এম ওমর ফারুক আজাদ
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত হলে জমা উঠে মাদকের ছড়াছড়ি। এ নিয়ে অস্বস্থিতে ভোগছে স্বাধারণ ও মননশীল শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে কথা হঢ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এএফ রহমান হলের শিক্ষার্থী ফাহিমের সাথে। মাদক নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাগুলো এমনভাবেই বললেন তিনি।
তিনি বলেন, শুধু এএফ রহমান হল নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবকটি হল থেকে সন্ধ্যার পর মাদকের উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যে গাঁজার তীব্র গন্ধে পড়ার টেবিলে বসতে পারে না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে ফেনসিডিলি, বাংলা মদ ও হেরোইনের গন্ধও আসে।
ফাহিমের মতো শাহ আমানত হলের শিক্ষার্থী বাবর বলেন, মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসের রুমগুলোতে বসে মাদক সেবন করে। ফলে এসব কক্ষের পাশ দিয়ে হাঁটলে বিশ্রী গন্ধে পেটে পাক দিয়ে ওঠে। বাধ্য হয়ে তীব্র গরমের মধ্যেও দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হয়। ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা এলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি।
তিনি বলেন, ‘আমার পাশের রুমে প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন চলে মাদকের আড্ডা। অনেক সময় রুমে আরো বন্ধু-বান্ধব এনে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের মাদক গ্রহণের আসর। যার ফলে অনেক সময় গাঁজার গন্ধে আমাদের পড়াশোনার বিঘ্ন ঘটে।
শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই চবির আলাওল হল, এএফ রহমান, সোরওায়ার্দী, আব্দুর রব, শাহ জালাল, আমানতসহ ছাত্রদের হলগুলোতে মাদক সেবনকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আবাসিক হলগুলোর বিভিন্ন কক্ষে বসানো হচ্ছে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের মত মরণ নেশার আসর। বিভিন্ন উৎসবে ছাত্র হলগুলোতে চলে মদ পান।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাদকাসক্তরা আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্জন স্থানসমুহ যেমন রেলস্টেশন, আইন অনুষদ ক্যান্টিন, চবি কলেজের পেছনের অংশ, সোহাওয়ার্দী হলের পেছনের লাল পাহাড়, জাদুঘরের সামনে, কলা অনুষদ ঝুঁপড়ির পাশের পুকুর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পশ্চিমে, শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের সামনের বেশ কয়েকটি কটেজে মাদক সেবন করলেও এখন একেবারে হলের কক্ষে মাদকের আসর জমাচ্ছে।
ফলে কিছু কিছু মাদকাসক্তদের দ্বারা অনেক শিক্ষার্থী এই মরণ নেশায় পা বাড়াচ্ছে।
এ নিয়ে কেউ কিছু বললেই নেমে আসে অত্যাচারের খড়গ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিযোগ করেও কোনো ফল হয়নি; উল্টো রুম ছেড়ে যাওয়ার হুমকি আসে। কারণ মাদকাসক্তরা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্টার ড. কামরুল হুদা বলেন, বেশ কিছুদিন আগেই মাদকের বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়। মাদক ঠেকাতে বিভিন্ন সময় বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রায় সময়ে হলগুলোতে চালানো হয় অভিযান।
তিনি জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর আবদুর রব হলে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান গাজাঁ জব্দ করা হয়। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর এএফ রহমান হলে গাঁজা সেবন করার সময় হাতেনাতে আটক করা হয় তিন শিক্ষার্থীকে। তারপরও কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে হলগুলোতে অবাধে চলছে মাদক সেবন।
কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম সাথে। তিনি বলেন, প্রশাসনের একার পক্ষে ক্যাম্পাসে মাদক সেবন বন্ধ করা সম্ভব নয়। থাকতে হবে ছাত্র সচেতনতা। বিশেষ করে ছাত্র সংগঠনগুলোকে মাদকের মত মরণ নেশার ছোবল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রামের এক ভণ্ডবাবা’র কাণ্ড