শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

ইসলামই দিয়েছে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের পূর্ণ সম্মান এবং অধিকার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাফসা ইসলাম
গল্পকার ও প্রাবন্ধিক

সিরিয়া হতে পরাজিত ও বিতাড়িত রোমক সৈন্যরা তাদের তৎকালীন শক্ত ঘাঁটি মিশরের রাজধানী আলেকজান্দ্রিয়ায় গিয়ে অবস্থান নেয়। মুসলমানদের অগ্রাভিযান রুখে দেওয়ার জন্য তারা এখানে তাদের সকল শক্তি কেন্দ্রীভূত করে।

কিন্তু অদম্য সাহাসী মুসলিম সেনাপতি হজরত আমর ইবনে আ’স (রা) এখানেও তাদের সম্মিলিত শক্তি গুড়িয়ে দেন এবং অধিকৃত শহরের শাসনভারের দায়িত্ব নিজের হাতে নেন। তিনি সেখানকার খৃস্টান প্রজাদেরকে তাদের যাবতীয় ধর্মীয় কর্মকান্ডে পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন।

একদিন সকালবেলা আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রিষ্টান পল্লীতে হইচই পড়ে গেল। সবাই দেখা গেল বাজারে জটলা হয়ে আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে। সেখান থেকে খ্রিস্টানদের স্থানীয় আর্চবিশপ আমর ইবনে আ’স এর বাসভবনে গেলেন বাজারের ঘটনা অবহিত করার জন্য। তাঁর সাথে আরও অনেকেই গেলেন।

সেখানে গিয়ে বিশপ জানালেন, কেউ একজন বাজারের যিশু খ্রিষ্টের মার্বেলের মূর্তির নাক গত রাতে ভেঙে ফেলেছে। এ মূর্তিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের জন্য। খ্রিষ্টানরা ধরে নিয়েছে যে এটা মুসলমানদের কাজ। তারা উত্তেজিত হয়ে উঠেছে।

আমর ইবেন আ’স এ কথা শুনে অত্যন্ত দু:খিত হলেন। তিনি বললেন, “আমি খুবই লজ্জিত, ব্যথিত। সত্যি কথা, ইসলামে মূর্তিপূজা জায়েজ না। কিন্তু, অন্য ধর্মের উপাস্যকে গালি দেয়া পর্যন্তও হারাম। প্লিজ, আপনি মূর্তিটা পুননির্মাণ করে নিন। আমি পূর্ণ খরচ দেব।”

কিন্তু বিশপ বললেন, “এ মূর্তি রিপেয়ার করা যাবে না।”

আ’স বললেন, “তবে নতুন করে বানান। আমি খরচ দেব।”

“না, সেটাও হবে না। আপনি জানেন, যীশু ঈশ্বরপুত্র। তাঁর মূর্তির এমন অবমাননা সহ্য করা যায় না। একটাই ক্ষতিপূরণ, আমরা আপনাদের মুহাম্মাদ (স) এর মূর্তি বানিয়ে সেটার নাক ভাঙব।”

রাগে জ্বলে গেল আ’স এর গা। তিনি কিছুক্ষণ নীরব থেকে খ্রিষ্টান বিশপকে বললেন, “আপনি যা বললেন সেটা সম্ভব না। আমাদের সম্পদ, পরিবারের চেয়েও মুহাম্মাদ (স) কে বেশি ভালবাসি। আমার অনুরোধ, এ প্রস্তাব ছাড়া অন্য যেকোনো প্রস্তাব করুন আমি রাজি আছি। আমাদের যেকোনো একজনের নাক কেটে আমি আপনাদের দিতে প্রস্তুত, যার নাক আপনারা চান।”

খ্রিষ্টান নেতারা সবাই এ প্রস্তাবে সম্মত হলো।

পরদিন খ্রিষ্টান ও মুসলমান বিরাট এক ময়দানে জমায়েত হলো। মিসরের শাসক সেনাপতি আমর রা: সবার সামনে হাজির হয়ে বিশপকে বললেন, “এ দেশ শাসনের দায়িত্ব আমার। যে অপমান আজ আপনাদের, তাতে আমার শাসনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই এই তরবারি গ্রহণ করুন এবং আপনিই আমার নাক কেটে দিন।”

[ওরা মদীনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষুদ্র ইসলামী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়]

এ কথা বলেই বিশপকে একখানি ধারালো তরবারি হাতে দিলেন, বিশপ সেটা পরীক্ষা করলেন। জনতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, খ্রিষ্টানরা স্তম্ভিত। চারদিকে থমথমে ভাব। সে নীরবতায় নি:শ্বাসের শব্দ করতেও যেন ভয় হয়।

হঠাৎ সেই নীরবতা ভঙ্গ করে একজন মুসলিম সৈন্য এগিয়ে এলো। চিৎকার করে বলল, “আমিই দোষী, সেনাপতির কোনো অপরাধ নেই। আমিই মূর্তির নাক ভেঙেছি। এইত, আমার হাতেই আছে সে নাক। তবে মূর্তি ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। মূর্তির মাথায় বসা একটি পাখির দিকে তীর নিক্ষেপ করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।”

সৈন্যটি এগিয়ে এসে বিশপের তরবারির নিচে নাক পেতে দিল। স্তম্ভিত বিশপ! নির্বাক সবাই। বিশপের অন্তরাত্মা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল।

তরবারি ছুড়ে বিশপ বললেন, “ধন্য সেনাপতি, ধন্য হে বীর সৈনিক, আর ধন্য আপনাদের মুহাম্মদ (সা:), যার মহান আদর্শে আপনাদের মতো মহৎ উদার নির্ভীক ও শক্তিমান ব্যক্তি গড়ে উঠেছে। যীশু খ্রিষ্টের প্রতিমূর্তিই অসম্মান করা হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চেয়েও অন্যায় হবে যদি অঙ্গহানি করি।”

শিক্ষাঃ ইসলাম যে বিজয়ী অবস্থায় ও অমুসলিমদের অধিকার সংরক্ষণ করে, এ ঘটনা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ভারতবর্ষে আটশত বছর এবং স্পেনে আটশ বছর ইসলাম শাসন চালু ছিল।

অথচ ইসলামী শাসনের পতনের পর এই দুটি দেশে অমুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বহাল রয়েছে। এ থেকেও প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম শাসকরা অমুসলিমদের ওপর দমননীতি চালিয়ে নিজেদের শাসন পাকাপোক্ত করার কোন চেষ্টা করে নি। করলে এত দীর্ঘকাল পরেও অমুসলিমদের অস্তিত্ব থাকতো না।

লেখিকার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে।

[পরিবার পরিজন ও দরিদ্র আত্মীয় স্বজনকে দান করাও আল্লাহর পথে দানের শামিল]

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ