পলাশ রহমান
সাংবাদিক
বাংলাদেশে ৫৬০টি পর্নোসাইট বন্ধ করে করা হয়েছে। এগুলো বন্ধ করা হবে সে ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি কথা রেখেছেন। পর্নোসাইটগুলো বন্ধ করে তিনি আন্তরিকতার প্রমাণ দিয়েছেন। অন্তত এজন্য হলেও তিনি একটা ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন।
কিন্তু কথা হলো সাড়ে পাঁচশতাধিক বা তারও বেশি সাইট বন্ধ করেই কি পর্নোগ্রাফি বন্ধ করা যাবে? এর ক্ষতিকর দিক থেকে মানুকে ফেরানো যাবে? আমি মনে করি যাবে না। সরকারকে আরো বেশি আন্তরিকতা দেখাতে হবে। আইনের শাসন কায়েম করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আইন করতে হবে এবং তা যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
আমরা দেখে নিতে পারি দেশের প্রচলিত পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে কি আছে?
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, ধারা- ৮
(১) কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি উৎপাদন করিলে বা উৎপাদন করিবার জন্য অংশগ্রহণকারী সংগ্রহ করিয়া চুক্তিপত্র করিলে অথবা কোন নারী, পুরুষ বা শিশুকে অংশগ্রহণ করিতে বাধ্য করিলে অথবা কোন নারী, পুরুষ বা শিশুকে কোন প্রলোভনে অংশগ্রহণ করাইয়া তাহার জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে স্থির চিত্র, ভিডিও চিত্র বা চলচ্চিত্র ধারণ করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৭ (সাত) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(২) কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে অন্য কোন ব্যক্তির সামাজিক বা ব্যক্তি মর্যাদা হানি করিলে বা ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় বা অন্য কোন সুবিধা আদায় বা কোন ব্যক্তির জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ধারণকৃত কোন পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তিকে মানসিক নির্যাতন করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৩) কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৪) কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউপদ্রব সৃষ্টি করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৫) কোন ব্যক্তি-
(ক) পর্নোগ্রাফি বিক্রয়, ভাড়া, বিতরণ, সরবরাহ, প্রকাশ্যে প্রদর্শন বা যে কোন প্রকারে প্রচার করিলে অথবা উক্ত সকল বা যে কোন উদ্দেশ্যে প্রস্ত্তত, উৎপাদন, পরিবহন বা সংরক্ষণ করিলে; অথবা
(খ) কোন পর্নোগ্রাফি প্রাপ্তি স্থান সম্পর্কে কোন প্রকারের বিজ্ঞাপন প্রচার করিলে; অথবা
(গ) এই উপ-ধারার অধীন অপরাধ বলিয়া চিহ্নিত কোন কার্য সংঘটনের উদ্যোগ গ্রহণ করিলে; তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৬) কোন ব্যক্তি কোন শিশুকে ব্যবহার করিয়া পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, বিতরণ, মুদ্রণ ও প্রকাশনা অথবা শিশু পর্নোগ্রাফি বিক্রয়, সরবরাহ বা প্রদর্শন অথবা কোন শিশু পর্নোগ্রাফি বিজ্ঞাপন প্রচার করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১০ (দশ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৭) এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বা সহায়তাকারী ব্যক্তি প্রত্যেকেই একই দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
গোটা দেশের হাজার হাজার মোবাইর ফোন সার্ভিসিং সেন্টারগুলো থেকে খুব সহজে পর্নোগ্রাফি চলে যায় মানুষের হাতে হাতে। বিশেষ করে কিশোরদের হাতে পর্নোগ্রাফি তুলে দেয় ওইসব অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা টাকার বিনিয়ম ছেলে মেয়েদের মোবাইল ফোনের মেমরি কার্ডে পর্নোপ্রাফি লোড করে দেয়। কেউ কি বিশ্বাস করবে, এ খবর প্রশাসনের কাছে নেই?
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, ধারা- ৮ এর উপধারাগুলো থেকে বোঝা যায় আমাদের দেশে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণের আইন আছে, কিন্তু প্রেয়োগ নেই। আইন যদি যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করা না যায় তবে কোনো অপরাধই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পর্নোগ্রাফিও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে সরকারকে আরো বেশি আন্তরিক হতে হবে।
ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ বড় শহরগুলোতে হোটেলের পাশাপাশি বাসাবাড়িতে হরদম দেহব্যবসা করা হয়। কথিত আছে ঢাকার কথিত অভিযাত এলাকাগুলোর প্রতি তিনটি ফ্লাটের একটিতে দেহব্যবসা করা হয়। সরকার বা প্রশাসনের কাছে এ খবর নেই তা মোটেও বিশ্বাস যোগ্য নয়। কিন্তু আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখি না। উপরন্তুর শোনা যায় ওইসব কাজের সাথে জড়িতরা নিয়মিয় স্থানীয় থানা এবং সরকারি দলের নেতাদের উৎকোচ দিয়ে থাকে।
গোটা দেশের হাজার হাজার মোবাইর ফোন সার্ভিসিং সেন্টারগুলো থেকে খুব সহজে পর্নোগ্রাফি চলে যায় মানুষের হাতে হাতে। বিশেষ করে কিশোরদের হাতে পর্নোগ্রাফি তুলে দেয় ওইসব অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা টাকার বিনিয়ম ছেলে মেয়েদের মোবাইল ফোনের মেমরি কার্ডে পর্নোপ্রাফি লোড করে দেয়। কেউ কি বিশ্বাস করবে, এ খবর প্রশাসনের কাছে নেই?
ফেসবুকের মাধ্যমেও ব্যাপক আকারে পর্নোগ্রাফির লেনদেন এবং দেহ ব্যবসা হয়। ব্যক্তিগত আইডি খুলে বা পেজ খুলে অনেকেই এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা টাকার বিনিয়মে ফোন সেক্স, ভিডিও সেক্স, রিয়েল সেক্স করার বিজ্ঞাপন দেয় ফেসবুকে। কেউ কেউ লাইভ ডিভিও এ্যপ ব্যবহার করে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বাস করা কঠিন যে আমাদের দেশের প্রশাসন বা সরকারের নির্দিষ্ট দপ্তর এগুলোর খবর রাখে না। ইচ্ছা করলে এদের আইনের আওতায় আনতে পারে না।
গ্রাম গঞ্জের হাজার হাজার সিনেমা হলে কাট পিসের নামে পর্নোপ্রাফি দেখানো হয়। দেশি চলচিত্রে আইটেম গানের নামে যা দেখানো হয় তা পর্নোগ্রাফি থেকে আলাদা করা যায় না। এ জাতীয় হাজারো উপায়ে দেশে পর্নোগ্রাফি এবং দেহব্যবসা করা হচ্ছে। সরকার যদি আন্তরিক ভাবে এগুলো বন্ধ করতে চায় তবে দুটি কাজ করতে হবে। (এক) মানুষকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। (দুই) আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। এর বিকল্প কোনো পদ্ধুতিতে এগুলো নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধ করা যাবে না।
এখন তথ্য প্রযুক্তির সময়, একটা সাইট বন্ধ করলে আরো ১০ সাইট খোলার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রিত সাইটগুলো বন্ধ করা এত সহজ বিষয় নয়। এর আগে সরকার ফেসবুক বন্ধ রাখার চেষ্টা করেছে, সফল হয়নি। কারন মানুষ প্রক্সি লাইনে এগুলো ব্যবহার করতে শিখে ফেলেছে। সুতরাং সত্যিকারের আন্তরিকতা থাকলে সাইট বন্ধ করার কাজ অব্যাহত রাখার সাথে সাথে আইন প্রয়োগ করতে হবে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনাতে হবে।
আরআর