সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর : মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ে কাতারের প্রতি সৌদি আরবের দাবি-দাওয়া দেখে কিছুটা বোকা হয়ে গেলাম। সৌদির অন্যতম দাবির মধ্যে রয়েছে— কাতার নিয়ন্ত্রিত আলজাজিরা টেলিভিশন, আলআরাবি টেলিভিশিন, আলআরাবি আলজাদিদ পত্রিকা, হাফিংটন পোস্টের আরবি সংস্করণ, মিডলইস্ট আই এবং আরবি ২১টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিতে হবে! কী বাচ্চাসুলভ দাবি-দাওয়া...!
আরবের অধিকাংশ শাসকই একনায়কতন্ত্রী। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব কখনো তাদের একনায়কতন্ত্রে বাগড়া দিতে যায়নি। একনায়কতন্ত্র যদি আরবের সমৃদ্ধি এবং মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় ও সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে, কেউ আরব শেখদের বাগানবাড়িতে বাগড়া দিতে যাবে না। কিন্তু নিজেদের মসনদ রক্ষায় সামান্য দুশ্চিন্তার কারণে যদি সংবাদমাধ্যমের ওপর ধারালো খড়গ চালাতে চান, বিশ্ব মুসলিমের ভয়েস অব ট্রুথ’-এর গলা চেপে ধরতে চান—সেটাকে নিজের পায়ে কুড়াল মারা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে?
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অস্থিরতায় সৌদি এবং আমিরাত জোটের অন্যতম এলার্জি হলো বিশ্বনন্দিত টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরা। তাদের দাবি— কাতার নিয়ন্ত্রিত আলজাজিরা চ্যানেল বন্ধ করে দিতে হবে। আলজাজিরা কেন বন্ধ করে দিতে হবে? তার কিছু সম্ভাব্য কারণ—
কাতারে সেনা মোতায়েন করবে তুরস্ক
১. কারণ আলজাজিরা বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ের রক্তাক্ত মানচিত্র ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলে—
২. আলজাজিরা মায়ানমার, সিরিয়ান রিফিউজি, ইরাকি রিফিউজি, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগান, নিপীড়িত কাশ্মিরের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলে বলে—
৩. আলজাজিরা চ্যানেল বিবিসি, সিএনএন, এপি, এএফপি, রয়টার্সের মতো পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমকে মুসলিম বিশ্বে অপাংক্তেয়-মিথ্যাবাদী বানিয়েছে বলে—
৪. মুসলিম বিশ্বের যেকোনো খবরের ব্যাপারে পৃথিবীর মানুষ সর্বপ্রথম আলজাজিরাকে বিশ্বাস করে বলে—
৫. আলজাজিরা আরব বসন্তের সময় থেকে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের খবর প্রচার করেছিলো বলে—
৬. অারব বিশ্ব নিয়ে আলজাজিরা সবসময় সত্য উচ্চারণ করে বলে—
৭. অালজাজিরা ইসরাইল এবং বিশ্বব্যাপী ইহুদি আধিপত্যের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভাষায় সংবাদ প্রকাশ করে বলে—
৮. সত্য প্রকাশে আলজাজিরা কোনো প্রেসিডেন্ট, বাদশাহ, আমির, শেখের প্রভাবকে পরোয়া করে না বলে—
৯. আলজাজিরা Is the Middle East Trump's new playground? অথবা Five Years Into the Arab Spring: Achievements, Failures and Future Scenarios এ ধরনের নিউজ করে বলে—
—এবং কাতার সরকারের দোষ হলো, তারা এসব ‘অপরাধে’ অপরাধী আলজাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলকে মিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিয়ে তাদের দেশ থেকে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
চলমান অস্থিরতা বিষয়ে আরও কিছু দ্বিপাক্ষিক বিবদমান বিষয় রয়েছে, তবে আলজাজিরাসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের ওপর সৌদি ও আমিরাত জোটের এই রোষানল পুরো মুসলিম বিশ্বের কাছে তাদের ভিলেইন বানিয়ে ছাড়বে। এই ভ্রাতৃঘাতী সিদ্ধান্তের সু-সমাধান হোক—এটাই আমাদের কাম্য!
তবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তুরস্ক এবং প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানকে, এই দুঃসময়ে কাতারের পাশে দাঁড়িয়ে সত্য উচ্চারণের জন্য এবং কাতারের যেকোনো বিপদে সামরিক শক্তি নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর সাহসী ঘোষণা দেয়ার জন্য।
-এআরকে