শাহনূর শাহীন: আগামী ২৩ জুলাই এইসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল দেয়া হবে। এবছর এইসএসসি পরীক্ষায় কারিগরীসহ অন্যান্য আটটি সাধারণ বোর্ড থেকে মোট ৯ লাখ ৮২হাজার ৭৮৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়ার পাশাপশি মাদরাসা শিক্ষোবোর্ড থেকে ৯৯হাজার ৩২০ জন শিক্ষার্থী আলিম পরীক্ষায় অংশ নেয়।
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্যই মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক লেভেলের পর ইন্টামিডিয়েট লেভেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে যেমন ভালো রেজাল্ট প্রত্যাশা থাকা চাই তেমনি পরবর্তী সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত বেছে নেয়া চাই। এক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। কেননা এই সময়টা ক্যারিয়ারের জন্য টার্নিং পয়েন্ট।
একজন মাদরাসা থিক্ষার্থীর আজন্ম লালিত স্বপ্ন কিংবা মা বাবার চিরচেনা বাক্য তাদের সন্তান মাদরাসায় পড়াশোনা করে একজন যোগ্য আলেম হবে। ধর্মীয় শিক্ষায় সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করে নিজের, পরিবারে এবং দেশ ও জাতির সেবা করবে। এজন্য আলিম পরীক্ষা পরবর্তী সময়টা একজন শিক্ষার্থীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়।
এই সময়টাতে এসে একজন শিক্ষার্থীকে পড়াশুনার পাশাপাশি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা ভাবতে হয়। ফলে এ সময়ে বাকি পড়াশুনার দীর্ঘ পথে অহেতুক দীর্ঘসূত্রতা প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আলাদা করে ভাবায়।
বাংলাদেশে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাব্যাবস্থায় প্রাথমিক লেভেল থেকে ইন্টারমিডেয়েট পর্যন্ত বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও সাটিফিকেট প্রদান করা হয়। এরপর উচ্চতর পড়াশোনায় ফাযিল কামিল কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একাডেমিক পড়াশোনা ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম ঠিক রেখে বাড়তি কোনো দায়িত্ব পালন করা বেশ কঠিনই। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও ভীষণ বেগ পোহাতে হয়।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কেও তেমন বেগ পোহাতে হয়েছে। আধুনিক শিক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে ফাযিল কামিল পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য অনার্স মাস্টার্স করার অভিপ্রায় থেকে কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হলো প্রথম পছন্দ। সেক্ষেত্রে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের চাপ সামলে সারাদেশের ফাযিল কামিল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ, সনদ প্রদান ও অনার্সের কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সেশন জটের কবলে পড়ে অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। আর এ সেশন জট থেকে মুক্ত হয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৩’ পাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠার পর ২০১৫-১৬ সেশন থেকে সারাদেশের মাদরাসাগুলোর ফাযিল কামিল পরীক্ষা গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণ করেছে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়।
জানতে চাইলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার রওশান খান আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সময়মতো পরীক্ষা নিয়ে সেশনমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করার।
তিনি বলেন, বর্তমানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারাদেশে ১ হাজার ৪৯টি ফাযিল মাদরাসা এবং ২০৫টি কামিল মাদরাসা রয়েছে। এরমধ্যে ৫২টি মাদরাসায় ৫টি বিষয়ে বিষয়ে অনার্সের পাঠদান করা হয়।
রওশান খান বলেন, আগে ৩১টি মাদরাসায় চার বিষয়ে অনার্সের পাঠদান করা হতো। আমরা সেটাকে উন্নীত করেছি ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে অনার্সের পঠিত বিষয় এবং মাদরাসা সংখ্যাও বাড়াব।
অনার্সের পঠিত বিষয় হলো, আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি এবং ইসলামের ইতিহাস।
সেশনজট সম্পর্কে জানতে তিনি বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরুর প্রথম শিক্ষাবর্ষ অতিক্রম করে দ্বিতীয় শিক্ষাবর্ষ চলছে। প্রথম শিক্ষাবর্ষে আমরা ফাযিল স্নাতক(ডিগ্রি) এবং ফাযিল সম্মান(অনার্স) এর পরীক্ষা বর্ষ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সম্পন্ন করেছি এবং চলতি দ্বিতীয় এবং নতুন প্রথম বর্ষের পরীক্ষাও যথাসময় অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ৮ আগস্ট থেকে পরীক্ষা শুরু হবে।
সেশনজট নিরসনের ব্যাপারে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত জনবল থাকা সত্তেও কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট নিরসন করতে পারেনি। কেন পারেনি সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে। এদিকে সেই একই জনবল নিয়ে, উপরন্ত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক জনবল এখনো পরিপূর্ণ হয়নি তথাপিও আমরা যথাসময়ে পরীক্ষা নিচ্ছি।
আমরা আশা করছি ভবিষ্যতেও আমাদের কখনো সেশনজটের কবলে পড়তে হবে না। কেননা আমরা মনে করি, সেশনজটমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা স্বদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তাছাড়া বিশ্বদ্যিালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হলে আমাদের জনবল এবং কার্যক্ষেত্রের পরিধি বাড়বে।
আরআর/
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আন্তঃমাদরাসা প্রতিযোগিতার আয়োজন
চাঁদা না দেয়ায় মাদরাসা অধ্যক্ষকে পেটালেন বিএনপি নেতা