মুফতি দিদার শফিক: জান্নাত মৃত্যু পরবর্তী জীবনে চির সুখের আবাস। শান্তির ঠিকানা।আল্লাহ বান্দার ইমান-আমল ও আল্লাহভীতির স্তরভেদে একেক বান্দাকে একেক ধরনের জান্নাত প্রদান করবেন আখেরাতে।
জান্নাত৮টি।মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে জান্নাতের শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। এ শ্রেণিবিভাগে সর্বোচ্চ ও শ্রেষ্ঠ জান্নাতের নাম জান্নাতুল ফেরদাউস।
জান্নাতুল ফেরদাউস মোমেনের কাঙ্ক্ষিত । ইবাদত-আরাধনার ফলিত ফসল। মহাকালীন ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের পাতায়-পাতায় ছড়িয়ে আছে জান্নাত লাভের পথ ও পন্থা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা জান্নাত লাভের কিছু শর্তারোপ করেছেন। জান্নাত লাভের পূর্বশর্ত হিসেবে তিনি ঘোষণা করেন।‘আর যারা ইমান আনে ও সৎ কাজ করে অবশ্যই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাবো জান্নাতে ।যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত । সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। কে আল্লাহ অপেক্ষা কথায় অধিক সত্যবাদী?’ সুরা: নিসা: ১২২
উপর্যুক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন জান্নাতি হতে হলে আগে ইমান আনতে হবে। একত্ববাদের স্বীকারোক্তি দিতে হবে।আল্লাহ-রাসুলে অবিশ্বাসী হওয়া যাবে না।রাসুলের আনিত বিধান গ্রহণ করে তদানুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে। সৎ ও কল্যাণকর কাজ করতে হবে। কোরআনের ভাষ্যমতে এটাই জান্নাত লাভের সহজ ও সঠিক পথ।
আল্লাহ চান তার বান্দারা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে সুখী-সমৃদ্ধ হোক। শান্তি-নিরাপত্তার ছায়াতলে আশ্রিত হোক। পরকালের জীবনে শ্রেষ্ঠ জান্নাত পেয়ে ধন্য হোক। তাই তিনি শ্রেষ্ঠ জান্নাত লাভের আমল বাতলে দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে। গুণ ও পরিচয় তুলে ধরেছেন সফল ব্যক্তির।জান্নাতি ব্যক্তির।কুরআনে বর্ণিত এ সকল সফল ব্যক্তিরাই পাবেন জান্নাতুল ফেরদাউসে আমন্ত্রণ।
আল্লাহ বলেন, ‘ অবশ্য সফলকাম হয়েছে মোমেনগণ। যারা বিনয়-নম্র নিজেদের সালাতে (নামাজে)। যারা অসার ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে। যারা জাকাতদানে সক্রিয়। যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে নিজেদের স্ত্রী অথবা ( শরিয়তের বিধি মুতাবেক যারা দাসি, বর্তমানে দাসপ্রথা বিলুপ্ত) অধিকারভুক্ত দাসিগণ ব্যতীত।এতে ( স্ত্রী ও দাসি সম্ভোগে)তারা নিন্দনীয় হবে না। এবং কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে (সম্ভোগের জন্য) তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী। এবং যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে , তারাই হবে অধিকারী- অধিকারী হবে (জান্নাতুল)ফেরদাউসের।যাতে তারা স্থায়ী হবে। সুরা: মুমিনুন:১-১১
উপর্যুক্ত আয়াতগুলোর দাবি ও আবেদন বাস্তবায়নে যারা সক্রিয় ও সচেষ্ট হবে, তারাই হবে সর্বোচ্চ জান্নাতের অধিবাসী।
মূলত এরাই দুনিয়া-আখেরাতে সফল। তারা চারিত্রিক মাধুর্যতায়ও উন্নত। কুরআনের ভাষ্যমতে
নৈতিকতায় পরিশুদ্ধ ও মানবিক গুণাবলিতে বিকশিতজনই দুনিয়া ও আখেরাতে সফল ব্যক্তি । আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ সে-ই সফলকাম হবে, যে নিজেকে পবিত্র করবে। এবং সে-ই ব্যর্থ হবে যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে। সুরা: শামস: ৯-১০
আল্লাহ-রাসুলে বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলগণই হবে জান্নাতুল ফেরদাউসের অতিথি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে ফেরদাউসের উদ্যান। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। সেখান থেকে স্থানান্তর কামনা করবে না। ’সুরা: কাহফ: ১০৭-১০৮
শ্রেষ্ঠ জান্নাত লাভ করতে হলে নিজের আমলকেও ত্রুটিমুক্ত করে শ্রেষ্ঠ আমলে পরিণত করতে হবে। তবেই সুগম হবে জান্নাতুল ফেরদাউস লাভের পথ।
লেখক: আলেম ও মিডিয়াকর্মী