আওয়ার ইসলাম : কুরবানির পশুর চামড়া থেকে দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর বেশ ভালো একটি আয় হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়ার মূল্য কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের কওমি মাদরাসাগুলো। দরিদ্র্য ও অসহায় ছাত্রদের শিক্ষাসেবা দেয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে দেশের বাজারে চামড়ার মূল্য কম হওয়ায় তা পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। ভারতে বিজেপি সরকার আসার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে গোরক্ষার নীতি গ্রহণ করায় ভারতীয় বাজারে চামড়ার চাহিদা এখন তুঙ্গে। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারা দেশীয় বাজার থেকে স্বল্প মূল্যে চামড়া কিনে তা ভারতে পাচার করে দিচ্ছে।
দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কুরবানির চামড়ার প্রায় অর্ধেকেই পাচার হয়ে যায় ভারতে। ভারতের চামড়া ব্যবসায়ীরা কুরবানির পূর্বে শত শত কোটি টাকা তুলে দেয় পাচারকারী চক্রের হাতে। তারা চামড়ার মূল্যও দেয় স্থানীয় বাজারের প্রায় দ্বিগুণ। ফলে পাচারকারী চক্র চামড়া সংগ্রহে মরিয়া হয়ে ওঠে।
ভারতের স্থানীয় বাজারে চাহিদার তুলনায় চামড়ার সরবারহ কম থাকায় বিএসএফও পাচারকারীদের দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ কালেরকণ্ঠের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়, কিভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়ার মূল্য কমিয়ে তা ভারতের বাজারে পাচার করে দিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
প্রতিবেদনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি বিশেষ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। যেখানে বলা হয়, ভারতের বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গরু জবাই নিষিদ্ধ করে। এতে ভারতের ট্যানারিগুলোতে কাঁচা চামড়ার ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়। ভারতে কাঁচা চামড়ার চাহিদা সামনে রেখে পরিকল্পনা করে এবারে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমিয়ে দেয় বাংলাদেশের ট্যানারির মালিকদের সিন্ডিকেট।
বাংলাদেশ থেকে চামড়া পাচারে ট্যানারির মালিকদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকারও করেন বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাংলাদেশের সীমান্ত পথে ভারতে চামড়া পাচারের ১১টি রুট চিহ্নিত করেছে। চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো হল- সাতক্ষীরা, কলারোয়া, বেনাপোল, জীবননগর, মেহেরপুর, দর্শনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাই, জাফলং, তামাবিল ও করিমগঞ্জ। এসব পয়েন্টে চোরাচালান চক্রের চিহ্নিত ব্যক্তিদের আনাগোনা পরিলক্ষিত হয়।
ভারতের চামড়া পাচার রোধে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিবি সতর্ক থাকার পরও চামড়া পাচার রোধ করা যাচ্ছে না। এজন্য দায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়ার মূল্য কমিয়ে দেয়া। এবারও দেশের বিপুল পরিমাণ চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কুরবানির চামড়া কালেকশনের বিকল্প ভাবছে কওমি মাদরাসাগুলো
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কুরবানির ঈদ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠক শেষে গত ২০ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চামড়া পাচাররোধ ও চামড়া নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর প্রবেশ ও বাইর হওয়ার পয়েন্টগুলোয় নিরাপত্তা ও তল্লাশি চৌকি বসানো হবে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে যেন চামড়া পাচার না হতে পারে, সে জন্য অতিরিক্ত নজরদারি করা হবে।’
সর্বোপরি বলতেই হবে, চামড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের কওমি মাদরাসাগুলো বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে উপকৃত হচ্ছে প্রতিবেশী ভারত।