রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


যেমন কাটছে রানা প্লাজার রেশমার জীবন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিস্ময় কন্যা রেশমা। দেশজুড়ে আলোচিত এক নাম। যার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির করুণ কাহিনী। দীর্ঘ ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবন্ত উদ্ধার হওয়া সালমা বিশ্ব মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেন। সেই ট্র্যাজেডির চার বছর পেরিয়েছে। সালমা পেয়েছেন চাকরি। পেতেছেন সংসার। স্বামী রাব্বী ও কন্যা রেবাকে নিয়ে তার সুখের সংসার। মা রেশমা বেগম ও বাবা আতাউর রহমান রাব্বীর নয়নের মণি কন্যা রেদওয়ানা ইসলাম রেবা। সোমবার রেবার বয়স ১ বছর দেড় মাস।  তবে রেশমা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কর্মস্থল রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে কাজে ব্যস্ত থাকায় সন্তানকে এসময় মিস করেন তিনি।

রাব্বী বলেন, এখন রেবাই আমার ও রেশমার মধ্যমণি। তাকে ঘিরেই আমাদের স্বপ্ন। মা যখন কাজে যায় তখন বাসার মধ্যবয়সী কাজের মহিলার সঙ্গেই তার দিন কাটে। আমি বাইরে থেকে এলেই আমার কোলে আসতে ছটপট করে। আর রেশমা হোটেল ওয়েস্টিনের কাজে এখন আগের চেয়ে বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, রেশমা ও রাব্বী এখন গুলশানের একটি ভবনের ষষ্ঠ তলার দু’কক্ষের বাসায় থাকেন। ভাড়া ১১ হাজার টাকা। স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটছে তাদের। হোটেল ওয়েস্টিনে ভালো অঙ্কের বেতন পাচ্ছেন রেশমা। তিনি সকাল সাড়ে ৬টায় কাজে যোগ দেন। বিকাল সাড়ে তিনটায় ছুটির পর বাসায় ফেরেন। তারপর মেয়ে ও সংসারের কাজে সময় দেন। আর রাব্বী একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে কাজ করেন। তাকে আবার নিয়মিত সময় দিতে হয় না। কর্মকর্তার ডাক পড়লেই ছুটে যেতে হয়। অনেকটা সময় মেয়েকে নিয়ে বাসায় কাটান।
রাব্বী ও রেশমার ভাইবোনরাও মাঝে মাঝে তাদের বাসায় আসেন। দেখে যান। তবে রেশমার মা জোবেদা এসেছিলেন বেশ আগে। রেবার জন্মের পর অনুষ্ঠানে। যোগাযোগ প্রায়ই হয়। রেশমা মাঝে মাঝে মায়ের কাছে টাকাও পাঠান। ছোট ভাই সাদেক ঢাকায় চাকরি করেন। বড় ভাই জাহিদুল ঘোড়াঘাটে ব্যবসা করেন। বড় বোন আসমা ঢাকায় থাকেন। একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বোন ফাতেমাও থাকেন  ঘোড়াঘাটে। তার স্বামী কৃষি শ্রমিক। তারা মাঝে মাঝে রেশমা ও রেবাকে দেখতে গুলশানের বাসায় আসেন বলে জানান রাব্বী। এদিকে রাব্বীও পরিবারের প্রতি খবর রাখেন বলে জানালেন। অপর এক ভাই ও বোন এবং ব্যবসায়ী পিতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখেন।

এদিকে রেশমার মা জোবেদা খাতুন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ভাটা থেকে ইটের টুকরো কিনে এনে তা ভেঙে খোয়া বানিয়ে বিক্রি করতেন। এখন তিনিও কিছুটা সচ্ছল।

ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়নের কোশিগাড়ী গ্রামের কৃষক মৃত আনসার আলী ও জোবেদার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে রেশমা সবার ছোট। তার পিতার মৃত্যুর পর জোবেদা দ্বিতীয় বিয়ে করেন আরজন আলীকে। তিনি হোটেল শ্রমিক। রেশমার প্রথম স্বামী আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর তিনি সাভারে চলে আসেন। রানা প্লাজায় কাজ নেয়ার চারমাস পর ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল ঘটে এই ব্যাপক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। এতে নির্মম মৃত্যু হয় ১ হাজার ১৩৮ জনের। আহত হন দু’সহস্রাধিক মানুষ।

রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে আসা রেশমা হোটেল ওয়েস্টিনে চাকরি পান।  সেখানে আসা-যাওয়ায় পথে পরিচয় হয় রাব্বীর সঙ্গে। এক পর্যায়ে তারা একে অপরকে পছন্দ করেন। বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। পরে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রাব্বীকে নিয়ে সংসার পাতেন রেশমা। পরের বছর ১০ই মার্চ মগবাজারের আদ্‌-দ্বীন হাসপাতালে জন্ম নেয় রেবা।

২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল দেশের ইতিহাসে মর্মান্তিক কারখানা ধসের এই ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ব্যাপক প্রাণহানি ও আহতের ঘটনা নাড়া দিয়েছিল বিশ্ববাসীকে। দুর্ঘটনার পরই উদ্ধারে নামে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ একাধিক বাহিনী ও স্থানীয়রা। এরপর ধসের ১৭ দিন পর ১০ই মে বিকালে বেজমেন্ট থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় রেশমাকে। মুহূর্তে দেশ ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ওই খবর। উদ্ধারের পর থেকে মূলত অগোচরেই চলে যান দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে সংবাদের শিরোনাম হওয়া ও রাতারাতি তারকাখ্যাতি পাওয়া রেশমা। সে সময় আমেরিকায় প্রবাসী হওয়ার প্রস্তাবও আসে। তাছাড়া, ওয়েস্টিনসহ রাজধানীর একাধিক পাঁচতারকা হোটেলে কাজের প্রস্তাব পান। তিনি গুলশানের ওয়েস্টিনকে কর্মস্থল হিসেবে বেছে নেন। তারপর থেকে সেখানেই কাজ করছেন।

সূত্র: মানবজমিন


সম্পর্কিত খবর