মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ
করুণা করি, ঘৃণা করি না। না, ওদের প্রতি আমরা ঘৃণা বা ক্রোধ প্রকাশ করি না। ওরা আমাদের আত্মসম্মানে আঘাত করেছে সত্য, জাতি ও সমাজ এবং কওম ও মিল্লাতের প্রতি আমাদের সেবা ও অবদানকে ওরা অমর্যাদা করেছে তাও সত্য, তবু ওদের আমরা আন্তরিক করুণা করি, ঘৃণা করি না।
ওরা অবুঝ, ওদের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করে তুমি অবুঝ হয়ো না। ওদের ক্ষমা করে দাও এবং ওদের হেদায়তের জন্যে আল্লাহর কাছে দুআ করো। গভীর রাতের নির্জনতায় ওরা যখন গাফলতের ঘুমে অচেতন, তুমি তখন কোমল শয্যার সুখনিদ্রা বিসর্জন দাও, জায়নামাজে দাঁড়াও এবং সেজদায় লুটিয়ে পড়ো। এই হতভাগাদের হেদায়াতের জন্যে আল্লাহর দরবারে অশ্রুপাত করো। যত পারো রোনাযারি করো।
তোমার হৃদয়-দগ্ধতা, তোমার নির্জন রাতের আহাযারি যদি কোনো একটা দুর্ভাগার জীবনের গতিধারা ফিরিয়ে দেয় তাহলে তো তুমিই লাভবান হবে। সে তোমার ভাই হবে এবং এই ইতরতার জন্যে অনুতপ্ত হবে। ওরা নিচে নেমেছে বলে তুমি কেনো উপরে উঠবেনা! তুমি না তালিবে ইলম! তুমি না ওয়ারিছে নবী! তুমি জানো এবং আমার চেয়ে ভালো জানো, তবু পবিত্র কুরআনের বাণী আবার তোমার স্মরণে আনি, "ওরাই তো বলে, রাসূলের চারপাশে যারা জড়ো হয়েছে তাদের খরচ বন্ধ করে দাও, তাহলেই দেখবে সব ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবে। অথচ আসমান যমীনের খাযানা তো আল্লাহর মালিকানায়! কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না। তারা বলে, যদি আমরা মদীনায় ফিরে যেতে পারি তাহলে অভিজাত যারা অবশ্যই তারা ইতরদের মদীনাছাড়া করবে। অথচ আভিজাত্য আল্লাহর, আল্লাহর রাসূলের এবং মুমিনদের। কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।" (সূরা আল মুনাফিকুন)
ইলমের তালিব বন্ধু আমার, তারপরও কি তোমার প্রয়োজন আরো সান্ত্বনার! এবার শোনো অবুঝ বন্ধুরা! আল্লাহর রহমতে আমার ঘরেও কুরবানী হয়েছে এবার, আমার দুয়ারেও আল্লাহর নামে মেহমানদারি হয়েছে গরীব-গোরাবার। আমার সন্তানেরা বিষণ্ন মনে পথ চেয়েছিলো আমার জন্যে। কিন্তু আমি ঘুরেছি পথে পথে, তোমাদের দুয়ারে দুয়ারে কুরবানির চামড়ার জন্যে। দ্বীনের খেদমতের সৌভাগ্য তুমিও যেনো লাভ করতে পারো। আমার ভয় ছিলো, তুমি কুরবানির চামড়া বন্ধ করে দিলে আল্লাহ যদি তোমার চামড়া তুলে নেন! তাই তোমার সব "অসৌজন্য" আমি নিরবে গ্রহণ করেছি।
ঈদের আনন্দের দিনে তুমি আমাকে আঘাত করেছো, তবু আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি, তুমি তো আমার অবুঝ ভাই, আমি কি তোমার অকল্যাণ চাইতে পারি! কিন্তু শোনো বন্ধু! আর এমন অবুঝ হয়ো না, কুরবানির খুশির দিনে নিজেদের খুশি কুরবান করে যারা তোমার দুয়ারে যায় তারা তালিবে ইলম, আজ দ্বীন শিক্ষা করে আগামী দিন তারা দ্বীন শিক্ষা দেবে।
যুগ ও সময়ের মলিনতায় তাদের গুণ-ঔজ্জ্বল্য যদিও বা কিছুটা মলিন, তবু তারা তালিবে ইলব, তারা আল্লাহর প্রিয়। কেননা আল্লাহ জানেন, তারা যদি না থাকে, আল্লাহর ইবাদত হবে না দুনিয়ায়। তাই তাদের অসম্মান করে নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনো না ভাই। আর একান্তই যদি পরীক্ষা করতে চাও, তাহলে দেখো একবার বন্ধ করে। দেখো, তোমার ঘরে কেমন আগুন জ্বলে।
পিতৃত্বের ছায়া: মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ
দেখো, নেশাখোর সন্তানের হাতে তোমার কেমন লাঞ্ছনা জোটে এবং আল্লাহ না করুন দেখো জাতির কী করুণ পরিণতি ঘটে। মাদরাসা হলো দ্বীনের আশ্রয়কেন্দ্র, ইলমের লালনক্ষেত্র এবং ইসলামের রক্ষাদুর্গ। এ দুর্গ অতীতে আল্লাহ রক্ষা করেছেন, এখনো রক্ষা করছেন, ভবিষ্যতেও ইনশাআল্লাহ রক্ষা করবেন। তবে মনে হয় আমাদেরও সময় হয়েছে ইলমের মর্যাদা এবং তালিবে ইলমের শান বজায় রাখার জন্যে আত্মসচেতন হওয়ার। সময় ও সমাজের কাছ থেকে যোগ্যতার দাবীতে মর্যাদা আদায় করে নিতে হয়। সে যোগ্যতার প্রমাণ আমাদেরকে দিতে হবে আজ।
অবশেষে আল্লাহর দরবারে আমাদের ফরিয়াদ, হে আল্লাহ! তোমার দ্বীনের জন্যে যলীল হয়ছি, তুমি আমাদের ইজ্জত রক্ষার ব্যবস্থা করো। এ অভাগা কাওমের "চামড়া" না হলে তোমার দ্বীন কি চলবে না হে আল্লাহ!"
পুষ্প, মুহাররাম ১৪২২ হিজরি সংখ্যা থেকে ফযলে রাব্বী মাকসুদের সংগ্রহ