আওয়ার ইসলাম : আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দাবি হলো প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করালে ৯০ ভাগ স্তন ক্যান্সার রোগীর নিরাময় সম্ভব। অথচ বাংলাদেশের ৭০ ভাগ স্তন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত নারী বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।
দেশে প্রতিবছর নতুন করে ২২ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ লোকলজ্জার ভয়ে তারা চিকিৎসা নিতে আগ্রহী নয়।
‘স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস ২০১৭’ উপলক্ষে গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ সব তথ্য জানান।
‘স্তন ক্যান্সারে হোন সচেতন, স্ক্রিনিং করুন নিয়ম মতন’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে আনোয়ার খান মর্ডান মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালের সার্জারি, প্যাথলজি, গাইনি বিভাগের সহযোগিতায় অনকোলজি বিভাগ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আনোয়ার খান মর্ডান মেডিক্যাল কলেজের অনকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইহেতাসামুল হক।
বক্তারা বলেন, কেবলমাত্র সচেতনতার অভাবেই দেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা বাড়ছে। যখন স্তনে ক্যান্সার শনাক্ত হচ্ছে তখন আর রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার সময় থাকছে না। অথচ নিজে সচেতন হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে এ রোগ ৯০ শতাংশ নিরাময় করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্ত করার সময় হচ্ছে, মেয়েদের মাসিকের পরের সাতদিন নিজে নিজেই স্তনে কোনো চাকা আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে। আর প্রথম অবস্থায় এ রোগ শনাক্ত হলে অল্প চিকিৎসায় বা ছোট অস্ত্রোপচারে রোগী সুস্থ হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে স্তন পুরো ফেলে দিতে হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্তন ক্যান্সারের বিভিন্ন ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং রোগী শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া আরো বেগবান করতে কমিউনিটি ক্লিনিককে সম্পৃক্তকরণ এবং রাষ্ট্রীয় নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন।
স্তন সমস্যায় যে কোনো বয়সের নারী আক্রান্ত হতে পারেন। তবে অনেকে তা অসচেতনতা বা লোকলজ্জার কারণে প্রকাশ না করে, চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে চেপে রাখলে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। এসব কারণে দিন দিন আক্রান্ত নারীর সংখ্যা বাড়ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের ৮৯ শতাংশই বিবাহিত। যাদের গড় বয়স ৪১ বছর।
স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানটি হাসপাতালের বহির্বিভাগে বিনামূল্যে স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম করছে।
গতকাল থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলবে ১২ তারিখ পর্যন্ত। এ ছাড়া সাভারের একটি কারখানার নারী শ্রমিকদের মাঝে এবং সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে সিটি কর্পোরেশনের পাঁচ হাজার নারী পরিচ্ছন্ন কর্মীকে বিনামূল্যে স্ক্রিনিং করা হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফজলুল রহমান, সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. আব্দুস সালাম আরিফ, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাহফুজুর রহমান, গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেহেরিন এফ সিদ্দিকা, ডা. আলি নাফিসা, ডা. শারমিন আব্বাসি, ডা. বেনজীর হক প্রমুখ।