দিদার শফিক: মদিনার পৌরসভায় ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমান ইবনে আফফান রা. এর নামে আজও সম্পত্তি নিবন্ধিত আছে। এখনো ওসমান রা. এন নামে বিদ্যুৎ ও পানির বিল জমা হয়।
নবুওয়াতের ত্রয়োদশ বর্ষে মুসলমানরা হিজরত করে মদিনায় পৌঁছলে সেখানে তারা খাবারের পানির সঙ্কটে পড়েন। মদিনায় এক ইহুদির কূপ ছিল। ইহুদি মুসলমানদের কাছে চড়া দামে পানি বিক্রি করত। কূপটি ছিল রুমা নামের এক ব্যক্তির। তাই কূপের নাম ছিল ‘বিরে রুমা’।
পানি সঙ্কটে পড়ে মুসলমানরা নবি সা. এর কাছে এ বিষয়টি উত্থাপন করলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে যে এই কূপটি কিনে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দিবে? এটা যে করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে একটি ঝর্ণা দান করবেন।
দৈনিক পাকিস্তানের চিপ এডিটর ও সিনিয়র সাংবাদিক মুজিবুর রহমান শামি আব্দুস সাত্তার খান নামের একজন স্কলার ও গবেষকের বরাতে বলেন, ওসমান রা. কূপের মালিক ইহুদির কাছে গিয়ে কূপটি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কূপটি লাভজনক আযের উৎস ছিল বিধায় ইহুদি তা বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানায়।
ওসমান রা. চেষ্টা অব্যাহত রেখে কৌশল অবলম্বন করে বলেন, পুরো কূপ বিক্রি না করলে অর্ধেক বিক্রি করুন। এতে একদিন কূপের মালিক হব আমি আর আরেকদিন তুমি। ইহুদি ভাবল, ওসমান রা. তার দিন চড়া দামে পানি বিক্রি করবে। ফলে মুনাফা লাভের আরো সুযোগ হবে। এই লোভে সে অর্ধেক কূপ বিক্রি করল।
ওসমান রা. অর্ধেক কূপ ক্রয় করে তার দিনে বিনামূল্যে পানি সংগ্রহ করতে মুসলমানদের আম অনুমতি দিয়ে দেন। লোকেরা ওসমান রা. এর দিনে ফ্রিতে পানি সংগ্রহ করত এবং পরের দিনের জন্যও পর্যাপ্ত পরিমাণে মওজুদ করে রাখত। ইহুদির দিনে কেউ পানি সংগ্রহ করতে যেত না। ইহুদি দেখল তার ব্যবসায় মন্দা পড়ে যাচ্ছে। তখন নিজ থেকেই এসে বাকি অর্ধেক কূপও কিনে নিতে ওসমান রা. এর কাছে আবেদন করল। ওসমান রা. সম্মতি জানালেন। ৩৫ হাজার রৌপ্যমুদ্রা দিয়ে তিনি কূপটি কিনে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দিলেন।
এসময় এক ধনাঢ্য ব্যক্তি ওসমান রা. থেকে কূপটি দ্বিগুণ দামে ক্রয় করার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। ওসমান রা. বলেন, আমার চাহিদা এর চেয়ে আরো অনেক বেশি। সে ব্যক্তিও মূল্য বাড়িয়ে বলতে লাগল। আর ওসমান রা. জবাবে আমার চাহিদা এর চেয়ে আরো বেশি বলতে লাগলেন। পরিশেষে ধনী লোকটি বলল, জনাব! এমন কেউ আছে যে আপনাকে কূপটির মূল্য ১০ গুণ বলেছে? ওসমান রা. জবাবে বলেন, আমার প্রতিপালক আমাকে প্রতি নেকিতে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন।
সময় যাচ্ছে আর মুসলমানরা এই কূপ থেকে পানি পান করছে। কালপরিক্রমায় ওসমান রা. এর শাসনামলে এই কূপের আশেপাশে খেজুর বাগান তৈরি হয়। সে যুগে এ বাগানের পরিচর্যা হত। তারপর সৌদি সরকারের শাসনামলে এই বাগানের খেজুর গাছের সংখ্যা প্রায় ১৫ শ ৫০ হয়েছিল। সরকার এই বাগানের চারপাশে দেয়ালের বেষ্টনি তৈরি করে এই জায়গা পৌরসভায় ওসমান রা. এর নামে নিবন্ধন করে দিয়েছে।
সৌদির কৃষিমন্ত্রণালয় এই বাগানের খেজুর বাজারজাত করে অর্জিত অর্থ ওসমান রা. এর নামের একাউন্টে জমা রাখেন। এ অর্থ সঞ্চয় হতে হতে বিপুল অর্থে পরিণত হলে মদিনার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে একটি বড় পরিসরের প্লট ক্রয় করা হয়। এখানে ‘হোটেল ওসমান বিন আফফান’ নামে একটি আবাসিক হোটেল তৈরি হচ্ছে।
এই হোটেল থেকে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন রিয়াল আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অর্থের অর্ধেক দিয়ে গরিব-মিসকিনদের দেখভাল করা হবে আর বাকি অর্ধেক ওসমান বিন আফফান রা. এর ব্যাংক একাউন্টে জমা হবে। ওসমান রা. এর একনিষ্ঠভাবে কূপ ওয়াকফের আমল আল্লাহর দরবারে এমনভাবে গৃহীত হয়েছে যে, কেয়ামত পর্যন্ত সদকায়ে জারিয়া হয়ে রবে। ওসমান রা. এর একাউন্ট আখেরাতেও আছে, দুনিয়ায়ও আছে। ওসমান রা. সেসব লোকদের অন্তর্গত যাদের প্রাণ ও সম্পদকে আল্লাহ তার জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তিনি আল্লাহর সাথে ব্যবসা করেছেন। আল্লাহকে উত্তম ধার বা করজ দিয়েছেন।অতঃপর আল্লাহ তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
সূত্র: দৈনিক পাকিস্তান
http://www.dailymotion.com/video/x1a0sp3_bank-account-of-hazrat-usman-ra-still-active-in-saudi-arabia_news
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ইসলামী আন্দোলনের ৭ দফা