জুনাইদ আল হাবীব
ছোটদেরকে মানুষ জিজ্ঞাসা, বাবু! বড় হলে তুমি কার মত হবে? এরপর বাচ্চারা যার যার মত, যার যার শিক্ষা অনুপাতে জবাব দেয়। ছোটকালে আমাকে কেউ এই প্রশ্ন করলে, চিন্তা ছাড়াই জবাব দিতাম "আমি আল্লামা আজিজুল হক সাহেবের মত হবো।" এই জবাব দেওয়ার একটা কারণও আছে। আমার মাদ্রাসায় পড়াশুনার শুরু আমার খালুর হাত ধরে। খালু টঙ্গীর হাকিমিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম। ওখানেই আমার মক্তবে আলিফ, বা’র প্রতিষ্ঠানিক অধ্যয়নের সূচনা। দ্বীনী পড়াশুনা মূলত বাবা মার কাছ থেকে শুরু হলেও প্রতিষ্ঠানিক পড়াশুনা শুরু খালুর কাছে।
আমার খালু শায়খুল হাদীস রহ.কে মনে করতেন আদর্শ পুরুষ। বলা চলে, খালু ছিলেন শায়খুল হাদীসের ভাব শিষ্য। খালু পড়াশুনা করেছেন গ্রামে। কিন্তু মায়ের দোয়া আর মালিকের মেহেরবাণীতে তিনি এখন শহুরে বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরিচালক। আমার মায়ের কাছে শুনেছি, বাবা মারা যাবার আগেই বাবা খালুকে আমাদের ভাইবোনদেরকে দ্বীনী শিক্ষা দেওয়ার অসিয়ত করেছিলেন। বাবা নাকি খালুকে মুহাব্বত করতেন অনেক বেশি। খালু আলেম মানুষ, বাবা আলেম নন। তাই আত্মীয়তার মুহাব্বতের সাথে সাথে আলেমের মুহাব্বতটা খালুর প্রতি নতুন মাত্রা পেয়েছিলো। খালুও অসাধারণ ভালো মানুষ। বাবার প্রতিও খালুর মুহাব্বত কোন অংশে কম ছিলো না। এখনো কোনো অংশে কম নয়। আমাদের প্রতি তার আন্তরিকতাপূর্ণ ভালোবাসা এর বড় প্রমাণ।
আমি তো কসম করে বলতে পারি, বাবা গত হয়ে যাবার পর এমন আন্তরিক আর দয়ার পরশ বোলানো আমাদের এমন একজন খালু না থাকলে জীবনটা অন্যভাবেও গঠন হতে পারতো। দ্বীনী শিক্ষা কেনো; কোনো শিক্ষাই হয়তো কপালে জুটতো না। খালুও যে বাবার আন্তরিকতা দিয়ে আমাদের বেড়ে উঠার সর্বাত্মক পথ দেখিয়েছেন, এটা আজকের দুনিয়ায় বিরল। এর দৃষ্টান্ত দুনিয়াতে দ্বিতীয় আরেকটি আছে কিনা আমার জানা নেই। থাকলেও আমি বলবো, আমার খালুই এই স্থানে একক।
শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর কুরআনি পরিবার
প্রসঙ্গ পাল্টে গেলো। হৃদয়ের কথাগুলো যে থেমে থাকে না, তাই দুই এক লাইন লিখেই ফেললাম। খালু শায়খুল হাদীসকে ভালোবাসতেন হৃদয় দিয়ে। হৃদয়ের গভীরতা দিয়ে। যুগের শ্রেষ্ট আলেমদের সর্ব শ্রষ্ট পদ্ধতিতে যে ভালোবাসতে হয়, এটা খালুকে দেখে অনুভব করতাম। শায়খুল হাদীসের প্রতি খালুর ভালোবাসা যতই দেখতাম, শিক্ষার খোরাক হতো।
তখন কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি আদায়ে বয়োজ্যেষ্ঠ শায়খুল হাদীস তরুণ্যের ভূমিকায় রাজপথে। খালুও টঙ্গী থেকে শায়খুল হাদীসের আহবানে মাঠে মায়দানে সরব। ঠিক সে সময়টাতে ফজরের নামায শেষে তা'লিমের পর এমন দিনটা দিন গত হতো না, যে দিন শায়খুল হাদীসের কোনো কীর্তি বা নতুন পদক্ষেপের কথা শুনাতেন না। আমরা ছিলাম ছোট। হৃদয় ছিল উর্বর। সিঞ্চণ উপযুক্ত ভূমির মত। সেই সময় থেকে শায়খুল হাদীসের প্রতি ভালোবাসার জন্ম। আজও আমি হৃদয়ের গভীরে শায়খুল হাদীসকে লালন করি। তাঁর রেখে যাওয়া অমর কারনামাগুলো স্বরণ করি। ভালোবাসি শায়খুল হাদীসকে। আল্লাহর রহম তার উপর অবধারিত। রহমানের কাছে এই আশা।
লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন
এসএস/