আওয়ার ইসলাম:বহুল আলোচিত শিক্ষা আইনের খসড়া ফের শিক্ষাবিদসহ বিশিষ্টজনের কাছে উত্থাপন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মতামত ও পরামর্শ নিয়ে চূড়ান্ত হবে খসড়া আইন।
এর পর যাবে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য। কোচিং-টিউশনি, সহায়ক বইয়ের বিষয়ে স্পষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরবে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে কোচিং-টিউশনি, সহায়ক বইয়ের বৈধতা দেওয়ার খবরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠে বিভিন্ন মহলে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আমাদের সময়কে জানান, শিক্ষার সামগ্রিক বিষয়ে একটি নির্ভুল আইন করার চেষ্টা চলছে। আইনের খসড়া নিয়ে ইতোমধ্যে বহুবার দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, শিক্ষানুরাগীদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এর পরও অনেকে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন-ভিন্ন মত দিয়েছেন। আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। এ জন্য আবারও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সবাইকে নিয়ে বসবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য শিক্ষা আইন করা হবে।
খসড়া আইনে জেল-জরিমানার বিধান তুলে দিয়ে সহায়ক বা অনুশীলন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টিও বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ শিক্ষা আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরুর পর এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। আন্দোলনও হয়েছে। আইনে কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান থেকে সরে ছায়াশিা হিসেবে কৌশলে এর বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ তুলে সমালোচনা করেছেন বিশিষ্টজনরা।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, শিক্ষায় অগ্রগতির বিষয়ে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগের পরেও যদি শিক্ষা আইনে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়, তা হবে শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বিপর্যয়কর এবং শিানীতির মূল ল্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে দেখলাম যে, সাধারণ জনগণের চূড়ান্ত মতামত প্রদানের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রণীত চূড়ান্ত খসড়াটিতেও (এপ্রিল ২০১৬) এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এখন জনমতকে পাশ কাটিয়ে নতুন ধারাগুলো কী কারণে অন্তর্ভুক্ত করা হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এতে শিার মান উন্নয়নের জন্য সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। পারিবারিক পর্যায়ে শিার সামগ্রিক ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি মূলধারার শিাব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ দেশের ৩৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিবৃতিতে প্রস্তাবিত শিা আইন অর্থহীন, বৈষম্যমূলক ও শিশু অধিকার পরিপন্থী বলে অভিহিত করা হয়। তারা বলছেন, কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনিকে বৈধতা দেওয়া হলে শিার সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়বে। বিবৃতিতে তারা স্বাধীনতার চার দশক পরে শিা আইন চূড়ান্তকরণের উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানান।
একটি সূত্রে জানা গেছে, সহায়ক বই প্রকাশ এবং কোচিং পরিচালনার বিষয়ে শিক্ষা আইনে কঠোর শাস্তির বিধান সংযুক্ত করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, আইনের খসড়ায় থাকা ‘ছায়াশিক্ষা’র নামে কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির বৈধতা দেওয়া এবং বিনা অনুমতিতে সহায়ক বই প্রকাশের বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। কীভাবে এই দুই বিষয়ে আরও কঠোর হওয়া যায়, তার চিন্তাভাবনাও চলছে। এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে মন্ত্রণালয়ের শাখাপ্রধানদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর সুপারিশের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘শিক্ষা আইন’ করার উদ্যোগ নেয়। ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত সভার পর সভা করেই চলছে মন্ত্রণালয়। খসড়া চূড়ান্ত করতে পেরিয়ে গেছে ছয় বছর। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে শিক্ষা আইন ২০১৭ পাস করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ডিএস