নরসিংদীর গাবতলীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটিতে আটকা পড়া একজন দাবি করছেন, তিনি স্থানীয় একটি মাদরাসার শিক্ষার্থী। তার নাম মাসুদুর রহমান। ঘিরে রাখা বাড়িতে তিনি গিয়েছিলেন তার এক স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে। ওই বাড়িতে তার সঙ্গে আটকে পড়া বাকিদের কেউ জঙ্গি নয় বলেও দাবি তার।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় তিনি বলেন, বাড়ির ভেতরে কোনও অস্ত্র নেই। আস্তানার বাইরে সাংবাদিকদের কাছে একই ধরনের কথা বলেছেন মাসুদুর রহমানের দুলাভাই আজহার ইবনে মাহবুব। তিনি বলছেন, প্রাইভেট পড়তেই মাসুদ গিয়েছিল ওই বাড়িতে।
তবে র্যাব দাবি করছে, সিলেটের জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে জঙ্গিদের যে গ্রুপটি ছিল, তাদেরই কিছু সদস্য রয়েছে নরসিংদীর এই আস্তানায়। র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান আস্তানার সামনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বাড়িটির মধ্যে মাসুদের সঙ্গে আর কারা আছে, জানতে চাইলে আজহার ইবনে মাহবুব বলেন, ‘জাফর নামে একজনের কাছে মাসুদ প্রাইভেট পড়তে শুরু করেছে দুয়েক মাস হলো। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন। ইংরেজিতে তিনি ভালো বলে শুনেছি। এছাড়া ওই মেসে যারা থাকেন, তারাই ভেতরে আছেন।’
পরে বাড়ির ভেতরে আটকা পড়া মাসুদুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন সাংবাদিকরা। এসময় মাসুদ বলেন, ‘আমি স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তেছিলাম। হঠাৎ শুনতে পাই, বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে। দরজা লাগিয়ে দিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় সার্চ করতেছিল। হঠাৎ একজন এসে বাইরে থেকে জিজ্ঞাসা করে ভেতরে কয়জন আছে। আমরা বলছি। এরপর তারা চলে যায়। তাদের কাউকে আর দেখতে পাই নাই। দরজা ভেতর থেকে খোলা আছে, বাইরে থেকে লাগিয়ে দেওয়া।’ ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সদস্য প্রবেশ করেননি বলেও জানান মাসুদ।
ভেতরে কারা আছেন, জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, ‘আমরা ৫ জন আছি। আমি মাসুদুর রহমান, সালাউদ্দিন ভাই, আবু জাফর ভাই, নাসিকুল ইসলাম ভাই ও মশিউর রহমান- এই পাঁচ জন আছি।’ মাসুদ জানান, আবু জাফরের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার, সালাহউদ্দিনের বাড়ি নরসিংদীর চলদিঘলদী, নাসিকুল ইসলামের বাড়ি নরসিংদী সদর ও মশিউর রহমানের বাড়ি গাজীপুর বোর্ড বাজারে।
বলা হচ্ছে ভেতরে অস্ত্র থাকতে পারে। এখানে কি কোনও অস্ত্র আছে নাকি আপনারা আত্মসমর্পণ করতে চান, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনও অস্ত্র নেই। আপনারা চাইলে এসে দেখতে পারেন। আত্মসমর্পণ না, আপনারা যা করতে বলবেন আমরা তাই করব। আমরা রাজি আছি। আমরা আগেও বলেছি যে আমাদের কাছে কোনও অস্ত্র বা কোনোকিছুই নেই। আমরা ছাত্র। আমরা পড়ালেখা করতে এসেছি। এখন আপনারা চাইলে আমরা নিজেরা দরজা খুলে হাত তুলে আপনাদের কাছে সারেন্ডার করতে রাজি আছি। কোনও অস্ত্র নাই, আমি কসম খেয়ে বলছি।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণের আহ্বান করা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, ‘জ্বি না, বলে নাই।’
এদিকে, র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত কিছুদিনে জঙ্গিরা আবার কয়েকটি জায়গায় সংগঠিত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছে। সেসব জায়গায় অভিযান চালিয়েছে র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এর মধ্যে সিলেটের আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানাতেও বেশ কয়েকদিন ধরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই অভিযান থেকে বেশকিছু তথ্য আমাদের কাছে আসে। আমরা সেসব তথ্য নিয়ে কাজ শুরু করি। ওই আস্তানার জঙ্গিদের সঙ্গে আর কারা জড়িত ছিল, তা জানতে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াই। আমরা নিশ্চিত হই যে তাদের কিছু সদস্য আছে, যারা ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং ঢাকার কোনও এক জায়গায় অবস্থান করছে। গোয়েন্দা তথ্য থেকে আমরা নিশ্চিত হই যে তারা এখানেই অবস্থান করছে। আমরা জেনেছি, তাদের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক রয়েছে। এই তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরই আস্তানাটি ঘিরে ফেলা হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। আমরা তাদের আত্মসমর্পণের অনুরোধ করব।
আস্তানায় কয় জন আছে, সে প্রসঙ্গে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘আমাদের ধারণা ভেতরে ৪-৫ জন অবস্থান করছে। আরও সময় গেলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
জঙ্গিদের পরিচয় সম্পর্কে মুফতি মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল, আতিয়া মহলে যে জঙ্গিরা ছিল তাদেরই কয়েকজন সদস্য ঢাকার দিকে আসছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই আজকের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে আতিয়া মহলে যেসব জঙ্গিরা ছিল, তাদেরই কিছু সদস্য এখানে আছে।’
উল্লেখ্য, শনিবার বিকাল ৪টা থেকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে নরসিংদীর ওই বাড়িটি ঘিরে রেখেছে র্যাব-১১-এর একটি দল। আস্তানায় ৫-৬ জন রয়েছে বলে ধারণা করছে র্যাব। সোমবার সকালে অভিযানটি পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান। সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন।
এসএস/