আওয়ার ইসলাম: হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা এর উদ্যোগে গত ২১ সেপ্টেম্বর ছিল সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রোডমার্চ কর্মসূচি। প্রশাসনের অনুমোদন পেয়ে সেই রোডমার্চের যাত্রা শুরুর পর পুলিশ বাধা দিলে রোডমার্চ শেষ করা হয়। তবে এটি নিয়ে ফেসবুক ও কিছু মিডিয়ায় রিপোর্ট হচ্ছে। এগুলোকে ভিত্তিহীন বলে একটি স্ট্যাটাসে তার জবাব দিয়েছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী।
ফেসবুকে ২২ সেপ্টেম্বর পোস্ট করা তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘বার্মার মুসলমানদের এই দুঃসময়ে কোন রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তি যখন শক্ত কোন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেনি, তখন ঈমানের তাকীদে এই দুঃসাহসিক রোডমার্চ কর্মসূচি হাতে নেয়ায় এক শ্রেণীর মানুষের চক্ষুশূল হলাম আমি। আমার চরিত্র নিয়ে নানা অপবাদে জর্জরিত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে কোটি টাকার প্রতারণা।
কেউবা বলছেন আগামীতে মন্ত্রী হওয়ার জন্য আমার এই ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জিং প্রোগ্রাম। একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এই মাসের ৬ তারিখ সংবাদ সম্মেলন করার পর থেকে আজ ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিন সময় হাতে পাই।
"হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা বাংলাদেশ" নামে আমরা এক ঝাক কাফেলা দিবা রাত্রি রাজধানী ঢাকা ২ বারসহ ১০ টি জেলা সফর করি। আমার মুরব্বী হিসেবে ঐতিহ্যবাহী রেংগা মাদরাসার মুহতামীম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান সাহেবকে প্রধান সমন্বয়কারী ও মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ লে. কর্ণেল আতাউর রহমান পীর স্যারকে সংগঠনের চীপ এডভাইজার ও রোড মার্চ বাস্তবায়ন কমিটির সিলেট সিটির কনভেনার হিসেবে কাজ চালিয়ে যাই।
যেহেতু ইস্যুটি মানবিক। আমাদের গণ সংযোগ টিম এই ১৫ দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সভা সমিতি, মত বিনিময়, একান্ত বৈঠক সহ সহস্রাধিক মানুষের সাথে পরামর্শে মিলিত হই।
বিশাল এই কাজে সময়ের স্বল্পতাহেতু সকলের কাছে যেতে পারিনি, পরামর্শ নিতে পারিনি। তাই বাহক হিসেবে সিলেটে ২ টি সাংবাদিক সম্মেলন, ২ টি মত বিনিময় ও রাজধানীতে ১ টি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সকলের কাছে মেসেজটুকু পৌঁছানোর চেষ্টা করি।
জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়ে সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করেছিলাম ২ শতাধিক অথবা তার চেয়েও বেশি গাড়ি বহর আমাদের রোড মার্চে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত ২ টি লংমার্চ ও রোড মার্চে প্রত্যেকেই নিজ এলাকা থেকে গাড়ি ব্যবস্থা করে আসেন। এবারও সবার কাছে একই মেসেজ দেয়া আছে। আমরা গাড়ি ভাড়া করবো, এরকম কথা কোথাও বা সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়নি। তাহলে ২ শ গাড়ির ভাড়া হিসেব করে এরকম কোটি টাকার স্বপ্ন জাতিকে যে গিলাবার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন। আপনার হিন মানসিকতায় আফসোস ছাড়া কঠিন ভাষা ব্যবহার আমার পরিবার শেখায়নি।
আমাদের এই কর্মসূচীর সফলতা দেখে কতিপয় হিংসুটে প্রকৃতির মানুষ বিষোদগার করতে গিয়ে বলেছেন ২ শতাধিক গাড়ির কথা বলে আমরা ফান্ডিং করেছি অথবা ত্রাণের কথা বলে মোটা অংকের চাঁদা সংগ্রহ করেছি।
আরে ভাই, আমরা প্রশাসনের কাছে অনুমতির জন্য যে দরখাস্ত করেছি তাতে রোড মার্চের কথাই বলা হয়েছে, ত্রাণ সম্পর্কিত একটি শব্দও লেখা হয়নি। চ্যালেঞ্জ দিলাম, সাংবাদিক হিসেবে আপনি প্রমাণ করুন।
ত্রাণের অযৌক্তিক কথা ম্যানশন করে বলেছেন, কোটি টাকা মানুষে দিয়েছে, আর এগুলোকে হজম করার জন্যই রোড মার্চের নাম নিয়ে টাকা আত্মসাত। আপনার বক্তব্য যে নির্জলা মিথ্যাচার, মিডিয়া লাইনের সবাই এ দু' সপ্তাহ থেকে দেখছেন। কারণ রোড মার্চের বিরুদ্ধে যারা নিজস্ব মতামত দিয়েছেন, তারা বলেছিলেন, রোড মার্চে যে খরচ হবে, এই টাকাটা ত্রাণে দিলে উপকার হতো। আমরা যদি ত্রাণ দিতে হতো, তাহলে না চাঁদার বিষয়টি আসতো। আসলেকি আমার উদারতায় চামচিকাও ঘাড়ে উঠতে চায়।
আমার স্পষ্ট বক্তব্য হলো, অযৌক্তিক পাগলের প্রলাপ শুনিয়ে ইজ্জতহানী করতে পারবেন না- যদি আল্লাহর নুসরত থাকে।
১৫ দিনে ১০ টি জেলা সফর করতে গিয়ে যেখানে ঘুমোবার ফুরসতই পেলামনা। সেখানে চাঁদা করার সময়টুকু কোথায়। ফেইসবুকে অথবা মিডিয়ায় দেখে দেশ ও প্রবাসের যেসব সুধী, বন্ধু বান্ধব ও দলীয় নেতাকর্মীরা যে সহযোগিতা করেছেন, এটাই আমাদের কালেকশন।
আমরা ত্রাণের জন্য পারমিশন চাইবো কেন? এখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ স্ব- উদ্দোগে যাচ্ছে, সরকারও কোন বাধার সৃষ্টি করছেনা। আমরা ত্রাণ দিলেনা কালেকশনের প্রশ্ন। আমরা রোড মার্চের পারমিশন চেয়েছি।
আমরা জেলায় জেলায় সফর করে মানুষকে রোড মার্চ কাফেলায় স্ব-উদ্দোগে গাড়ি নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি। আমরা নিজে গাড়ি ভাড়া করে মানুষকে নিয়ে যাবার সেই অঢেল সম্পদ হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা অথবা আমাদের নেই।
যেকারণে স্বেচ্ছায় যারা সাহায্য করেছেন, তাদেরকে মোবারকবাদ।
বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা রোড মার্চ ঘোষণার পর থেকে ১৫ দিনে অর্থাৎ আজকের রোড মার্চ পর্যন্ত মোট হিসেবটি ওদের দাত ভাংগা জবাব দিতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থাপন করলাম।
আমাদের পোস্টার, লিফলেট, বেনার, সাংবাদিক সম্মেলন ৩ টি, গণ সংযোগ এবং আজকের খরচসহ মোট ব্যয় ৩ লক্ষ ৫২ হাজার ২৫৩। মোট আয় ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৭ টাকা। ঘাটতি ৩৮ হাজার ২৪৬ টাকা।
(প্রমাণ হিসেবে তিনি আয় ব্যয়ের উৎসসহ লিস্টও পোস্ট করেন)
আশা করি ভদ্র লোকের জবাব পেয়েছেন। আশ্চর্য হলাম সদ্য হজ ফেরত সাংবাদিক বন্ধুটি কি করে একজন মানুষের বিরুদ্ধে নির্জলা মিথ্যাচার করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের সকলের জন্য হেদায়াতের ফয়সালা করুন।
‘তোয়ারা বাঙালি, হে দেশে ছলি যা’