রোকন রাইয়ান
আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। তার আগে নতুন ইসি গঠনে সংলাপের আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এ পরামর্শ সভা। ধারাবাহিকভাবে জাতীয় পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, এলডিটি, জাসদসহ আরো বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সংলাপ করেছেন।
সংলাপে দুটি ইসলামি দলও অংশ নিয়েছেন। একটি ইসলামী ঐক্যজোট আরেকটি তরিকত ফেডারেশন। এর মধ্যে ইসলামী এক্যজোট গত ২৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করে ৮ দফা প্রস্তাব পেশ করেছে। তবে এর বাইরে আরো বেশ কয়েকটি ইসলামি দল রয়েছে যারা এখনো আমন্ত্রণ পাননি। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মসলিস মজলিস উল্লেখযোগ্য।
এখনো আমন্ত্রণ না পাওয়া দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে তারা আশাবাদী রাষ্ট্রপতি সংলাপের জন্য তাদের আহ্বান করবেন। সে জন্য এখনো পর্যাপ্ত সময় রয়েছে। কেউ কেউ জোর দিয়ে বলেছেন, নিবন্ধিত সব দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বসা উচিত। যাতে করে সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার পছন্দের নির্দলীয় ইসি গঠিত হয়।
ইসলামপন্থী দলের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বড় দল। তবে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দলটি এখন কোণঠাসা। সরকারের সঙ্গে রয়েছে বৈরিতাও। রাষ্ট্রপতির সংলাপে আমন্ত্রণ পায়নি দলটি। তবে দল থেকে এক বিবৃতিতে ইতোপূর্বে সংলাপের সুযোগ চাওয়া হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর দলটির আমীর মকবুল আহমাদ এ সংক্রান্ত একটি চিঠি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দেশের একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় সংলাপকে অর্থবহ করে তোলার জন্য ওই সংলাপে জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা বাঞ্ছনীয়। আশা করি দেশের জনগণের যথাযথ প্রতিনিধিত্বের স্বার্থে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে সংলাপে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
অবশ্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে এ চিঠির পর এখন পর্যন্ত কোনো গ্রিন সিগনাল পায়নি দলটি।
ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ভোটের হিসাবে দ্বিতীয় সারিতে রাখা হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে। পীর সাহেব চরমোনাইয়ের নেতৃত্বে দলটি এককভাবে নির্বাচন করে থাকে। ইসি গঠনে দলটি এখনো রাষ্ট্রপতির সংলাপের আমন্ত্রণ পায়নি বলে জানালেন সহকারী মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। তবে তারা আশাবাদি রাষ্ট্রপতি তাদের ডাকবেন।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, নতুন ইসি গঠনে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের আহ্বান রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা। আমরা যতদূর জানি নিবন্ধিত সব দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সংলাপে বসবেন। সে হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেও তিনি সংলাপে আহবান করবেন বলে আশা করছি।
তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ে যেসব দল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সেদলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গেও তিনি বসবেন বলে আশাবাদী। এ ব্যাপারে দলের সিনিয়র পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের আলোচনা ও প্রস্তুতির কথাও জানালেন তিনি।
তবে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ না পেলে ইসি গঠনে তাদের প্রস্তাব জনগণের সামনে পেশ করবেন বলেও জানান গাজী আতাউর রহমান।
নিবন্ধিত ইসলামি ঘরানার রাজনৈতিক দলের মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম অন্যতম। আলেমদের প্রাচীন এ প্লাটফরমে অনেকেই রয়েছেন যারা অতীতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলটির সংলাপে আমন্ত্রণ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট শাহিনুর পাশা চৌধুরী বলেন, ধারাবাহিকভাবে সংলাপ চলছে, আমরাদের ডাকা হবে বলেই জানি। তবে এখন পর্যন্ত আমন্ত্রণ আসেনি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ এক দল এক নেতার মতো যেন না হয়। সবার সঙ্গেই সংলাপে বসতে হবে সবারই অধিকার রয়েছে তাদের মতামত পেশ করার। আমরাও আশা করছি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আমাদের আমন্ত্রণ জানাবেন এবং জমিয়তের যে প্রস্তাবনা রয়েছে তা শুনবেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বাংলাদেশর আরেকটি ইসলামি দল। অতীতে যেটির নেতৃত্ব ছিল শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর মতো সংগ্রামী ও সফল মানুষের হাতে। রাজনীতির মাঠে দলটি রেখেছে নানা রকম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। বর্তমানে ইসি গঠনসহ রাষ্ট্রীয় অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে চায় দলটি। জানালেন দলের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।
ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যতটুকু জানি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধনকৃত সবকটি দলের সঙ্গেই সংলাপ করবেন। সে হিসেবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইসি গঠনে উপযুক্ত পরামর্শ দিতে প্রস্তুত আছে।
তিনি বলেন, মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ থাকবে দেশে সুষ্ঠুধারার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী ইসি গঠনে আমাদের মতামত দেয়ার সুযোগ করে দিবেন। এছাড়াও খেলাফত মজলিস এসব বিষয়ে গতকাল শনিবার একটি প্রেস ব্রিফিং করেছে এবং গণভবনে যোগাযোগ রাখছে বলেন জানান মাওলানা মাহফুজুল হক।
ইসলামপন্থী আরেকটি শক্তিশালী দল খেলাফত মজলিস। মূলত শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এরই প্রতিষ্ঠিত এ দল। তবে কারণবশত ভাগ হয়ে দুটি দলে রূপ নেয়া একটি এ দল। সংলাপের বিষয়ে দলটির অফিস ও প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক এম আবদুল জলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও একই কথা জানালেন। এখনো আমন্ত্রণ পাননি তবে অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি মনে করেন, সংলাপের জন্য আমরা প্রস্তুত। এখন রাষ্ট্রপতির ডাকের অপেক্ষায়। ইসি গঠনে আমাদের নির্ধারিত প্রস্তাবনা রয়েছে। আশা করি এগুলো প্রকাশের সুযোগ রাষ্ট্রপতি তৈরি করে দেবেন।
নিবন্ধিত আরেক ইসলামি দল খেলাফত আন্দোলন। হাফেজ্জি হুজুরের গড়া দলটি অতীতে বটগাছ প্রতীকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। দলটির কেউ সাংসদ হতে না পারলেও বহু মানুষের মনে ছাপ ফেলেছে এই প্রতীক। ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের জন্য এখনো দলটির কোনো আমন্ত্রণ বা ইঙ্গিত পাননি বলে জানালেন দলটির ঢাকা মহানগর এর আহ্বায়ক মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী।
তিনি বলেন, নিবন্ধিত দল হিসেবে রাষ্ট্রপতির উচিত আমাদের সঙ্গেও সংলাপ করা। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা এরকম সম্ভাবনা দেখিনি। তিনি বলেন, অতীতে ইসিগঠনসহ নির্বাচনী অন্যান্য বৈঠকে আমরা আমন্ত্রণ পেয়েছি। এবারও পাবো বলেই আশা করছি। সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি সবার মত নিয়ে সামনে এগুবেন এই কামনাই করেন মাওলানা হামিদী।
এইচএ