শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’ শরীরে রক্ত বাড়াতে যেভাবে পালং শাক খাবেন

নারী তুমি মূল্যবান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

muslim_women2আমিনুল ইসলাম হুসাইনী

'নারী!' ছোট্ট এই একটি শব্দতে মিশে আছে পৃথিবীর যতো সুখ। স্নেহ-মমতা, প্রীতি আর ভালোবাসার অমৃত। কারণ, নারী মানেই কোনো না কোনো পুরুষের মা। যার স্নেহের আঁচলতলে কেটেছে তার অবুঝ শিশুকাল। নারী মানেই কোনো না কোনো পুরুষের ভগ্নি। যার সাথে হেসে খেলে কেটেছে তার দুরন্ত শৈশব অার কৈশোর। নারী মানেই কোনো না পুরুষের জায়া। যার প্রেমময় চোখের চাহনিতে মুছে যায় তার সকল দুঃখ যাতনার গ্লানি। যার একচিলতে হাসিতে ক্লান্ত দেহে সঞ্চারিত হয় নব উদ্যম। নারী মানেই কোনো না কোনো পুরুষেরর কণ্যা। যার অবুঝ অাচরণে সবুজ হয়ে ওঠে তার সুপ্ত স্বপ্নেরা। সর্বোপরি নারী মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এমনই এক অনন্য সৃষ্টি, যার উপস্থিতিকে উপেক্ষা করে মানব সভ্যতার আশা তো দূরের কথা, কল্পনাও করা যায় না। কেন না,
'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।'

কিন্তু তার পরও সুদীর্ঘকাল ধরে নারীরা এই সমাজে নানাভাবে নিপীড়িত ও নিষ্পেষিত হয়ে অাসছে। বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ন্যায্য অধিকার ও সম্মান থেকে। যা মানবসভ্যতার ইতিহাসে সত্যিই এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। সেই কলঙ্ক বিমোচনের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাস্বরূপই যেন প্রতিবছর ৮ই মার্চকে উদযাপন করা হয় 'বিশ্ব নারী দিবস' হিসেবে। কিন্তু তবুও মনের কোনে শঙ্কা থেকেই যায় এই ভেবে যে, এই 'নারীদিবস' কি আসলেই নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার ফিরিয়ে দিতে পেরেছে? ঠিক যেরূপ দিয়েছে কল্যাণের ধর্ম ইসলাম।

একটু ভেবে দেখুনতো! অামরা যারা নিজেদেরকে নারীবাদী বলে মনে করি, অামরা কি আসলেই নারীদের কল্যাণের জন্য কিছু করছি? নাকি সমতার কথা বলে নারীকে মাঠে-ঘাটে এনে, বিনোদনের নামে পুরুষের মনোরঞ্জনের খোরাক বানিয়ে নির্যাতনের আরো অতলে ঠেলে দিচ্ছি? এই ভাবনা অমূলক নয়। হিসেব করলে দেখা যায়, 'বিশ্ব নারীদিবস' পালিত হচ্ছে শতবছরেরও আগ থেকে। কিন্তু এখনো কি নারীরা তাদের ন্যায্যতা ফিরে পেয়েছে? পেয়েছে কি তাদের প্রাপ্য সম্মান? নবসভ্যতার এই উন্মেষকালেও কি পত্রিকার পাতায় সেই একই দুঃসংবাদ আমাদের প্রতিদিনই পাঠ করতে হয় না? যে দুঃসংবাদের শিরোনাম হয় 'যৌতুকের অভিশাপে ঝরে গেল গ্রীহ বধূর প্রাণ।' অথবা 'একদল বখাটের দ্বারা পনেরো বছরের কিশোরীকে গণধর্ষন।' হায় সভ্যতা! হায় আধুনিকতা!

নারী অধিকারের নামে এই যে এতো সভা, সেমিনার হচ্ছে। এতো এতো স্লোগান হচ্ছে। এইসব পদক্ষেপ কি নারীকে এই নরকীয় তাণ্ডবলীলা থেকে রক্ষা করতে পেরেছে? যদি না-ই পারে, তবে মূল্য কোথায় এই ফেমিনিজম বা 'নারীবাদের?' অথচ আজ থেকে দেড় সহস্রাধিক বছর অাগেই  কল্যাণের ধর্ম ইসলাম নারীকে দিয়েছিল তাদের প্রাপ্য অধিকার। সর্বোচ্চ সম্মান ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। যদিও সেই ইসলামকেই আজ উপস্থাপন করা হচ্ছে নারী বিদ্ধেষী বলে। অথচ এই ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যে ধর্ম নারী-পুরুষকে কখনোই বৈষম্যের দৃষ্টিতে দেখে না। বরং ইসলাম বলে, 'নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপূরক।' এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
'তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।' (সূরা বাকারা : ১৮৭)

সেই আইয়্যামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকার যুগের কথাই ধরুন। তখনকার সময়ে নারীদের অবস্থান ছিল কতোই না নাজুক! যখন নারী মানেই ছিল পুরুষের ভোগপণ্য। নারীর প্রতি এইযে এমন অজাচারমূলক অাচরণ করা হতো, তখন কিন্তু কোনো নারীবাদীর মুখ খুলেনি। খুলেনি অন্যান্য ধর্মের নেতাদেরও। তাদের ভূমিকা ছিল শুধুই নীরব দর্শকের। কিন্তু চুপ থাকতে পারলেন না ইসলামের প্রাণপুরুষ নবী মুহাম্মদ সা.। তিনি নারীদের এহেন দুর্দিনে জেগে উঠলেন। সপ্তম শতাব্দীর সেই অন্ধকারের আরবে যখন 'কন্যা শিশুহত্যা' ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তখন মুহাম্মদ সা. ঘোষনা দিলেন, 'কন্যা শিশুর জন্ম অভিশাপ নয়, বরং আশীর্বাদ।' তিনি অারো বললেন, 'যে ব্যক্তির কন্যা সন্তান আছে, আর যে তাকে জ্যান্ত কবরস্থ করে নি কিংবা তার সাথে লাঞ্ছনাকর আচরণ করে নি এবং পুত্র সন্তানকে তার উপর অগ্রাধিকার দেয় নি, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।' (সুনানে আবু দাউদ : ৫১৪৮)

সমাজে নারীর অবস্থান যখন ছিল এমনই অমানবিক। তখন ইসলামই নারীর অধিকার ও মর্যাদার উন্নয়ন কল্পে বিধান জারি করেছে। পাশাপাশি নারী নির্যাতনের বিপক্ষেও কঠোর হুশিয়ারী করেছে। ইসলাম এমনই এক ধর্ম, যার চোখে নারী-পুরুষ কোনো বৈষম্যের বিষয় নয়। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের প্রথম পরিচয়ই হচ্ছে 'মানুষ'। আর মানুষ অতীব সম্মানিত ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। ইসলাম জন্মগতভাবেই মানুষকে এ মর্যাদা দিয়েছে। চাই সে পুরুষই হোক কিম্বা নারী। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'পুরুষ বা নারীর মধ্য থেকে যে-ই ভালো কাজ করলো, সে মুমিন হলে আমি তাকে একটি পবিত্র জীবন যাপন করার সুযোগ দেব এবং তারা যে কাজ করছিল আমি তাদেরকে তার উত্তম পারিশ্রমিক দান করব।' (সূরা আন-নাহল : ৯৭)

এছাড়াও ইসলাম নারীকে শিক্ষা অর্জনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। কিন্তু এর পরও অনেকেই আছে, যারা ইসলামকে নারীবিদ্ধেষী বলে অপপ্রচার করে বেড়ায়। তাদের এই অপপ্রচার এ কথাই প্রমাণ করে যে, তারা শুধুমাত্র ইসলামকে কলুষিত করার জন্যই এমন অমূলক মন্তব্য করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে নারীকে তার ন্যায্যতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য নয়। অার এ জন্য তারা সর্বপ্রথম যে অস্ত্রটা প্রয়োগ করে থাকে, সেটা হলো  কোমোলমতী নারীদের অন্তরে এই বিদ্ধেষ ঢেলে দেয়া যে, 'ইসলাম নারীকে চার দেয়ালে বন্দি করে রাখে।'

অথচ এটা সম্পূর্ণই মিথ্যা। ইসলাম নারীকে কখনোই বন্দি করেনি। বরং নারীকে দিয়েছে নির্মল স্বাধীনতা। ইসলাম নারীকে শরীয়াতের সীমার মধ্য থেকে অর্থনৈতিক ব্যাপারেও শ্রম-সাধনার অনুমতি দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে নারীকে তার নিরাপত্তার জন্য যে মাধ্যমটিকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করে, সেটি হলো পর্দা। এই পর্দা অহেতুক নয়। পর্দার প্রয়োজনীয়তা যে আসলেই গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝে আসে আমাদের সমাজচিত্রের দিকে তাকালেই। বলা বাহুল্য, ইসলাম এই পর্দাপ্রথাকে শুধুমাত্র নারীর জন্যই আবশ্যক করেনি। আবশ্যকীয় করেছে পুরুষের জন্যও। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
'মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজদের লজ্জাস্থান হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতম।' (সূরা আন-নূর : ৩০)

এবার ভেবে দেখুনতো! ইসলাম নারীকে পর্দার নামে বন্দিত্বের কথা বলে, নাকি তার সুরক্ষা নিশ্চিত করে? চার দেয়াল নারীর কারগার নয়, বরং সুরক্ষা। তাই যে সকল নারীবাদীরা মনে করছেন, নারীদেরকে আবরণমুক্ত করলেই নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনাদের এই অন্ধ দৃষ্টি বন্ধ করে একটিবার পশ্চিমা দেশগুলোর সমাজব্যাবস্থার দিকে তাকান। যেখানে পর্দা বা ধর্মের কোনো বালাই নেই। দেখুন সেই সমাজগুলোতেই নারীরা আজ কতোটা অসহায়। যেখানে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারীকে ধর্ষিত হতে হয় নিত্যদিনের রুটিনে।

'জাস্টিস ইন্সটিটিউট অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া'র সেই প্রতিবেদনটিই দেখুন। যে প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী ধর্ষণের এক লোমহর্ষক তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। যে তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশসমূহ। যেখানে প্রতি ১০৭ সেকেন্ডে একজনকে ধর্ষিতা হতে হয়। যেখানে বছরে ধর্ষিতা হতে হয় ২ লাখ ৯৩ হাজার শিশু-কিশোরীকে। সেখানকার পর্দাহীন নারীরা অাজ এতটাই অসহায় যে, তারা কারাগারে গিয়েও স্বস্তি পাচ্ছে না। কারণ, সেখানকার কারাগারেও প্রতিবছর ধর্ষিতা হতে হয় ২ লাখ ১৬ হাজার নারীকে। আরো নিন্দনীয় ব্যাপার হচ্ছে, সেখানে ৬৮ শতাংশ ধর্ষণেরই কোনো রিপোর্ট হয় না। এবং ৯৮ ভাগ ধর্ষকের শাস্তিও হয় না। (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক, ০৭ জুলাই, ২০১৫) এই চিত্রতো তাদেরই, যারা নারীকে সমান অধিকারের কথা বলে রাজপথে এনে নির্যাতনের নরকে ঠেলে দিচ্ছে। যারা নারীকে বিজ্ঞাপন চিত্রে যৌন প্রতীক হিসেবে প্রদর্শন করিয়ে পণ্যরূপে গণ্য করাচ্ছে। যা নারীর আত্মমর্যাদাবোধ, সম্মান ও মানব মর্যাদার সাথে অসংগতিপূর্ণ।

তাই এই 'বিশ্ব নারীদিবস'- এ আমাদের দাবি হোক নারীকে মূল্যয়ন করা। সম্মান করা। ফিরিয়ে দেয়া হোক সম্পত্তিতে নারীদের ন্যায্য অধিকার। দেয়া হোক ধর্মীয় অধিকার এবং হিজাব পরিধান করে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা। পাশাপাশি নারীদের কাছেও অনুরোধ, হে নারী! ফিরে এসো ওই অন্ধকারের গলিপথ থেকে ঝলমলে এই আলোর পৃথিবীতে। কেন না তুমি সস্তা দরে বস্তাভরা বাজারের কোনো পণ্য নও। তুমি নারী। তুমি মহীয়সী। মূল্যহীনা নও।

লেখক : ইমাম ও খতিব, বাইতুল মামুর জামে মসজিদ, মনিয়ন্দ, আখাউড়া।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ