মিতুল আর হোসাইন
মোবাইলের এলার্ম বেজে উঠলো। এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তামান্না'র। চোখ কচলিয়ে মোবাইলের স্কীনে চোখ পড়তেই লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়লো। এইযা! সকাল দশটায় ক্যাম্পাসে যেতে হবে। ৯টা বাজে এখন। তড়িঘরি করে রেডি হয়ে রওয়ানা হলো। বাস ভর্তি লোকজন। একটু বসতেও পারছে না। গন্তব্যে চলে এসেছে গাড়ি।
তামান্না গাড়ি থেকে নামতেই একটি ট্রাক এসে ধাক্কা দেয় তামান্নাকে। চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারায় তামান্না। কিছুক্ষন পর জ্ঞান ফিরলে তামান্না দেখতে পায় তাকে ঘিরে আছে লোকজন। একটু ঘার নারতেই দেখতে পেল রক্তাক্ত একটি মেয়ের বডি পরে আছে। একি! এতো দেখছি আমারই লাশ। কিছুই বুঝতে পারছিলা তামান্না। লোকজন ধরাধরি করে লাশটাকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দিলে, তামান্নাও কোন মস্তিষ্কে পুলিশের গাড়িতে বসে পরলো তা সে নিজেও টের পায়নি। গাড়িতে উঠার পর পুলিশদের একে অপরের কথা শুনে তামান্না বুঝতে পারলো যে, সে আর দুনিয়াতে বেঁচে নেই।
তামান্না'র লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হলো। লাশটির পাশেই বসে বসে ভাবছে তামান্না। হঠাৎ তামান্না দেখতে পেল, তার মা,বাবা, ছোট বোন অধরা এবং ভার্সিটির বন্ধু বান্ধব সবাই লাশের পাশে এসে হাউমাউ করে কাদতে শুরু করে। তামান্না তার কাছে যায়, বলতে থাকে মা,মা,ওমা মাগো,,, কিন্তুু না! তামান্না র ডাক তার মা শুনতে পায়না। বাবার কাছে যায়, বাবাকে ডাকে, কিন্তুু বাবাও শুনতে পায়না তামান্না র আকুতি ভরা কন্ঠে বাবা,বাবা ডাক। কেমন যেন পাশান হৃদয়ের মানুষ তার বাবা। এভাবে বোনকে ডেকেও যখন সাড়া পায়না, তখন বুঝতে পারলো তার কথা পৃথিবীর মানুষ আর কখনোই শুনবেনা। লাশ বাড়িতে নিয়ে আশা হলে তামান্না দেখলো তার দাদী মারা যাবার পর বাড়িতে যা যা হয়েছিল, ঠিক তাই ঘটছে আজ। তামান্না খুব ভয় পেয়েছে।
লাশ কবরে নেয়ার জন্য যখন লোকজন খাট নিয়ে আসলো। ভীষণ ভয়ে কাতর হয়ে আছে তামান্না। এই খাটে করে তার দাদীকে কবরস্থানে নেয়া হয়েছিল। আজ তাকে নিবে এটা ভাবতেই খুব ভয় হচ্ছিলো তামান্না র। বাড়ি ভর্তি পারার লোকজন। লাশ গোসল করানোর পর কাফনে মুরিয়ে দিল। মহিলারা এসে দেখে যাচ্ছে তামান্না র লাশের মুখ। এদিকে মা,বোন কাদতে কাদতে বেহুঁশ হওয়ার অবস্থা। . এই পরিস্থিতি এবং তাকে কবরে নেয়া হবে, ভাবতেইই শরীর শিউরে উঠেছে তামান্না র। তামান্না র বাবা, চাচাতো ভাইয়েরা লাশবাহীনি খাট কাধে তুলে কবরস্থানের দিকে রওয়ানা দিল। তামান্না যেতে না চাইলেও তাকে যেতে হচ্ছে।
দাদির কবরের পাশেই তামান্না’র কবর খনন করা হয়েছে। কবরে চোখ পরতেই ভয়ে আঁতকে উঠে তামান্না। হাতে হাতে লাশ কবরে নামানো হলো। এদিকে বাশেঁর টুকরো আর বাশেঁর বেরা দিয়ে কবর ডেকে মাটি দেয়া শুরু হয়েছে। কবর আস্তে আস্তে অন্ধকার রুপ ধারন করছে। তামান্না হাউমাউ করে চিৎকার করে করে কাঁদছে। কিন্তুু কেউ শুনছে না তামান্না র কান্নার আওয়াজ। লোকজন কবর থেকে দূরে যেতেই তামান্না দেখতে পেল মুনকার নাকিরে ফেরেস্তা হাজির।
তামান্না কে জটপট তিনটি প্রশ্ন ছুড়ে দিল। বলো, তোমার রব কে? তোমার দীন কি? তোমার নবী কে? দৈনিক ৫ওয়াক্ত নামাজে ৩৫২বার 'রব ' শব্দটি উচ্চারিত হয়। ৫ওয়াক্ত দূরের কথা ,তামান্না এক ওয়াক্ত নামাজও পরতো না। জীবনে কোনদিনও ওয়াজ মাহফিলে যায়নি , মোটকথা ধর্মের কথা শুনেনি। আর নবী সাঃ এর আদর্শ, তার সুন্নত জীবনেও পালন করেনি। তাই তামান্না তিনটি প্রশ্নের একটিরও জবাব দিতে পারেনি।
চারিদিকে অন্ধকার। হঠাৎ তামান্না খেয়াল করলো নরম কিছু একটা তাকে পেচিয়ে ধরছে। ঘাড়ের দিকে কিছু একট বেয়ে বেয়ে যাচ্ছে। তামান্না র বুঝতে আর বাকি রইলোনা যে, তার শরীর সাপে পেচিয়ে ধরেছে, আর ঘাড়ের দিকে বিচ্ছু। সাপ আর বিচ্ছুর ধংসনে তামান্না চিৎকার করছে। শুধু আজাব আর আজাব , চিৎকার আর চিৎকার। তামান্না র মৃত্যুর একদিন পর তামান্না র ছোটবোন অধরা তামান্না কে স্বপ্নে দেখলো, দেখলো তামান্না র আজাবের ভয়াবহতা।
অধরা স্বপ্নের কথা জানালো আার মা বাবা কে। মা বাবা কবরের আজাব থেকে মেয়েকে মুক্ত করার জন্য যা যা করা দরকার করলেন। দোয়া,দান সদকা, এতিম খাওয়ানো, নিজেরাও পরিবর্তন আনলো ঈমান আমলের। . তামান্না র কবরের আজাব ক্ষমা করে দেয়া হলো। কিন্ত একটা কারণে আজাব বন্ধ হচ্ছেনা। তামান্না ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করে এর কারণ।
ফেরেশতা বলে তোমার সব গূনাহ ক্ষমা কর দেয়া হয়েছে, একটি গূনাহের কারনে আজাব ক্ষমা হচ্ছে না, আর তা হলো, দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় তুমি ফেইসবুকে তোমার বেপর্দা ছবি আপলোড দিতে, তোমার সেই ছবির দেখে আজও কত যুবক জাহান্নামী হচ্ছে। তুমি কি জানতে না, যে, একবার বেপর্দা হলে কমপক্ষে ৭ হাজার বছর জাহান্নাম। তামান্না’র ফেইসবুক পাসওয়ার্ড অন্য কেউ জানতো না, তাই ছবিগুলো ডিলিট করা হয়নি। তাই আজাব আর বন্ধ হলো না।
কিরে, আর কত ঘুমাবি, ৯টা বাজতে চললো। মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো তামান্না’র। ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলিয়ে মোবাইলটা হাতে নিল। রাতের দেখা স্বপ্নে বেশ ভয় পেয়েছে তামান্না। মোবাইল নিয়ে ফেইসবুক আইডি লগইন করলো। একে একে ডিলিট করে দিল আপলোডকৃত সমস্ত ছবি।
এসএস/