নূরুল জান্নাত মান্না : কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে মোগল আমলের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন শাহ মাহমুদ মসজিদ, বালাখানা ও সাদী মসজিদ। এগারসিন্দুর এলাকায় মাত্র দুই কিলোমিটারের মধ্যেই এ দুটি মসজিদের অবস্থান।
গবেষকদের মতে, সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে শাহ মাহমুদ মসজিদ নির্মিত হয়। মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকৃতির। অন্যদিকে পোড়ামাটির শৈল্পিক অলঙ্করণে সমৃদ্ধ বর্গাকৃতির শাহ মাহমুদ মসজিদ সম্পূর্ণ ইটের তৈরি। মসজিদের চারপাশে ইটের তৈরি আড়াই ফুট উঁচু দেয়ালঘেরা প্ল্যাটফর্মের উপর মসজিদটি নির্মিত।
মসজিদের প্রতিটি বাহু ৩২ ফুট। চার কোনায় চারটি বুরুজ রয়েছে। রয়েছে একটি বিশাল গম্বুজ। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে প্রবেশদ্বার রয়েছে। প্রবেশ পথগুলোর চারদিকে পোড়ামাটির চিত্র ফলকের কাজ। ভেতরে টেরাকোটার অলঙ্কৃত তিনটি মেহরাব।
মসজিদের প্রবেশপথে চোখে পড়বে ইটের তৈরি একটি দৃষ্টিনন্দন দোচালা ছোট্ট বিল্ডিং। এর সামনেই মুসল্লিদের ওজু করার জন্য শান বাঁধানো ঘাটের পুকুর। অনেকটা ছনের কুটিরের নকশার আদলে তৈরি ছোট্ট এ ঘরের ভেতর দিয়ে প্লাটফর্ম পার হয়ে মূল মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। এর গায়ে রয়েছে নানা নকশা। মসজিদের নির্মাণশৈলী ও স্থাপত্যে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের নিদর্শন প্রকাশ পায়।
মসজিদের গাছের ফল খাওয়া ও নিজের নামে মসজিদের নামকরণ কি জায়েজ?
মোগল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে ফরাসী বণিক শাহ মাহমুদ এ মসজিদটি তৈরি করেন। তার নামেই মসজিদটির নামকরণ করা হয় শাহ মাহমুদ মসজিদ ও বালাখানা। নির্মাণের সময় মসজিদের চার কোনায় চারটি মূল্যবান পাথরের ফলক ছিল। এগুলো এখন আর নেই। অবশ্য ইউনেস্কোর মুসলিম স্থাপত্যের ক্যাটালগে এটির নাম উল্লেখ আছে, ‘শাহ মোহাম্মদ মসজিদ’ হিসেবে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি শাহ মাহমুদ সমজিদ হিসেবেই পরিচিত। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর শাহ মাহমুদ মসজিদটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
আশির দশকে মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছিল। এরপর এটির কোনো সংস্কার নেই। সঠিক নজরদারি না থাকায় মসজিদের পুরনো কারুকাজ অনেক ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এগারসিন্দুরে মোগল আমলে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা হচ্ছে সাদী মসজিদ। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে সাদী মসজিদ নির্মিত হয়। জনৈক শাইক শিরুর পুত্র সাদী ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। তার নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ হয় সাদী মসজিদ।
পোড়ামাটির অলঙ্করণে সমৃদ্ধ এ মসজিদটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি। এক গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকৃতির মসজিদের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ২৭ ফুট। চারপাশে চারটি বুরুজ। পূর্ব দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে প্রবেশদ্বার রয়েছে। প্রবেশপথগুলোর চারদিকে পোড়ামাটির চিত্র ফলকের কারুকাজ। ভেতরে তিনটি টেরাকোটার অলঙ্কৃত দৃষ্টিনন্দন মেহরাব। মেহরাবের গায়ে সংযুক্ত একটি শিলালিপিতে ফার্সি ভাষায় শাহজাহানের রাজত্বকালে শাহ মাহমুদ এ মসজিদ নির্মাণ করেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
মসজিদের চারপাশেই দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন অলঙ্করণ। এটিও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মসজিদের অনেক কারুকাজ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে পুরাকীর্তি বিনষ্ট করে মসজিদের ডানদিকের দেয়াল কেটে জানালা করা হয়েছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাঅন্নপূর্ণা দেবনাথ আওয়ার ইসলামকে জানান, প্রাচীন এ দুটি মসজিদসহ অন্য পুরাকীর্তিগুলো রক্ষায় তারা সব সময়েই আন্তরিক। এগুলো তদারকি করার জন্য এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।