হাবীবুল্লাহ আল মাহমুদ
রাতের বিষাদ নির্জনতাকে কোমলভাবে ভেঙে দেয় সোনালি প্রভাত৷ অবসান ঘটে আঁধারি মেলার৷ ধীরে ধীরে ধরা আলোকিত হয়৷ আলোকিত হয় এ বিশ্ব চরাচর৷ আলোর অবগাহনে হেসে ওঠে বৃক্ষলতা৷ হেসে ওঠে শিশিরভেজা ঘাস৷ বকুল বেলী৷ জুঁই চেমেলী৷ পাখ পাখালি গায় জীবনের গান৷ কণ্ঠে ধরে এগিয়ে যাওয়ার তান৷
রাতের পিঠে ভর করে দিন আসে৷ আবার দিনের পিঠে ভর করে আসে রাত৷ রাতদিনের এ আবর্তন বিবর্তন আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও মহান আল্লাহ তায়ালা এতে স্থাপন করেন অসংখ্য অগণিত কুদরতি নিদর্শন৷ তাঁর পরিচয়ের উপঢৌকন৷ মানুষ স্রষ্টার কুদরতি নিদর্শন দেখে স্রষ্টার প্রতি দৃঢ বিশ্বাস স্থাপন করবে৷ তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে৷ তাঁর বিধি নিষেধ যথাযথ পালন করবে৷ পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়- এবং তিনিই সেই সত্তা যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেন- (কিন্তু এসব বিষয় উপকারে আসে কেবল) সেই ব্যক্তির জন্য, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়৷ সুরা ফুরকান: ৬২
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়, আল্লাহ রাত ও দিনকে পরিবর্তিত করেন৷ নিশ্চয়ই এসব বিষয়ের মধ্যে চক্ষুষ্মানদের জন্য উপদেশ গ্রহণের উপাদান আছে৷ সুরা নূর: ৪৪
স্বাভাবিক প্রশ্ন হতে পারে রাত দিনের এ আবর্তন বিবর্তন কীভাবে স্রষ্টার নিদর্শন! কীভাবে তা তাঁর পরিচয়ের মাধ্যম! কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা এর ন্যূনতম একটি উদাহরণ পেশ করেন এভাবে- আর তোমাদের ঘুমকে ক্লান্তি ঘুচানোর উপায় বানিয়েছি এবং রাতকে বানিয়েছি আবরণ স্বরূপ এবং দিনকে জীবিকা আহরণের সময় নির্ধারণ করেছি৷ সুরা নাবা: ৯ -১১
আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ও বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন৷ এতে জগতের ভারসাম্য বজায় থাকে৷ সবকিছু সচল থাকে৷ মহান আল্লাহ তায়ালা প্রাণের ভারসাম্য বজায় রাখতে, জীবনের চাকা স্বচ্ছল রাখতে ঘটান দিনরাতের আবর্তন বিবর্তন৷ ইরশাদ হয়- তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পার৷ আর দিনকে বানিয়েছেন দেখার জন্য৷ সুরা মোমিন: ৬১
বর্ণিত আয়াতসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিজ্ঞানসম্মত৷ কারণ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও জীবিকার জন্য সর্বোত্তম সময় দিন৷ এবং নিদ্রার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট সময় রাত৷ জীবিকার জন্য মানুষের দৌড়ঝাপ করতে হয়৷ ছুটাছুটি করতে হয় নানান প্রান্তে৷ আর নির্বিঘ্নে দৌড়ঝাপের জন্য প্রয়োজন আলোর৷ দিবসের৷ আবার সারা দিনের দীর্ঘ পরিশ্রমে মানষের জীবন-কর্মে নেমে আসে অসারতা ও অস্বস্তি৷ তখন কর্মক্লান্ত সে মানুষটি নিজেকে সজিব ও প্রাণবন্ত করে তুলতে খুঁজে একটু নির্জনতা৷ কোলাহলমুক্ত নির্মল একটা পরিবেশ৷ মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের এ ক্লান্তি ঘুচানোর জন্য পৃথিবীকে আলোহীন করে দেন৷ নিদ্রার উপযোগী বানিয়ে দেন৷
দিনরাতের আবর্তন বিবর্তনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আমাদের জীবন ও সময় ফুরিয়ে যাওয়া ৷ মাতৃজঠরের বন্ধন পেরিয়ে এ বিশ্বে আগমন করে মানুষ৷ এরপর আর স্থিতি নেই৷ থেমে থাকা নেই৷ দিনরাত, রাতদিন, বছর মাস, কাল যুগ অতিক্রম করে এক সময় বরণ করে নেয় মৃত্যু নামক চিরন্তন সত্যকে৷ মাঝের এ কয়েক দিনকেই বলে জীবন৷ জীবনের স্বাদ অস্বাদন৷ এজন্যই বলা হয় সময়, জীবন অমূল্য সম্পদ৷ তা একবার হাতছাড়া হলে আর ফিরে পাওয়া যায় না৷ ফিরিয়ে আনা যায় না।
আমাদের কাঁধে ভর করে গত হচ্ছে ২০১৬ ইংরেজি সন৷ আগমন করছে নতুন আরেকটি বছর৷ একটি বছরের যোগ বিয়োগ তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের নয় ৷ অপসংস্কৃতির করতালি বাজিয়ে বর্ষবরণের জন্য নয়৷ জীবনের হিসাব নিকাশের অনেক কিছু রয়েছে এতে৷ বিগত বছর, বিগত জীবন আমি কোন কাজে ব্যয় করলাম! আমার চরিত্র গঠন, আত্মশুদ্ধি কতটুকু হলো! আমার দ্বারা কতটুকু পূন্য হলো! কতটুকু পাপ হলো! এসব বিষয় মাথায় রেখে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জীবন ও সময় থেকে শিক্ষা গ্রহণের তাওফিক দান করুক!নতুন একটি বছরের সূচনালগ্নে অপসংস্কৃতি থেকে বিরত থেকে ইসলামী সংস্কৃতিতে সংস্কৃতবান হওয়ার তাওফিক দান করুক! আমীন!
আরআর