসলখানার অভাবে শরণার্থীদের অন্য ব্যবস্থা করতে হচ্ছে৷ অনেক শরণার্থী মনে করছেন, তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার জন্য ইচ্ছে করেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে৷

জাতিসংঘ বলছে সিরিয়ার যুদ্ধে সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হয়েছে শিশুদের।শুধু মানবিক ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল কয়েক মিলিয়ন সিরীয় শিশু।

সূত্র : নুন পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন মুহাম্মাদ শোয়াইব

 

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ