শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা থাকতো না’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ঈদ এলেই সড়কে শুরু হয় মৃত্যু মিছিল। প্রতিদিন প্রাণ হারায় এক বা একাধিক মানুষ। আহত হচ্ছে এবং পঙ্গুত্ব বরণ করছে আরও অসংখ্য মানুষ। সরকার নানা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেও কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তা। সাধারণ যাত্রীদের জন্য সড়ক হয়ে উঠেছে এক বিভীষিকার নাম।

সড়কের এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন সাবেক এমপি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মাসিক তৌহিদী পরিক্রমা সম্পাদক এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী। তার সঙ্গে কথা বলেন, আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : প্রতিবছর ঈদ-উৎসবে সড়ক দুর্ঘটনায় বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যায়। বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

এডভোকেট শাহীনুর পাশা : যেকোনা মৃত্যুই কষ্টের। আর উৎসবেরে সময় মৃত্যুর মিছিল নি:সন্দেহে অনেক দু:খজনক ও বেদনার। মানুষের মর্মান্তিক এ মৃত্যু বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

আওয়ার ইসলাম : উৎসবের দিন ঘণিয়ে এলে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ কি?

এডভোকেট শাহীনুর পাশা : আমার মনে হয়, এর পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করে। যেমন, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ না হওয়া এবং নকল ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছড়াছড়ি হওয়া।

দুই. পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকা এবং মহাসড়কগুলোতে একাধিক লেনের ব্যবস্থা না থাকা।

তিন. অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া। ফিটনেস বিহীন প্রচুর গাড়ি রাস্তায় চলছে।

চার. দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থার অনুন্নত হওয়া।

বাংলা ভাষায় সীরাত চর্চায় মাওলানা মুহিউদ্দীন খান অনন্য দৃষ্টান্ত

এছাড়াও গতি মেনে গাড়ি না চালানো, যাত্রীদের অসচেতনতা ইত্যাদি আরও অনেক বিষয় রয়েছে।

আওয়ার ইসলাম :  প্রায় যাত্রীদের অসচেতনতার কথা বলা হয়। যাত্রীদের দায় কতোটা?

এডভোকেট শাহীনুর পাশা : আমাদের দেশের যাত্রীদের সচেতনতার অভাব আছে। অনেকের ভেতরেই এ মানসিকতা কাজ করে যে, আমাকে বাড়ি যেতেই হবে। সেটা যেকোনো মূল্যে হোক। এটা ঠিক নয়।

বাড়ি না গেলে হয়তো সন্তান, বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করা হবে না। আনন্দ পাওয়া যাবে না। কিন্তু যদি জীবনটাই চলে যায় তবে তো সবই গেলো। সন্তান-বাবা-মা সবার জীবনের আনন্দ চিরদিনের জন্য মাটি হয়ে যাবে।

আমি যদি ভাবি শুধু আমিই অতিরিক্ত যাত্রী হলাম। সেটা ভুল চিন্তা। কেননা আমার মতো একজন একজন করে যদি একশো মানুষ অতিরিক্ত হয় তবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারাবে এবং লঞ্চও ডুবে যাবে।

আমরা ভাববো, আমার কারণে দশ জনের কষ্ট হবে এবং আমি নিজেও বিপদগ্রস্থ হবো।

আওয়ার ইসলাম : সরকার বার বার বলছে, তারা সড়ক ও নৌ পথ নিরাপদ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবুও তো মৃত্যুর মিছিল থামছে না। আপনি কি সরকারের বিশেষ কোনো অবহেলা দেখছেন?

এডভোকেট শাহীনুর পাশা : এটা একটি রাজনৈতিক বক্তব্য। জনগণকে খুশি করার জন্য বলছে। ব্যবস্থা যথাযথ হলে দুর্ঘটনা কেনো ঘটছে? ঈদের এখনো অনেক দিন বাকি আমার সিলেটের মানুষই এখন ট্রেন ও বাসের টিকেট পাচ্ছে না।

জনগণ যদি অসচেতন হয়, সে দায়ও সরকারের। সরকার কেনো মানুষকে সচেতন করতে পারছে না।

আমি মনে করি, সরকারের অবহেলা অবশ্যই আছে। সরকারের অনেক করণীয় কাজ রয়েছে যা তারা করছে না।

আওয়ার ইসলাম : সরকার বার বার নিষেধ করার পরও ফিটনেস বিহীন ছোট ছোট গাড়িগুলো হাইওয়েতে নামছে। তাদের থামানো যাচ্ছে কেনো?

এডভোকেট শাহীনুর পাশা : যারা গাড়িগুলো রাস্তায় নামাচ্ছে তাদের অনেকেই সরকারি দলের নেতা বা শ্রমিক নেতা। তাই সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না। সরকার বলছে রাস্তা না নামতে। অথচ হাইওয়ে পুলিশ তাদের বাঁধা দিচ্ছে না। পুলিশ কঠোর হলে ফিটনেস বিহীন গাড়ি সড়কে নামতে পারতো না।

তাছাড়া সরকার যদি কঠোর আইন করতো তাহলে অবশ্যই ৭০ ভাগ ফিটনেস গাড়ি রাস্তায় নামতো না। যেমন সিএনজি অটোরিকশার ক্ষেত্রে হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম :  দেশের সাধারণ আইনের বাইরে যেয়ে যদি আমরা চিন্তা করি। তাহলে ইসলাম অতিরিক্ত যাত্রীবহন, ফিকনেস বিহীন গাড়ি চালানো, বেপরওয়াভাবে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে কী বলে?

এডভোকেট শাহীনুর পাশা : ইসলাম যেকোনো অন্যায় ও অবৈধ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর। যারা এমনটি করছে ইসলাম তাদের কঠোর শাস্তির কথা বলে। জেনে শুনে এমন কোনো কাজ করে যাতে প্রাণহানির ভয় থাকে তবে তা করার কারণে কোনো প্রাণহানি ঘটলে ইসলাম তাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে গণ্য করে। ইসলামে হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন ধরনের শাস্তি আছে। দুর্ঘটনার  বিচার-বিশ্লেষণ সাপেক্ষে এসব প্রয়োগ হবে।

আমি এমপি থাকাকালী মহান সংসদে বলেছিলাম, একজন মানুষ খুন করলে যদি ফাঁসি হয় তাহলে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দশ জন খুন করলে তার কেনো ফাঁসি হবে না?

আওয়ার ইসলাম : যারা অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে গাড়ি, ট্রেন বা লঞ্চে উঠছে তাদের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?

এডভোকেট শাহীনুর পাশা : ইসলামে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক। আত্মহনন এবং এ পর্যায়ে পরে এমন কোনো কাজ ইসলাম নিষেধ করে। সুতরাং জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে কোনো কাজ করতে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করে।

আওয়ার ইসলাম : সবশেষে সমাধানের কি পথ রয়েছে?

এডভোকেট শাহীনুর পাশা : আমি প্রথমেই বলবো সচেতনতার কথা। আমরা সচেতন হলে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেক কমে যাবে। এরপর সড়কের উন্নয়ন এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রয়োজন।

তৃতীয়ত আমাদের উদ্যোগীও হওয়া প্রয়োজন। আমার সামনে হেলপার লোক উঠাচ্ছে আমরা কিছু বলছি না। পুলিশ ঘুষ চাচ্ছে আমরা বিনা বাক্যে দিয়ে দিচ্ছি। এমন স্বভাব পরিহার করতে হবে।

সর্বেোপরি অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করতে হবে। আমি যদি মানুষের মৃত্যুর কারণ হই, ইহকালে আমি বেঁচে গেলেও পরকালে আমি কিছুতেই বাঁচবো না বিষয়টি মাথায় রাখা প্রয়োজন।

 

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ