শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

পাঠ্যবই সংশোধন; অভিভাবক ও ইসলামি মহলে সন্তুষ্টি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান

boi_silebasপাঠ্যবইয়ের বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা ও আপত্তি উঠেছিল বেশ আগে থেকেই। আন্দোলনও হয়েছে সর্বত্র। সেই আন্দোলনের ফলে ২০১৭ সালের বইয়ে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। এতে অভিভাবক ও ইসলামি মহলে সন্তুষ্টি দেখা গেছে।

অবশ্য প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের একটি বিষয় নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। যদিও বিষয়টা এড়িয়ে গেলেও কোনো ক্ষতি হতো না। কিন্তু বেকে বসেছেন একটা মহল। তারা নানা উজর আপত্তি পেশ করছেন। সমালোচিত সেই বিষয়টি হলো ওড়না। বর্ণমালা চেনাতে ও তে ওড়না ব্যবহার করা হয়েছে। ওড়না সার্বজনীন পোশাক বলেই নির্বাচকরা এটি বাছাই করেছিলেন কিন্তু ওড়না শব্দে কেবল নারীকেই বোঝানো হয় অথচ যেখানে শিক্ষার্থী ছেলেরাও এ বিষয়টি মানতে পারেননি কেউ কেউ। তবে একই বইয়ে র চেনাতে রথ টানিকে আপত্তিজনক বলছেন অনেক অভিভাবক।

তবে এবারের বইগুলো নিয়ে মূল যে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছিল সেগুলো বাতিল এবং যা সরানো হয়েছিল তা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বছরের দ্বিতীয় দিনই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই সন্তোষ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। সরকারকে তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাদ দেয়া ইসলামিক গল্পগুলো ফিরিয়ে আনায়।

এছাড়াও হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দসহ সর্বদলীয় ইসলামি ছাত্র ঐক্য সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে। গত বছর সিলেবাস নিয়ে আন্দোলনের জন্য ইসলামি সব ছাত্র সংগঠন একত্রিত হয়ে গঠন করেছিল সর্বদলীয় ইসলামি ছাত্র ঐক্য। দীর্ঘ দিন মিছিল সমাবেশ স্মরকলিপি পেশসহ নানাভাবে আন্দোলন করেছে সংগঠনটি।

২০১৭ সালের পাঠ্যপুস্তক যাচাই করে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণিতে নবী মুহাম্মদ সা. সংশ্লিষ্ট গল্প ‘সবাই মিলে করি কাজ’, তৃতীয় শ্রেণিতে ‘খলিফা হযরত আবুবকর’ এবং চতুর্থ শ্রেণিতে খলিফা হযরত ওমর রা. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ কবিতাটি নিয়ে বিতর্ক চলছিলো। কবিতাটিতে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থকে কৌশলে ব্যঙ্গ করা হয়। বিতর্ক চলছিলো মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট জয়ের গল্প নিয়ে ৷ এ দুটি বাদ দিয়ে কবি কাজী কাদের নেওয়াজের লেখা বাদশাহ আলমগীরের মহত্ত্ব প্রকাশ করে ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক কবিতাটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া ফিরিয়ে আনা হয়েছে মুসলমানদের শেষ নবী সংশ্লিষ্ট ‘বিদায় হজ’ এবং মুসলিম যোদ্ধা মীর তীতুমীরের জীবন কাহিনী।

ষষ্ঠশ্রেণীর বাংলা বইয়ে বিতর্কিত ‘লালগরুটা’ বাদ দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ‘সততার পুরস্কার’। এছাড়া ‘রাচী ভ্রমণ’ নিয়ে সমালোচনা ওঠায় সেটির বদলে মুসলিম দেশ মিশর ভ্রমণকাহিনী ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ পাঠ্যটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

সপ্তম শ্রেণীর বইতে দেবী দূর্গার প্রশংসা করে রবীন্দ্রনাথের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ কবিতাটি তারই আরেকটি কবিতা ‘নতুনদেশ’ পাঠ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি ৭ম শ্রেণির বইয়ে মুসলমানদের শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ‘মরু ভাস্কর’ প্রবন্ধটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

৮ম শ্রেণীর বইয়ে দুইজন মুসলিম লেখকের কবিতা ‘প্রার্থনা’ ও ‘বাবরের মহত্ত্ব’ বাদ দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। ২০১৭ সালে নতুন সিলেবাসে দুটো কবিতাই ফিরিয়ে আনা হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে বেশকিছু পরিবর্তন আছে৷ রাধা-কৃষ্ণের কীর্তণ ‘সুখের লাগিয়া’ বাদ দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে শাহ মুহাম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ কবিতাটি।

ভারতচন্দ্রের লেখা দেবী অন্নপূর্ণার কাছে প্রার্থনা করে লেখা ‘আমার সন্তান’ কবিতাটি নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হয়৷ তার পরিপ্রেক্ষিতে কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এর বদলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে মহাকবি আলাওলের লেখা ‘হামদ’ নামক কবিতাটি।

ভারতীয় ভ্রমণকাহিনী ‘পালামৌ’ নিয়ে সমালোচনা ওঠায় সেটি বাদ দিয়ে বঙ্কিমের লেখা ‘ফুলের বিবাহ’ নামের গল্পটি প্রবেশ করানো হয়েছে।

আগের বিতর্কিত সিলেবাস সামনে রেখে আন্দোলনে নেমেছিল সবগুলো ইসলামি দল। পাঠ্যপুস্তকে মোট ১৬টি আপত্তিকর বিষয় চিহ্নিত করে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিল ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। এ বিষয়ে কথা হয় দলটির কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক এইচ এম কাউসার আহমদের সঙ্গে। তিনি উপরের বিষয়গুলোর পরিবর্তন স্বীকার করে বলেন, হ্যাঁ  আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছি বিষয়গুলো নিয়ে। ২০১৭ এর বইগুলো আমরা পড়ে দেখেছি আপত্তিকর বিষয়গুলোর অধিকাংশই বাদ দেয়া হয়েছে এবং ফিরিয়ে আনা হয়েছে আগের ইসলামি ভাবধারার গল্প কবিতাগুলো।

তবে তিনি জানান, আমরা এখনো পাঠ্যবইগুলো এটু জেড পড়তে পারিনি, পুরোটা পড়ে শেষ করা এবং সমালোচনার পর বিস্তারিত মতামত দেয়া যাবে।

কাউসার আহমদ জানান, আমাদের আন্দোলন শুধু সিলেবাসে আপত্তিকর বিষয়গুলো নিয়ে ছিল না, বিতর্কিত শিক্ষানীতি বিষয়েও ছিল। এ কারণে আমরা বিবৃতিতে সরকারকে আংশিক ধন্যবাদ দিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা দ্রুতই পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্তে আসবো।

রাজধানীর মুগদা’র এক অভিভাবক আল আমিন জানান, পাঠ্যপুস্তকে যে আপত্তিকর বিষয় ছিল সেগুলো সরানো হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। সরকার সেখানে আদর্শ ও সুস্থ মানসিকতার গল্পগুলো ফিরিয়ে এনেছে  এজন্য ধন্যবাদ।

আল আমিন বলেন, একটা দেশের সংখ্যাগুরু মানুষের সেন্টিমেন্টকে ধারণ করেই সিলেবাস প্রবর্তিত হয়। বাংলাদেশেও যুগযুগ ধরে সেটা চলে আসছে। কিন্তু ভিন্নধর্মাবলম্বী কিছু কর্মকর্তা সেখানে যোগ হয়েছে বলে তারা তাদের ধর্মানুযায়ী বিষয় চয়ন করবেন এটা অযৌক্তিক।

এইচএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ