জামিল আহমদ : ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি শিক্ষা সনদের মান ঘোষণা করেন। ঘোষণার আলোকে ১৩ এপ্রিল কওমি শিক্ষা সনদের মান প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অভিন্ন প্রশ্নে সম্মিলিত পরীক্ষার কথা। প্রজ্ঞাপনের আলোকে আজ ১৬ এপ্রিল হাটহাজারিতে স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটির প্রথম বৈঠকে স্বীকৃতি প্রাপ্ত ছয় বোর্ডের সম্মিলিত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়। ছয় বোর্ডের সম্মিলিত পরীক্ষা হবে ১৫ মে থেকে ২৫ মে।
স্বীকৃতির পাওয়ার পর ছয় বোর্ডের সম্মিলিত এ পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা উঠেছে সব মহলেই। আলোচনা চলছে ছাত্রদের মাঝেও। তাদের একেকজন একেকভাবে দেখছেন বিষয়টি। তাদের কারো মনে তৈরি হয়েছে উল্লাস, কারো মনে প্রশ্ন। কেউ আবার ভয় পাচ্ছেন নতুন অপরিচিত পরীক্ষা পদ্ধতিকে। ইতিহাসের অংশ হতে চলা এ বছরের তাকমিল জামাতের পরীক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়েছে আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকম। পরীক্ষার্থীদের অনুভূতির নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো নিচে।
আমাদের দ্বারা অভূতপূর্ব এক অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে, আমরা আনন্দিত
হামমাদ রাগিব, জামিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ ঢাকা।
বেফাকের প্রশ্নের একটি নিজস্ব ধাঁচ রয়েছে। আমরা যারা পরীক্ষার্থী, বেফাকের বিগত বছরগুলোর প্রশ্নপত্র সামনে রেখেই এতোদিন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে সম্মিলিত বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তে খানিকটা আনইজি ফিল করছি।
নতুন বোর্ড, নতুন কর্তৃপক্ষ, প্রশ্নপত্রের ধাঁচ কেমন হবে, কিভাবে কী হবে, পরীক্ষার্থী মাত্রই একটা শঙ্কা কাজ করার কথা ভেতরে ভেতরে; এবং করছেও। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নতুন বোর্ডে পরীক্ষা দেয়ার ব্যাপারটা আসলে ভালো লাগারই। স্বীকৃতির পুরো ব্যাপারটাই অন্যরকম এক আনন্দের।
বাংলাদেশের কওমি শিক্ষাধারার অভূতপূর্ব একটা অধ্যায়ের সূচনা আমাদের দ্বারা হচ্ছে, আমরা আমাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু আমাদের মতো করেই পেতে যাচ্ছি, এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে!
স্বীকৃতির ঘোষণা যেসব শর্তের ভিত্তিতে হয়েছে, সেসব শর্ত মাফিক তা বাস্তবায়িত হোক, এটাই কামনা। সবশেষে, আমাদের সেরতাজ মুরব্বি হজরতগণ, যাঁরা আমাদের ন্যায্য এই অধিকার আদায়ের জন্য অক্লান্ত মেহনত করেছেন এবং করছেন, সবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জাযাহুমুল্লাহ খায়রান আহসানাল জাযা।
আশা করি, এখন আর আরবি-উর্দুতে লিখতে বাধ্য করা হবে না
উমর আল ফারুক, ইসলামিক রির্সাচ সেন্টার বসুন্ধরা ঢাকা।
দেশে প্রথমবারের মতো কওমি মাদরাসার ছয় বোর্ডের সম্মিলিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম পরিক্ষার্থী হিসেবে আমি আনন্দিত । আমি মনে করি সম্মিলিত পরীক্ষা ঐক্যের পথে মাইলফলক হবে। এ সিদ্ধান্তের জন্য মুরব্বিদের মোবারকবাদ জানাই।
আগে তো বিভিন্ন আঞ্চরিক বোর্ডে পরিক্ষা নেয়া হতো বিধায় কিছু সমস্যা ছিল। আশা করি এমন সমস্যা এখানে হবে না। যেমন কোন প্রতিষ্ঠান বোর্ডে আরবি ও উর্দুতে লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। আলাদা আলাদা ফলাফল আসবে আগে দেখা যেত কেউ কেউ জালাইন মিশকাত না পড়েও দাওরায়ে হাদিস পড়ার সুযোগ পেয়েছেন আশাকরি এখন এখন এমন হবে না।
যে মান আসতেছে তা মূলত আমাদের প্রাপ্যই ছিল, তা দেরিতেও হলে আমরা পেয়েছি সেটা আমাদের সৌভাগ্য। তবে কেউ যদি মনে করে যে, স্বীকৃতি দেয়াটা আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়েছে। সেটা হবে বড় ভূল হবে। এতো বড় কাজের সিদ্বান্ত অবশ্যেই পরামর্শক্রমে হচ্ছে বিধায় সমালোচনা না করে সহযোগিতা করাই হবে শ্রেয়। শুধু দোষ না খোজে ভালদিক গুলো আলোচনা করি এত কমপক্ষে গীবত থেকে বাচা যাবে।
সম্মিলিত পরীক্ষা শিক্ষার মান বৃদ্ধি করবে
আবদুল্লাহ আফফান, জামিয়া কারিমিয়া আরাবিয়া রামপুরা, ঢাকা।
দেশে প্রথমবারের মতো কওমি মাদরাসার ছয় বোর্ডের সম্মিলিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। স্বীকৃত সনদের প্রথম পারক্ষার্থী আমরা। শরিক হতে পারব উদ্বোবনী এই সারথীতে আমরা। এটি একটি প্রসংশনীয় উদ্যোগ। ভালো উদ্যোগ। সম্মিলিত পরীক্ষা সারা দেশের কওমি মাদরাসা শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
হঠাৎ এমন সম্মিলিত পরীক্ষার আয়োজন করতে গেলে কিছুটা সমস্যা হতে পারে তবে ছাত্রদের তেমন কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। কেননা সারা দেশের কওমি মাদরাসায় একই পদ্ধতিতে পড়ানো হয় এবং ছাত্ররা কিতাবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব ভালো করে মুতালাআ করে।
স্বীকৃতির মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার কথা জানতে পারবে আমাদের সমাজ ও দেশের মানুষ। মাদরাসা শিক্ষা যে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা এবং জাতি যে এ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনেক বেশি উপকৃত হতে পারে তা মানুষ বুঝতে পারবে।
-এআরকে