আওয়ার ইসলাম: ইতালির জলকন্যা ভেনিস নগরীতে ভেনিস বাংলা স্কুলের আয়োজনে মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভা এবং সাংস্কুতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সৈয়দ কামরুল সরোয়ারে সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, ব্রেশিয়া পৌরসভার প্রতিনিধি এবং ব্রেশিয়া বাংলার বাংলা স্কুল পাঠশালার প্রতিষ্ঠতা কাউসার জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সিজিআইএল ব্রেশিয়ার প্রতিনিধি।
গতকাল (শুক্রবার) ভেনিসের মেসত্রের থিয়েটার কলবেয় অনুষ্ঠিত বিজয়ের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি কাউসার জামান ভেনিস বাংলা স্কুলের কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, প্রবাসের মাটিতে ব্যস্ত সময়ের মধ্যে নিজের দেশ এবং সংস্কৃতিকে ভালোবেসে এমন একটা কাজ করা সত্যি সহজ নয়।
তিনি বলেন, প্রবাসে বেড়ে ওঠা আমাদের ছেলে মেয়েদের আপন সংস্কৃতির সাথে ধরে রাখতে, নিজের মায়ের ভাষা শিক্ষা দিতে দীর্ঘ দিন যাবৎ ভেনিস বাংলা স্কুল যা করে যাচ্ছে তা শুধু ধন্যবাদ বা অভিনন্দন জানিয়ে শেষ করা যাবে না।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশে আমাদের দূতাবাস আছে। সরকারের উচিৎ রাজনৈতিক বিবেচনা না করে দূতাবাসের মাধ্যমে এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করা। এ জাতীয় অনুষ্ঠনে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি থাকা উচিৎ। এতে আমাদের ছেলে মেয়েরা আরো বেশি উৎসাহ পেতে পারে।
সাংবাদিক পলাশ রহমান এবং দেখা মনির উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, জীবিত মুক্তিযোদ্ধা এবং সকল জাতীয় নেতাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানানো হয়। উপস্থাপকদ্বয় বাংলা এবং ইতালিয় ভাষায় মহান বিজয় দিবসের ইতিহাস বর্ণনা করেন। আলোচনা করেন, ভেনিস বাংলা স্কুলের সহসভাপতি এমডি আকতার উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সহসাধারণ সম্পাদিকা রুনু আক্তার, মহিলা সম্পাদিকা সোহেলা আক্তার বিপ্লবী, এরফান সৈয়াল প্রমুখ।
সভাপতি সৈয়দ কামরুল সরোয়ার বলেন, অনেকে মনে করেন আমরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই, আসলে তা সত্য নয়। আমরা আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে ভেনিস বাংলা স্কুল চালাই। স্কুল কমিটির সদস্যদের পকেটের পয়শা খরচ করে আমরা বাংলাদেশ এবং ইতালির সকল জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করি যেনো আমাদের প্রজন্ম নিজের শেকড় ভুলে না যায়।
তিনি বলেন, প্রতি বছর ১ জানুয়ারি বাংলাদেশে বই উৎসব করা হয়, প্রবাসে করা হয় না কেনো? তিনি দূতাবাসের মাধ্যমে অন্যান্য জাতীয় দিবসের মতো বই উৎসব করার আহবান জানান। কামরুল সরোয়ার বলেন, দূতাবাসের মাধ্যমে আমাদের সরকার যদি প্রবাসেও বই উৎসব করে আমাদের ছেলে মেয়েদের হাতে অন্তত একটা করে হলেও বাংলা বই তুলে দেয় তাহলে প্রবাসী শিশু কিশোররা বাংলা শিখতে আরো বেশি উৎসাহ পাবে।
সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ভেনিস বাংলা স্কুল শুধু ছেলে মেয়েদের বাংলা ভাষা শিক্ষা দিয়ে এবং উৎসব করেই থেমে থাকে না, যেসব শিশুরা ইতালিয় স্কুলে পড়ে তাদের হোম ওয়ার্ক করতে বিনামূলে সহযোগিতা করে। কোনো প্রকারের রাজনৈতি বিতর্কে না গিয়ে ভেনিস বাংলা স্কুল কম্যুনিটির যে কোনো প্রয়োজনে প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, আমরা চাই প্রতিটা শিশু রাজনৈতি প্রতিহিংসা মূলক সংস্কৃতির বাইরে থেকে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসাবে গড়ে উঠুক।
ইতালিতে এবারই প্রথম বারের মতো ভেনিস বাংলা স্কুলের উদ্যোগে ইতালিয় স্কুলে লেখাপড়া করা ছেলে মেয়েদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত যে সব শিশুরা ইতালিয় স্কুলে লেখাপড়া করে ভালো রেজাল্ট করেছে এমন ১৫ জন শিশুকে এবং হোমওয়ার্কে সহযোগিতার জন্য একজনকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়াও ৮ জন হোমওয়ার্ক সহযোগিকে মেডেল পরিয়ে দেয়া হয়।
একজন প্রবাসী সফল ব্যবসায়ীকে ' প্রবাসী কমিউনিটি এওয়ার্ড ২০১৬' প্রদান করা হয়। শরিয়তপুরের আবদুস সালাম বাদল নামের ওই ব্যবসায়ী দীর্ঘ দিন ইতালির ভেনিসে বসবাস করেন। তিনি ব্যবসা করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। তার সাফল্য প্রবাসী তরুণদের মধ্যে দারুণ উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। তিনি দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয় উৎসবের সমাপ্তি করা হয়। দুই দেশের জাতীয় সংগীত এবং দেশের গান দিয়ে শুরু করা এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ভেনিস বাংলা স্কুলের ছেলে মেয়েরা। গান পরিবেশন করেন, সোহেলা আক্তার এবং আশিক।
সৈয়দ কামরুল সরোয়ারকে সভাপতি এবং মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে আগামী দু'বছরের জন্য ভেনিস বাংলা স্কুলের ২১ সদস্যের নতুন কমিটির পরিচয় করিয়ে দেন উপদেষ্টা ওমর ফারুক নিনি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি
আরআর