এ এস এম মাহমুদ হাসান
নদী ভাঙনের মত ভেঙে চলেছে শোবিজ জগতের তারকাদের সংসার। খুব অল্প দিনের ব্যবধানে তাহসান-মিথিলা, গায়িকা মিলা এবং সম্প্রতি মডেল ও অভিনেত্রী স্পর্শিয়ার সাথে তার স্বামী রাফসানের ডিভোর্সের খবরে সরগরম মিডিয়া পাড়া।
এসব ডিভোর্সের খবর ঝড় তুলছে চা-য়ের টেবিলে। অবশ্য এর মধ্যে গায়িকা মিলা তাদের সংসার ভাঙার খবরকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে বলেন, তাদের ডিভোর্স হয়নি। তারা এক সঙ্গেই আছেন।
এবার সেই বিয়ে, ডিভোর্স ও সংসার পরিচালনা নিয়ে নিজের মতামতের কথা জানালেন আলোচিত সাবেক অভিনেত্রী নাজনিন আক্তার হ্যাপী।
হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ বনে যাওয়া আলোচিত এ নারী ফেসবুকে লম্বা একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বিয়ে, ডিভোর্স এবং সংসার পরিচালনা সম্পর্কে লিখেছেন অনেক কিছু। পাঠকদের জন্য তার সেই দীর্ঘ স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেয়া হলো-
হ্যাপী লেখেন, ‘দ্বীনদারদের ডিভোর্স হবে না, ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এক্ষেত্রে দ্বীনদার বলে কথা না, বিভিন্ন কারণেই ডিভোর্স হতে পারে। যে কারোরই হতে পারে। হোক দ্বীনদার বা নয়। অনেকে ভাবেন, তারা দুজনই তো দ্বীনদার তাহলে ডিভোর্স হবে কেন? আসলে হতেও পারে। এর মানে সে বা তারা খারাপ না।
বাস্তব জীবন স্বপ্নের মতো সুন্দর হয় না। দ্বীনদারদের মধ্যেও ঝগড়াঝাটি হয়, অশান্তি হয়। সংসার মানেই এমন। দুটো মানুষ সম্পূর্ণ দুটি পরিবেশে বেড়ে উঠে, মানসিকতা আলাদা থাকে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সবকিছু মানিয়ে নিতে পারে। আবার কেউ কেউ পারে না, আবার কারো কারো এত অমিল থাকে যে, সেই সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া আজাবের মতো হয়ে যায়। তখন ডিভোর্স একমাত্র উপায় থাকে।
যেমন এক স্বামী-স্ত্রী দুজনই দ্বীনদার, তারা দুজনেই আল্লাহকে ভয় করে,আল্লাহর হুকুম মানার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে ভালোমতো বুঝে উঠতে পারে না বা কেউ বুঝলেও করে না। যেমন স্বামী তার স্ত্রীকে নিজ থেকে ঘুরতে নিয়ে যায় না। অথচ শরীয়তে বাধাও নেই। তবুও নেয় না।
তিনি আরও লেখেন, ‘একটা দ্বীনদার মেয়ের বিনোদন তার স্বামীই হয়। সে তো আর অন্য মেয়েদের মত বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা মাস্তি নিয়ে পড়ে থাকতে পারে না। সিনেমা গান নিয়েও পড়ে থাকতে পারে না। তখন স্বামীও যদি তাকে না বোঝে, এই সিচ্যুয়েশনে একটা মানসিক সমস্যা তৈরি হয়ে যায়।
স্ত্রী অনেক কাজ করলেও সেই স্বামী কখনো যদি তাকে না বলে, ‘এত কাজ করছ তোমার তো কষ্ট হচ্ছে’ বা তার কষ্ট হচ্ছে এটা বোঝা, কথাটা অনেক ছোট কিন্তু এই কথাটা মেয়েরা শুনলে হাজার কষ্টও পানি হয়ে যায়।
সেক্ষেত্রে যদি উল্টো এসব না বুঝে এমন ধারণা করা হয়, ‘সংসারে আর কাজ কী! তখন বিষয়টি সত্যই কষ্টের। স্ত্রীর বাবা-মাকে যদি প্রায়ই অসম্মান করে কথা বলা হয়, তখন কিন্তু মেয়েটার প্রচণ্ড কষ্ট হয়। আপনার বাবা-মা আপনার কাছে যেমন, তার কাছেও তেমন। ছোটবেলা থেকে আদরে, আদর্শে, শত কষ্ট সহ্য করেও আপনার স্ত্রীকে বড় করেছে তদেরই যদি অপমান করা হয় তখন সে আপনাকে কখনও মন থেকে ভালোবাসতে পারবে না, এটা খুব স্বাভাবিক।
স্বামী যদি অফিস করে এসে মোবাইল নিয়েই সময় ব্যয় করেন, তখন স্ত্রী কী করবে? স্ত্রীর সব অপছন্দনীয় কাজগুলো যদি স্বামী করেন বা স্বামী যদি কু-রুচিপূর্ণ কাজ করে, তখন স্ত্রী মোহাব্বতের সাথে বোঝানোর পরও যদি স্বামী উল্টো খারাপ ব্যবহার করে তখন একটা মেয়ের কেমন লাগে!
স্ত্রীর কিছু খেতে ইচ্ছা করছে ওমনি মুখের উপর না করে তার মনটাই ভেঙে দেওয়া হলো, তখন তার কেমন লাগবে? এসব যদি চলতেই থাকে তাহলে কিন্তু সেই সংসার করা আজাবে পরিণত হয়।
অথচ স্বামী পাঁচওয়াক্ত মসজিদে নামাজ পড়ে। সুন্নতি লেবাসে চলে। সবাই তো পরিপূর্ণ ভাল হয় না। তো এসব বিষয়ে সমস্যা হতে থাকলে তখন কিন্তু বিয়েটা জান্নাতের বদলে জাহান্নামে যাওয়ার উসিলা হয়ে যেতে পারে।
কারণ এসব পরিস্থিতিতে নানারকম কথা বলা হয়ে যায় যা কবিরা গুনাহ হয়ে যায়, কখনো কখনো আরও মারাত্বক অবস্থা তৈরি হয়।
আমরা সবাই বিয়ে করি গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য সেক্ষেত্রে বিপরীত কোনো কিছু কাম্য নয়। অনেক সহাবীর/সাহাবারও তালাক হয়েছে তারা আবার বিয়েও করেছে এমন ঘটনা অনেক আছে। এটা খারাপ কিছু নয়।
কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজে কারো ডিভোর্স হলে আমরা আড় চোখে দেখি। তা একদমই শরীয়তে অপছন্দনীয় কাজ।
হয়তো তারা পরবর্তী জীবনে ভাল থাকে বা একা থাকে। আমাদের উচিত না যাদের ডিভোর্স হয় তাদের সমালোচনা করা। বনিবনা একান্ত না হলে ডিভোর্সের পথই খোলা থাকে। যদিও এটা শরীয়তে নিকৃষ্টতম জায়েজ।
মেয়েদের বুঝ ছেলেদের চেয়ে কম থাকে। সংসারের দায়িত্ব এজন্য ছেলেদেরই বেশি থাকে। তারা যখন সংসার চালনায় শরীয়তের বিধান মানে না তখনি সমস্যার সূচনা হয়। যেটা আমাদের সবার জন্য কল্যাণকর, আল্লাহপাক যেন সেটাই করেন। লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!
কেমন আছেন আরাকানের প্রসিদ্ধ লেখক মাওলানা শিব্বির আহমদ?