মুস্তাফা জামান আব্বাসী। বাংলা লোক সাহিত্যের কিংবদন্তী সুর সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের ছেলে। নিজেও জড়িয়ে আছেন সংগীত ও সংস্কৃতির সঙ্গে। সাংস্কৃতিক অঙ্গণে তার অবস্থান ও অবদান প্রবাদতুল্য। দেশের মাটি ছাড়িয়ে বিশ্বময় মোস্তফা জামান আব্বাসী বাংলা লোক সংস্কৃতির একজন ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর। নিজ ধর্মে তার রয়েছে গভীর আস্থা ও অনুরাগ। পর ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। নিয়মিত কুরআন অধ্যয়ন করেন। লিখেছেন প্রিয় নবী সা. এর জীবনী। একইভাবে গেয়েছেন রাঁধা কৃষ্ণের বিচ্ছেদের গান। দেশের বরেণ্য এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কথা বলেছেন ‘বাঙলি সংস্কৃতি ও মূর্তি-ভাস্কর্য’ নিয়ে। তার সাথে কথা বলেছেন, আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব।
আমি মুস্তাফা জামান আব্বাসী। আমি লোক সংস্কৃতির একজন সাধারণ পাঠক ও লেখক। অনুগ্রহ করে সে হিসেবে আমার বক্তব্য গ্রহণ করলে বাধিত হই। আমরা জানি, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে সমগ্র যে বাংলা ছিলো সেখানে মুসলমানরাই ছিলো সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখন বাংলাদেশে ৯০% মুসলিম এবং পশ্চিমবঙ্গে ৩০% মুসলিম। তাদের যিনি প্রতিভূ অর্থাৎ আমাদের যিনি নবী তিনি মূর্তির বিরুদ্ধে। কাবা শরিফে যে মূর্তি ছিলো তা তিনি নিজে ধ্বংস করেছেন অথবা অন্য কাউকে ধ্বংস করতে বলেছেন। তিনি তার জীবনে আল্লাহর বাণী প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
এখন আমি বলছি, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। বাংলাদেশে এক ৯০% মুসলিম এবং পশ্চিমবঙ্গে ৩০% মুসলিম। এ দেশে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু তারা সংখ্যালঘুদের প্রতি নির্দয় নয়। আমরা হিন্দুদের বিগ্রহ ভাংগি না, হিন্দুদের মন্দির ভাংগি না। যদি কোনো মুসলিম তাদের মন্দির ও বিগ্রহ ভাংগে আমরা নিজেরা তা গড়ে দেই; আমরা এমন মুসলিম। বাংলাদেশে এবং সমগ্র পৃথিবীতে।
যারা হিন্দু প্রতিবেশী তাদের প্রতি আমরা ভালো আচরণ করি। আল্লাহ বলেছেন, প্রতিবেশীকে আপন ভাবো, আল্লাহ বলেছেন প্রতিবেশী যদি একটি জন্তুও হয় তার সাথে ভালো ব্যবহার কর। আহত জন্তু হলে তার সেবা করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে। সুতরাং হিন্দুদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো কথা নেই। তারা তাদের ধর্ম পালন করবে তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের মূল সংস্কৃতি মূর্তি বিরোধী।
আমাদের হাইকোর্টের সামনে বা এয়ারপোর্টের সামনে যদি মূর্তি স্থাপন করা হয়, তবে তা আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে চলে যায়। আমি এতোটুকু বলেই থামতে চাই। কারণ আমি রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। বিশেষত এজন্যই নেই যে, আমার পিতা আব্বাস উদ্দিন। তিনি হিন্দুদের গান গেয়েছেন। তিনি বিচ্ছেদী গান গেয়েছেন। বিচ্ছেদী গান মানে রাধা কৃষ্ণের বিচ্ছেদের গান। তাহলে এখানে মূর্তি আসলো কিনা? না এ রাধা-কৃষ্ণ মূর্তি নয়। এ রাধা-কৃষ্ণ মানব প্রেম। তারা মানব রাধা ও মানব কৃষ্ণ। এটা আমার এক্সপ্রেসন।
আমি পষ্ণাশটি বই লিখেছি। সেখানে আমি এ কথাও লিখেছি আমাদের সংস্কৃতিতে মানবপ্রেম ঢুকেছে অন্যভাবে। সেখানে রাধা কিন্তু রাধা নয়, সেখানে কৃষ্ণ কিন্তু কৃষ্ণ নয়। সেখানে রাধা মানবী, সেখানে কৃষ্ণ মানব। সেজন্য বাংলাদেশে ৯০% মুসলমান। তারা বিচ্ছেদী গান গেয়েছে। একটু তফাৎ আছে। এটা অন্য রকম বিষয়। এটা মাথামোটা মানুষগুলো বুঝবে না। মাথামোটা বলতে যারা কুরআন পড়ে কিন্তু তার অন্তর্নিহিত মর্ম বোঝে না। কুরআনের বাণী হলো, কারো মনে তুমি দিয়ো নাতো আঘাত, সে আঘাত লাগে কাবার ঘরে, মানুষেরে তুমি যতো কর ঘৃণা খোদায় অন দূরে সরে।
এটা হিন্দু মুসলমান ও খ্রিস্টানসহ সবাই গ্রহণ করেছে ইসলাম পৃথিবীতে সবচেয়ে শান্তির ধর্ম। পৃথিবীর একমাত্র ইসলাম যা পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারবে। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান কেউ আমাদের পর নয়। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে কিন্তু আমাদের যে স্ট্রাকচার সেখানে মূর্তি বানানো যাবে না। এটাই আমার সর্বশেষ কথা।
ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। ভাস্কর্যের পূজা করা হয় না। এটা নন্দনতত্ত্বের ব্যাপার। আমি নন্দনতত্ত্ব পড়াই। ইসলামেরও নন্দনতত্ত্ব আছে। ইসলামের নন্দনতত্ত্ব হলো ক্যালিওগ্রাফি। আল্লাহর নিরানব্বই নামের উপর পাঁচশত বই প্রকাশিত হয়েছে। তার অনেকগুলো আমার কাছে আছে। আল্লাহর কুরআনকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আল্লাহর মসজিদ সাজানো হয়েছে। পৃথিবীর যতো সম্পদশালী মুসলমান আছে তারা মসজিদকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেনো তা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থান। কুরআন এটাকেও পরিপূর্ণ স্বীকৃতি দেয় নি। কুরআন বলেছে সাধারণ থাকবে। বাহুল্য থাকবে না। জরিযুক্ত কাপড় পরে মসজিদে আসার দরকার নেই। রাসুলুল্লাহ সা. কে যখন মিসরের বাদশা জরিযুক্ত কাপড় উপহার দেন, তখন তিনি একবার তা পড়ে অন্যকে দিয়ে দেন। নবী সা. জরিযুক্ত কাপড় অপছন্দ করলেও বাদশার মনে কষ্ট দিতে চান নি।
১৪ কোটি মানুষের বিশ্বাসের পরিপন্থী কোনো কাজ দেশের সংস্কৃতি হতে পারে না: মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন