আওয়ার ইসলাম: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হারানোর পর ভিটামাটি ছেড়ে এসে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের নতুন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা আহসান। সেখানেই আলজাজিরার প্রতিনিধি কেটি আর্নল্ডের কাছে তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নৃশংসতায় আপনজন হারানোর কথা।
আমার নাম আহসান, বয়স ৩০ বছর। এই সহিংসতার আগে আমি রাখাইন রাজ্যের চিনখালি গ্রামে কৃষিকাজ করতাম। কাজের ফাঁকে শিশুদের ইংরেজি শেখাতাম। সব মিলে খুব ব্যস্ত দিন কাটতো আমার।
২৫ আগস্ট সকালে পরিবারের সাথে নাশতা করছিলাম, এমন সময় সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকে গুলি করতে শুরু করে। তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে থাকে। আমার পরিবারের পাঁচজন নিহত হয় সে দিন। পিঠে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েন মা, মুখে ও শরীরে ছুরির অনেকগুলো আঘাত নিয়ে পড়ে থাকতে দেখি আমার এক বোনকে। জীবনের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক দৃশ্য ছিল সেটি; কিন্তু কান্না করারও সুযোগ ছিল না আমার। যেকোনো সময় সেনাবাহিনীর বুলেট আমাকেও বিদ্ধ করবে সেই ভয়ে ছিলাম।
এক সেনা আমার বোনকে ধর্ষণ করতে চেষ্টা করে, বোন যতবার বাধা দিয়েছে ততবারই তাকে বেধড়ক পিটিয়েছে। ওই ঘটনার পর মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বোনটি আমার। সে দিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত একটি কথাও বলেনি সে। চলাফেরার শক্তিও কমে গেছে তার। আমি ও আমার আরেক ভাই সারা পথ তাকে বহন করে নিয়ে এসেছি। পথে অনেক ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পেয়েছি আমরা। কোথাও লাশ পড়ে আছে, শিশুরা কাঁদছে, বয়স্করা ক্ষুধায় আর্তনাদ করছে। বাংলাদেশ সীমান্তের নদীর কাছে পৌঁছে দেখি এক হাজারের বেশি লোক অপেক্ষা করছে পার হওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত একটি নৌকা পাই, যেটি আমাদের নদী পার করে দেয়।
বাংলাদেশে এসে অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় রয়েছি আমরা। পর্যাপ্ত আশ্রয় নেই, পায়খানা কিংবা সবার জন্য ঘুমানোর জায়গাও নেই। আমরা বেঁচে আছি; কিন্তু এটি দুর্বিষহ, এর চেয়ে মৃত্যুও ভালো। আশঙ্কা হচ্ছে রোহিঙ্গারা সব মরে যাবে। মিয়ানমারে থাকলে আমাদের হত্যা করা হবে, কিন্তু এটিও (উদ্বাস্তুশিবিরে) কোনো জীবন নয়।
আমার মনে হয়, সারা বিশ্ব আমাদের সাথে আছে, এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আপনারা যেমন মানুষ, আমরা তেমনি মানুষ। তফাত হলো আপনাদের মতো আমরা কোনো দেশের নাগরিক নই। বিশ্বের কাছে আমার আকুতি, আমাদের রাষ্ট্রীয় নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিয়ে অন্যদের মতো বাঁচতে দিন।