রংপুরে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও অন্য কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে অস্ত্রের ভুয়া লাইসেন্স প্রদান করার অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েরই এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে ।
অভিযোগ রয়েছে ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সামসুল ইসলাম নামে ওই অফিস সহকারী কয়েকশ’ ভুয়া লাইসেন্স প্রদান করেছেন। প্রতিটি লাইসেন্সের জন্য তিনি ৫ থেকে ১০ লাখ করে টাকা নিতেন। টাকা পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে দিতেন ভুয়া লাইসেন্স।
এদিকে, তার অফিসের আলমারি তল্লাশি করে নগদ ৭ লাখ টাকা, ১১ লাখ টাকার এফডিআর ও দুই লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্রসহ ১৫ টি ভুয়া লাইসেন্স জব্দ করা হয়েছে। ডিসি অফিসের জিএম শাখা সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় বরখাস্ত করা হয়েছে শামসুল ইসলামকে। এ ব্যাপারে গত ১৮ মে কোতয়ালী থানায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা অমূল্য চন্দ্র রায় বাদী হয়ে সামসুল ইসলামের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। মামলা দায়েরের পর থেকে সামসুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।
পুলিশ ও দুদক কর্মকর্তারা তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। গত ১৬ মে রংপুরের জেলা প্রশাসক একটি মাধ্যম থেকে সামসুল ইসালামের বিরুদ্ধে অস্ত্রের ভুয়া লাইসেন্স প্রদানের অভিযোগ পান। এরপর খোঁজ খবর নেয়া শুরু হলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
এ ব্যাপারে রংপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অফিস সহকারী সামসুল ইসলাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে গুরুতর অপরাধ করেছেন। তার অফিসের আলমারি থেকে নগদ ৭ লাখ টাকা, ১১ লাখ টাকার এফডিআর ও দুই লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্রসহ ১৫ টি ভুয়া লাইসেন্স জব্দ করা হয়েছে। ডিসি অফিসের জিএম শাখা সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রতিটি ভুয়া লাইসেন্সের বিপরীতে সামসুল ইসলাম ন্যূনতম ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। একটি সিন্ডিকেট এই ভুয়া লাইসেন্সের অস্ত্রগুলো অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য নিয়েছে। যা রংপুরসহ সারাদেশে সন্ত্রাস ও গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার হতে পারে।
জেলা প্রশাসক জানান, এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনার, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে বার্তা পাঠানো হয়েছে। মোট কতটি ভুয়া লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রবিউল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভুয়া লাইসেন্স প্রদান করে তিনি ২০০ কোটি টাকারও বেশি অবৈধভাবে আয় করেছেন।
স্বাক্ষর জাল করে দেয়া অস্ত্রের লাইসেন্সগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের শেখ জহুরুল ইসলামকে দেওয়া একটি .৩২ বোর পিস্তল। অস্ত্রটি তিনি ক্রয় দেখিয়েছেন মেসার্স মাহবুব আর্মস কোং লিমিটেড, গনেশতলা দিনাজপুর থেকে। লাইসেন্স নেয়ার সময় তিনি রংপুর মহানগর শালবন এলাকার সোনালি এন্টারপ্রাইজের ঠিকানা দিয়েছেন। কিন্তু সেটা ছিল ভুয়া।
এ ছাড়াও রংপুরের বদরগঞ্জের দামোদারপুর এলাকার রাজু আহমদের ছেলে সুমন আলীকে ২০০৬ সালে একটি ১ নলা বন্দুকের লাইসেন্স দেয়া হয়। অন্যদিকে রংপুরের তারাগঞ্জের ইকরচালী গ্রামের মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের পুত্র মনোয়ারুল ইসলামকে ২০০৯ সালে একটি এক নলা বন্দুকের লাইসেন্স দেয়া হয়। এই তিনটি লাইসেন্সই দেয়া হয় জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের স্বাক্ষর জাল করে।
সামসুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর গত ১৮ মে জিএম অফিসে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। ওই দিনই সামসুল ইসলামের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন এবং সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার বিষয়ক আইনে দু’টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। দুদকও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
জানা যায়, গত ১৫ দিন আগেও সামসুল ইসলাম রংপুর মহানগরীর খোর্দতামপাট মধ্যপাড়া এলাকায় ১ কোটি টাকা দিয়ে ১ একর জমি ক্রয় করেছেন। এছাড়া নগরীর সরেয়ার তল এলাকায় তার একটি বিলাসবহুল তিনতলা বাড়ি আছে।
এসএস/