জামিল আহমদ
আলেম ও লেখক
রাসূল স. এরশাদ করেন, যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে এবং রমযানের রোযা রাখবে স্বীয় গুপ্তস্থানকে হেফাজত করবে ( পর্দা রক্ষা করে এবং ব্যভিচার থেকে বিরত থেকে) আর স্বামীর আনুগত্য করবে। এমন নারীর জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা মত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিযী ও তাবরানী)
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় মেয়েদের জন্য বেহেশত গমন খুবই সহজ। তবে অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন একবার ঈদুল ফিতরের দিন রাসূল (সঃ) ঈদগাহে গিয়ে উপস্থিত মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন; হে নারী সম্প্রদায়! দান খয়রাত কর কেননা আমাকে অবগত করানো হয়েছে দোজখের অধিকাংশ অধিবাসি তোমাদের নারী সম্প্রদায়রই হবে। (দীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ বুখারী-মুসলিম) উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসি হবে নারীজাতি থেকেই। অথচ প্রথমোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় মেয়েদের জন্য জান্নাতে গমন খুবই সহজ, কিন্তু তবুও কেন নারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ জাহান্নামে যাবে?
এই প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সঃ) বিভিন্ন হাদিসে নারীজাতির এ বিপর্যয়ের কারণ নির্ণয় এবং তার প্রতিকার বর্ণনা করেছেন। কয়েকটি কারণ নিম্মে উল্লেখ করা হলঃ আল্লামা হাফেজ শাহাব উদ্দীন যাহাবী (রহঃ) তার প্রসিদ্ধ কিতাব আলকাবায়ের এ একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন যাতে নারী শাস্তির ছয়টি দিক বর্ণনা করা হয়েছে।
হযরত আলী ও ফাতেমা (রাঃ) উভয়ে একদা রাসূল স. এর কাছে গিয়েছিলেন উদ্দেশ্য ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ করা। সেখানে গিয়ে রাসূল (সঃ) কে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পেলেন। ক্রন্দন তাদের উপর বিস্তার লাভ করল অতঃপর হযরত আলী রাসূল (সাঃ) এর কাছে ক্রন্দনের কারণ জানতে চাইলে রাসূল (সঃ) বললেন; মি’রাজের রাতে আমি উম্মতের নারীদেরকে জাহান্নামে বিভিন্ন ধরণের ভয়ংকর ও কঠিন আযাবে লিপ্ত দেখেছি যা স্মরণ করে আমি কাঁদছি।
নারী শাস্তির ছয়টি দিক অবহিত হওয়ার পর নবী কন্যা ফাতিমা রা. এ শাস্তির কারণ জানতে চেয়ে আরজ করলেন আব্বাজান! মহিলাদের এই ভয়াবহ শাস্তি ভোগের কারণ কি? উত্তরে মহানবী সা. এরশাদ করলেন;
নারী শাস্তির ১ম কারণঃ
যে মহিলা স্বীয় মাথার চুল দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় সাজা ভোগ করতে দেখেছিলাম তার এই শাস্তির কারণ হলো, সে চলার পথে পর পুরুষ থেকে নিজের চুলকে ঢেকে রাখতো না। নগ্ন মাথায় পর পুরুষকে দেখানোর জন্য চুল ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতো। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে মহিলাদেরকে মাথা ঘাড় ও বুক মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অথচ বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় মহিলারা মাথার চুলকে কত বাহারী প্রসাধনীতে রূপসজ্জায় সাজিয়ে নানা ঢংয়ে রাস্তায় বেপর্দা অবস্থায় চলাফেরা করছে। অথচ পর্দা সহকারে চলা, চুল ঢেকে রাখা সকল নারীর উপর ফরজ। তাই সকল নারীদের উচিৎ তারা যেন কঠোরভাবে পর্দার হুকুম মেনে ঘরে-বাইরে চলাফেরা করে নিজেদেরকে এই ভয়াবহ আযাব থেকে রক্ষা করে।
নারী শাস্তির ২য় কারণঃ
যে সকল মহিলাদেরকে স্বীয় জিহ্বা দ্বারা ঝুলন্ত অবস্থায় জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে দেখা গেছে, তাদের ঐ শাস্তির কারণ হলো তারা কথাবার্তায় স্বামীকে কষ্ট দিত তাদের জবান থেকে শাশুড়ি আত্মীয়-স্বজন এমনকি প্রতিবেশী পর্যন্ত নিরাপদ থাকতো না। অনেক মহিলা আছে যারা নামাযে কালামে খুবই পাকা কিন্তু মুখের বচন বিষের মত, এই শ্রেণীর নারীরা নামাযে পাকা পোক্ত হওয়া সত্ত্বেও কুরুচীপূর্ণ অশ্লীলভাষী হওয়ার কারণে জাহান্নামে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যাবে। রাসূল সা. এরশাদ করেন; মুসলমান হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যার হাত মুখ এবং আচরণ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। (মুসলিম)
নারী শাস্তির ৩য় কারণঃ
অবৈধ সম্পর্ক হচ্ছে নারী শাস্তির তৃতীয় কারণ। মহানবী সা. যে মহিলাকে স্তনে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন তার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন; ঐ নারী ছিল বিবাহিতা, সে বিবাহিতা হওয়া সত্ত্বেও তার সম্পর্ক ছিল পর পুরুষের সাথে। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে লজ্জাস্থান হেফাজতকারী মহিলাকে জান্নাতী বলে ঘোষণা করেছেন। (সূরা মু’মিনূন: ৫) অন্য আয়াতে যিনাকারী মহিলা এবং যেনার পরিবেশ সৃষ্টিকারীনী মহিলা সম্পর্কে কঠোর আযাব ও শাস্তির কথা ঘোষণা করেছেন। (সূরা নূর: ২) আজকের চলমান বিশ্বে নারী কেলেংকারীর নামে অনেক কিছুই ঘটে চলছে স্বামীর অনুপস্থিতিতে দেবর ও অন্যের সাথে অসংকোচে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে লজ্জাকে বিসর্জন দিয়ে আস্তে আস্তে অবৈধ সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হয়। এগুলো লজ্জাহীনতার ফসল।
নারী শাস্তির ৪র্থ কারণঃ
নারী শাস্তির চতুর্থ কারণ হচ্ছে বাদতে অনিহা। এ সম্পর্কে মহানবী এরশাদ করেন; জাহন্নামে স্বীয় পদযুগল বক্ষে এবং হস্তদয় কপালে স্থাপিত অবস্থায় সাজাপ্রাপ্তা মহিলারা দুনিয়ায় ফরজ গোসল এবং ঋতুবতী হওয়ার পরবর্তী পবিত্রতা অর্জনে উদাসীন ছিল। নামায যথারীতি পালন করা তো দূরের কথা বরং নামায বা অন্যান্য ইবাদত নিয়ে উপহাস করতো। গোসল ফরজ হওয়ার সাথে সাথে তা করে নেওয়াা উত্তম, অহেতুক অলসতা বসত দেরী করার দ্বারা কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং এটা হারাম। তদরূপভাবে ঋতুবতী মহিলার ঋতু¯্রাব বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে গোসল করে নেওয়া উচিৎ। অথচ আজকাল মহিলাদের মধ্যে এটা নিয়ে খুবই উদাসীন ভাব লক্ষ্য করা যায়। অনেক আগেই ঋতু¯্রাব বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও গোসল না করে বসে থাকে। এরই মধ্যে নামাযের ওয়াক্ত চলে যায়। নামায নিয়ে বিদ্রুপ করা এটা নারী শাস্তির অন্যতম কারণ। আজকের সমাজে দেখা যায় নামায মোটেই গুরুত্ব দিয়ে পড়ে না । নামাযের ওয়াক্ত চলে যায় তাদের কোন খবর থাকে না। কোন জায়গায় বেড়াাতে গেলে তো কথাই নেই, প্রসাধনী নষ্ট হওয়ার ভয়ে নামাজের কাছেই যায় না অথচ কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাযেরই হিসাব হবে। (তিরমিযী) রাসূলে কারীম বলেন; নামায হচ্ছে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে পার্থক্যকারী (বুখারী)। তাই সাবধান হে নারীগণ! নামাযকে গুরুত্ব সহকারে আদায় করুন।
নারী শাস্তির ৫ম কারণঃ
পরনিন্দা ও মিথ্যা হচ্ছে নারী শাস্তির পঞ্চম কারণ। মুখাকৃতি শুকর এবং শরীরের বাকী অংশ গাধার ন্যায় রূপান্তরিত আর অসংখ্য সাপ বিচ্ছু বেষ্টিত অবস্থায় শাস্তি ভোগকারীনি মহিলার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল সা. বলেন এ মহিলা পরনিন্দা ও মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত ছিল। পরনিন্দা ও মিথ্যা বলা মহাপাপ। পবিত্র কুরআনে পরনিন্দাকে মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে অতএব সকলকে মিথ্যা, পরনিন্দা ও চোগলখুরী থেকে বাঁচা আবশ্যকীয়।
নারী শাস্তির ৬ষ্ঠ কারণঃ
হিংসা ও খোটা দেওয়া। রাসূল স. জাহান্নামের যে মহিলাকে মুখচ্ছবি কুকুর আকৃতির ও তার মুখে আগুন ঢুকে মলদ্বার দিয়ে বের হতে দেখেছেন সে ছিল হিংসুক ও খোটা প্রদানকারীনি।
এসএস/