রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


একক নির্বাচনের কথা ভাবছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

islami_dol_ec-500x265বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস : ৮ ডিসেম্বর ১৯৮৯। বাংলার জমিনে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে যুথবদ্ধ হয় শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক-এর নেতৃত্বাধীন খেলাফত আন্দোলন এবং ড. আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন যুব শিবির। একীভূত দলের নাম হয় খেলাফত মজলিস।

প্রতিষ্ঠার পরপরই ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়ে দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলে দেয় খেলাফত মজলিস। এছাড়াও ১৯৯৪ সালের তাসলিমা নাসরিন বিরোধী আন্দোলন, ২০০১ সালের ফতোয়া বিরোধী রায়ের প্রতিবাদে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর নেতৃত্ব সফল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো দলটি। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে চারদলীয় জোটের অংশিদার ইসলামী ঐক্যজোটেও ছিলো খেলাফত মজলিসের সক্রীয় ভূমিকা।

চারদলীয় জোটের অংশিদার ইসলামী ঐক্যজোটের ব্যানারে ৮ম জাতীয় সংসদে মুফতি শহীদুল ইসলাম খেলাফত মজলিসের প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট থেকে নির্বাচিত হন খেলাফত মজলিসের মাওলানা ওবায়দুল হক।

খেলাফত আন্দোলন ও যুব শিবিরের সম্মিলনে খেলাফত মজলিজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অতিবাহিত হয় দীর্ঘ ১৬ বছর। কিন্তু দলের কাযক্রমে উভয় ধারার ছাপ থাকে বিদ্যমান। শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ব্যক্তিত্বের প্রভাবে বিভেদ রেখা স্পষ্ট হতে পারে নি। কিন্তু তার নেতৃত্ব শিথিল হওয়ার সাথে সাথে তা প্রবল হয়ে ওঠে। অবশেষে মওদুদি মতাদর্শের প্রভাব ও নেতৃত্ব কুক্ষিগত করে রাখার পারস্পারিক অভিযোগ ২০০৫ সালে বিভক্ত হয় খেলাফত মজলিস। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নামে নিবন্ধিত হয় শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর অনুসারীগণ।

হজরত শায়খুল হাদিস রহ. এর মৃত্যু, দলীয় ভাঙ্গণ, মুফতি শহিদুল ইসলামের দলত্যাগসহ নানা সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে দলটিতে। তবুও বর্তমান আমির প্রিন্সিপ্যাল হাবীবুর রহমানের নেতৃত্বে সফলভাবে অংশ গ্রহণ করতে চায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে। জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে খোঁজ নিতে দলটির মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হকের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আতাউর রহমান খসরু

রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে সংলাপে অংশগ্রহণ করা ইসলামি দলগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। সংলাপে রাষ্ট্রপতির নিটক কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করে নি দলটি। প্রস্তাব করেছিলো কিছু নীতিমালা। যার আলোকে একটি নিরপেক্ষ ইসি গঠন করা সম্ভব হবে।

তাদের প্রস্তাব ও প্রত্যাশার কোনো প্রতিফলন ইসি দেখতে পেয়েছেন কী? এমন প্রস্তাবের উত্তরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হক বলেন, ‘নব গঠিত ইসির ব্যাপারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মূল্যায়ন হলো, ইসি গঠনে সরকারের প্রত্যাশায় পূরণ করা হয়েছে। জনগণের নয়। তবে জাতির যে আশা ছিলো অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের। তা তাদের আগামী দিনের কাযক্রমের মাধ্যমে স্পষ্ট হবে।’

তবে এমন পরিস্থিতিতে অব্যাহত থাকলে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাবণা খুব একটা দেখেন না তিনি।

যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তাহলে? বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের শুরার সিদ্ধান্ত হলো, অনুকূল পরিবেশ হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে। অনুকূল পরিবেশের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে বলেন, অধিকাংশ নিবন্ধিত দল নির্বাচনের পরিবেশকে অংশগ্রহণের উপযোগী মনে করলে বাংলাদেশে খেলাফত মজলিসও নির্বাচনে অংশ নিবে।

প্রতিকূল পরিবেশেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেন নি দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যেও রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিসহ অনেক দলই নির্বাচনে যাচ্ছে। আমাদের দেশের রাজনীতি নির্বাচন কেন্দ্রিকই। নির্বাচন বিমুখ থেকে কোনো রাজনৈতিক তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা এবং কর্মী বাহিনীকে উজ্জীবিত রাখা দুরূহ। তাই প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচন করাটাই শ্রেয় মনে করে।

নির্বাচন আসলে শুরু হয় নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ তবে আপাতত কোনো জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেই। ইসলামী ঐক্যজোটসহ অন্যকোনো দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রস্তাবও পান নি তারা। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোনো জোটে অংশগ্রহণের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে খেলাফত মজলিস।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলের প্রস্তুতি সম্পর্কে মুফতি মাহফুজুল হক বলেন, দলে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষত নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল ও প্রার্থী বাছাইয়ের মূলনীতি নির্ধারণে শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনো কোনো কৌশল বা পদ্ধতি নির্ধারণ করে নি। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলে তা নির্ধারণ করা হবে।

‘কতোগুলো আসনে প্রার্থী দিবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৫০টি জেলা শাখায় আমাদের সংগঠন রয়েছে। যেখানে যেখানে সংগঠন আছে আমাদের চেষ্টা থাকবে সব আসনে প্রার্থী দেয়া।’ rokon_book2

মুফতি মাহফুজুল হক মনে করেন, দীর্ঘ মেয়াদি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক প্লাটফর্ম না থাকায় নির্বাচনী ফলাফলের বিচারে ইসলামি দলগুলো বার বার ব্যর্থ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে ইসলামি ঐক্যজোটের পক্ষে যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছিলো তা ধরে রাখতে পারলে প্রত্যাশিত ফলাফলের দিকে এগিয়ে যাওয়া সহজ হতো। তারপরও সার্বিক বিবেচেনায় তিনি বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করেন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ