সৌদি আরব: মরুভূমির দেশ সৌদি আরবের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের পাশাপাশি এবার অনার্স করার সুযোগ করে দিচ্ছে দেশটির সরকার।
শিক্ষা নিয়ে এমন নতুন চিন্তা-ভাবনার কথা জানিয়েছেন দেশটির শিক্ষামন্ত্রী আহমেদ আল-ইসা। খবরটি প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেট।
জানা যায়, সৌদি বাদশার পৃষ্ঠপোষকতায় গত মাসে উচ্চশিক্ষার বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের শিরোনাম ছিল- ‘সৌদি ইউনিভার্সিটি এবং ভিশন ২০৩০: জ্ঞানই আগামীর প্রেরণা।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সামলান। তিনি একই সঙ্গে দ্বিতীয় উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
এদিকে সৌদি আরবের কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে বিদেশী শিক্ষার্থীদের।
এ ছাড়া অন্যান্য দেশের মতা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যও সৌদি আরব হতে পারে উচ্চশিক্ষার আদর্শ স্থান। কারণ একই মহাদেশে অবস্থিত দুটি মুসলিম দেশের ধর্মীয়, সামাজিক ও সংস্কৃতির অনেক মিল থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা সৌদিতে পড়াশুনা করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারেন।
প্রসঙ্গত, এক সময় সৌদি আরবের শিক্ষা ব্যবস্থায় ততটা উন্নত ছিল না। কিন্তু বিগত ১০/১৫ বছর ধরে দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নতি সাধন হয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও সৌদিআরব খুব শক্তিশালী হওয়ার কারণে শিক্ষা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে দেশটির সরকার।
অন্যদিকে প্রয়াত বাদশা আব্দুল্লাহর শাসনামলে সৌদি আরবের শিক্ষা খাতকে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হয়। এ সময় কোটি কোটি ডলার বিনোয়োগ করে এ খাতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যা আজকে শিক্ষা খাতের এই উন্নয়নের ধারা বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজও অব্যাহত রেখেছেন।
সৌদিআরবে প্রায় ৩০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থিত উম্মুল ক্বুরা ইউনিভার্সিটি, পবিত্র মদিনা শরিফে অবস্থিত মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রিয়াদে অবস্থিত কিং সউদ ও আল-ইমাম ইউনিভার্সিটি ইসলামী শিক্ষার জন্য বিখ্যাত।
এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেক বছর শত শত শিক্ষার্থীদের স্কলারশীপ দিয়ে থাকে।
এগুলো হল- কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি (KAU), কিং ফাহাদ পেট্রলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল ইউনিভার্সিটি (KFPMU), কিং আব্দুল্লাহ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (KAUST), কিং সউদ ইউনিভার্সিটি (KSU), দাম্মাম ইউনিভার্সিটি (UOD), কিং ফয়সাল ইউনিভার্সিটি (KFU), কিং খালেদ ইউনিভার্সিটি (KKU), নাজরান ইউনিভার্সিটি (NU)গুলোর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিষয়সমূহে উচ্চশিক্ষায়।
এ ছাড়াও সৌদি আরবের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য আলাদা ক্যাম্পাস রয়েছে। আর ছেলেদের মতো সকল সুযোগ-সুবিধা মেয়েরাও আলাদাভাবে ভোগ করেন। তবে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্যও রয়েছে কয়েকটি ইউনিভার্সিটি।
এগুলো হল- রিয়াদের প্রিন্সেস নওরাহ ইউনিভার্সিটি ও মদিনা শরিফের আত তাইবাহ ইউনিভার্সিটি বেশ বিখ্যাত।
জেদ্দায় অবস্থিত কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি ২০১৬ সালে টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাংকিং অনুযায়ী আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থান অর্জন করেছে। বর্তমানে স্কলারশিপের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানায়, বর্তমান সেশনে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটা দেশের শিক্ষার্থীরা কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর শিক্ষাথীদের স্কলারশিপ নিয়ে এখানে পড়ার সুযোগ আছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট স্টাডিজ এর ডীন প্রফেসর ড. সউদ মোহাম্মদ আল সুলামী বলেন, আমরা এখানে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্রদের সম্মানজনক স্কলারশীপ অফার করে থাকি। এখানে মান সম্মত ও উন্নত পরিবেশে বিশ্বের মেধাবী শিক্ষার্থীরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন বিভাগে মাস্টার্স-পিএইচডি করার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া মেডিক্যাল কলেজ, আরবিসহ আরো বেশকয়েকটি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের সুযোগ রয়েছে মরুভূমি ঘেরা এই দেশটিতে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। আমরা চাই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এখানে আসুক এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তারা অবদান রাখুক।
সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করার নিয়মাবলী ও করণীয়- আলিম অথবা সমমান পরীক্ষার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট নির্ভরযোগ্য অনুবাদ সেন্টার থেকে আরবিতে অনুবাদ করার পর নোটারী পাবলিক করে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক
শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক সত্যায়িত করার পর পর্যায়ক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশে অবস্থিত সৌদি দূতাবাস হতে সত্যায়িত করতে হবে।
চারিত্রিক সনদপত্র (প্রতিষ্ঠানের প্রশংসাপত্র) নির্ভরযোগ্য অনুবাদ সেন্টার থেকে আরবিতে অনুবাদের পর নোটারী পাবলিক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে সত্যায়িত করতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট আরবিতে অনুবাদ করার পর নোটারী পাবলিক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে।
মেডিকেল সার্টিফিকেট আরবিতে অনুবাদ করার পর নোটারী পাবলিক করে (প্রয়োজনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে সত্যায়িত করতে হবে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে।
তাজকিয়া (প্রশংসাপত্র) ২টি, (যে কোনো দু’জন প্রসিদ্ধ আলেম অথবা যে কোনো দু’জন গেজেটেট কর্মকতা হতে হবে) যা আরবিতে হতে হবে। এরপর নোটারী পাবলিক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে।
পাসপোর্ট এর কপি। ছবি (চশমা ও টুপিবিহীন)।
এসব কাগজ সংগ্রহ করে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে পাঠাতে হবে।
প্রার্থীকে অবশ্যই পাসপোর্ট ও সার্টিফিকেটের বয়স অভিন্ন ও ২৫ বছরের মধ্যে থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই সৌদিআরবে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে তেমন কিছু জানেন না। অনেকে মনে করেন, সৌদিআরবে শুধু ইসলামী শিক্ষার স্বর্গরাজ্য। আসলে তা কিন্তু নয়। এখানে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়েও পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
আধুনিক ক্লাসরুম, সু-পরিসর ক্যাম্পাস, অত্যাধুনিক লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি, উন্নত হোস্টেল ব্যবস্থা ও গবেষণা উপযোগী সুন্দর পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে।
এসএস/